দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ১০নং ধলঘাট ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী মুকুটনাইট ধাতুচৈত্য বিহারে গতরাতে বিহারের তালা কেটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরের দল বিহারের কয়েকটি তালা সুকৌশলে কেটে বিহারের ভিতরে কাচের গ্লাস বাধাঁ অবস্থায় রক্ষিত কয়েকশো বছরের পুরাতন মূল্যবান বড় একটি বৌদ্ধমূর্তি চুরি করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী প্রবীণ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মূর্তিটি আসলে সোনালি কালারের হওয়ায় এটি অনেকেই পিতলের মূর্তি মনে করলেও আসলে মূর্তিটি একটি অষ্টধাতুর মহামূল্যবান বৌদ্ধমূর্তি। এটা কয়েক প্রজন্ম আগে মুকুটনাইট ধাতুচৈত্য বিহার প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা এখানে দেখে আসতেছি।
গতরাতের চুরি হওয়া বিহার থেকে মূল্যবান অষ্টধাতুর বৌদ্ধমূর্তি ছাড়াও বিহারের দানবাক্সের তালা কেটে মানুষের দান করা আনুমানিক ৩০/৪০ হাজার ক্যাশ টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে বিহার চুরির ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারীপুরুষ তাদের শত বছরের এই বৌদ্ধমূর্তির জন্য বিহারে জড়ো হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। যে কোন ভাবে তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মৃতি এলাকার কৃষ্টি কালচারের অংশ বৌদ্ধমূর্তিটি উদ্ধার করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মুকুটনাইট ধাতুচৈত্য বিহার কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মিলন কান্তি বড়ুয়া'র সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা সকালে বিষয়টি পটিয়া থানা অফিসার ইনচার্জকে ফোনে জানিয়েছি। পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব জসিম উদ্দীন সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন এবং আমাদের এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে এবং চুরির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের যত দ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার পূর্বক মূর্তিটি উদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আজকে বিহার কমিটির সকলে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েই পটিয়া থানায় মামলা করবো।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মিলন বড়ুয়া আরও বলেন, আমরা আপনাদের গণমাধ্যমের মাধ্যমে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে ধর্মীয় উপাসনায়লয়ে চুরির মতো এই জঘন্য ঘৃণিত ঘটনায় দোষীদের তদন্ত পূর্বক চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হয়।
এদিকে এই ঘটনা ব্যাপারে সাবেক পুলিশের ডিআইজি বিহার কমিটির উপদেষ্টা মুকুটনাইট গ্রামের কৃতি সন্তান বাবু প্রিয় রঞ্জন বড়ুয়া (পিআর বড়ুয়া) বলেছেন, তিনি এই জঘন্য ঘটনার খবর শুনামাত্র পটিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে কথা বলেছেন।
স্থনীয় সমাজ সেবক হিরু বড়ুয়া এই প্রতিবেদনকে জানান, আমরা পটিয়ার মাননীয় সংসদ সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে আমাদের এই ঘটনার যথাযথ বিচার ও মহামূল্যবান অষ্টধাতুর বৌদ্ধমূর্তিটি উদ্ধার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এদিকে ঘটনার খবর শুনে দুপুরে মুকুটনাইট বিহারে উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এই ঘটনা কোন ভাবে মেনে নেওয়ার নয়। ধর্মীয় উপসালয়ে চুরি ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত তদন্ত পূর্বক বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে আমরা সর্ব্বোচ সহযোগীতা করবো।
আপনার মতামত লিখুন :