বরগুনার বেতাগী উপজেলা নিবার্চনের রেশ না কাটতেই আগামী ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ নিবার্চন। নিবার্চনী আমেজ নিয়ে সাধারণ ভোটারসহ প্রার্থীদের মধ্যে চলছে নানা উৎসাহ উদ্দীপনা। ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের তিন নেতাসহ পাঁচ প্রার্থী। এর মধ্যে ভোটের মাঠে সক্রিয় চার প্রার্থী, যার মধ্যে একজন ওই ইউনিয়নের বিএনপি নেতা। তাদের মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সাধারণ ভোটারসহ নেতাকর্মীরা। তবে একই দলের পদধারী একাধিক নেতা প্রর্থী হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে নানা গ্রুপিং তৈরি হয়েছে। ফলে উপজেলা পরিষদ নিবার্চনের ন্যায় উপ নির্বাচনেও ওই ইউপিতে আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা এখন আ.লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির কর্মী—সমর্থকরা ত্রিমূখী হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে নানান বিভক্তি। দলীয় কর্মী সমর্থকরা কাকে রেখে কাকে ভোট দেবেন, কাকেইবা সমর্থন দিবেন সেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। আবার কেউ কেউ প্রকাশ করছেন ভিন্নমত! তাদের মতে, এবার নির্বাচনের মাঠে সাধারন ভোটার ও দলীয় কর্মীদের মূল্যায়ন হবে, নেতাদেরও হবে জনপ্রিয়তা যাচাই।
আসন্ন উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা হলেন— হোসনাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. শাহ আলম, ইউনিয়ন আ.লীগের সহ— সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন, উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান সিকদার, এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাতপাখা সমর্থিত প্রার্থী মো. হাফিজুর রহমান। তবে এবারের নিবার্চনে কোনো দলীয় প্রতিক না থাকায় সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সদ্য অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নিবার্চনে ‘হোসনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান’ পদত্যাগ করে নিবার্চনে অংশগ্রহণ করায় গত (১৮ এপ্রিল) ওই পদটি শূণ্য ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ওই শূণ্য পদে আগামী (২৭ জুলাই) উপ নিার্বচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত বুধবার ওই পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আগামী ১১ জুলাই প্রতিক বরাদ্দের নিধার্রিত তারিখ থাকলেও দাখিলের পরপরই ভোটের মাঠে স্বক্রীয়ভাবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। আসন্ন নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে আ.লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও উপজেলা আ.লীগের একটি বড় অংশ আয়নাবাজির মতো সমর্থন দিচ্ছেন আ.লীগ নেতা ফজলুর রহমান সিকদারকে। যিনি উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক । এছাড়া তিনি উপজেলা নিবার্চনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থন দেয়ায় অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে দলের একটি বড় অংশকে সঙ্গে নিয়ে নেমেছেন মাঠে।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, ভোটের মাঠে এগিয়ে আছেন ইউনিয়ন আ.লীগের সহ—সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সভা করে তিনি সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও ভোটারের মতামত নিয়েছেন। দলের নেতাকর্মীরা যদি প্রতিশ্রম্নতি ভঙ্গ না করেন তবে তিনিই হবেন ভোটের মাঠের নেতা। এমনটাই বলছেন স্থানীয় আ.লীগের একাধিক নেতাকর্মী। সাধারণ জনগণের মতে, ভোটের মাঠে এগিয়ে আছেন আরও দুই প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত প্রার্থী মো. হাফিজুর রহমান। এ দুই প্রার্থীর বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের মতামত হচ্ছে—আ.লীগের তিন প্রার্থীর কোন্দল ও ভৌগোলিক মাপকাঠিতে দলীয় সমর্থকদের ভোট ত্রিমূখী হবে। এ সুযোগে সাধারণ মানুষের ভোটকে পুঁজি করে জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন ওই দুই প্রার্থী।
আ.লীগের স্থানীয় নেতারা বলছেন, দলের নেতাদের মধ্যে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় তাদের অনেককে জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে প্রকাশ্য বিভক্তি। দলীয় প্রার্থীরা যার যার কর্মী—সমর্থক নিয়ে আলাদা আলাদা শোডাউন—গণসংযোগ করছেন। তবে সাধারণ নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা সব প্রার্থীকে বিচার—বিশ্লেষণ করে যাকে এলাকার উন্নয়নের জন্য যোগ্য মনে হবে তাকেই ভোট দেবেন।
অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণ: এদিকে আ.লীগ প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা আ.লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণ হিসাবে দায়ী করছেন উপজেলা নিবার্চনের সমর্থনকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তারা জানান, উপ— নিবার্চনে বর্তমান বিজয়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে প্রার্থী ফজলুর রহমান ট্রাম কার্ড হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি জনে জনে বলে বেড়াচ্ছেন তিনি বর্তমান চেয়ারম্যানকে উপজেলা নিবার্চনে সমর্থন দিয়েছেন সুতরাং তাকে ইউপি চেয়ারম্যান নিবার্চতি করতে যা যা করতে হয় তাই করবেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। এছাড়াও বরগুনা—২ আসনের সাংসদেরও সমর্থন আছে তারই সাথে। যদিও এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দেননি ওই প্রার্থী। এসব কারণেই উপ— নিবার্চন ইস্যুতে আ.লীগের গলার কাঁটা আ.লীগ।
তবে উপজেলা নির্বাচনে কোনো ধরনের স্থানীয় দলীয় প্রভাব পড়বে না। আসন্ন উপ- নির্বাচন ইস্যুতে এমনটাই জানিয়েছেন বেতাগী উপজেলা আ.লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র এবিএম গোলাম কবির এবং সদ্য নিবার্চিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান খান।
নিবার্চনে অংশগ্রহণ করা একাধিক প্রার্থীর দাবী, উপজেলা আ.লীগ ও বর্তমান সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপ না থাকলে সাধারন ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীকে নিবার্চিত করতে বাধা থাকবেনা। উল্লেখ্য, হোসনাবাদ ইউনিয়নের ৯টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৪৪৯, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৭৬৫,মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৬৮৪। আগামী ২৭ জুলাই হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের উপ নিবার্চনে ইভিএম এর মাধ্যমে বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :