দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কামারপল্লীগুলোতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বইছে ব্যস্ততার হাওয়া। বছরের অন্যান্য সময় অপেক্ষাকৃত ফাঁকা সময় কাটালেও ঈদুল আজহার আগে নতুন উদ্যমে জেগে উঠেছে কামারপাড়াগুলো।
ফুলবাড়ী পৌরসভার কাটিয়ারধর কাঁটাবাড়ী, কালীবাড়ী বাজার, পার্বতীপুর বাসস্ট্যান্ড, সুজাপুর চৌধুরী মোড় ও কামারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ছুরি, চাপাতি, দা, বটি, চাকু, কুড়াল, হাসুয়া তৈরিতে রীতিমতো ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। ঈদের অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে পরিবারের নারী ও শিশুরাও হাত লাগাচ্ছেন নানা ধরণের কাজের পাশে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কামাররা ভোর থেকে রাত অবধি একটানা কাজ করে যাচ্ছেন। কাটিয়ারধর কাঁটাবাড়ীর টিনের দোচালার নিচে কাঠের কয়লার আগুনে লোহা লাল করে হাতুড়ির ঘায়ে পিটিয়ে ছুরি তৈরি করছিলেন কালীকান্ত রায়।
তিনি বলেন, ‘কোরবানির ঈদ এলে আমাদের যেনো ঘুম হারাম হয়ে যায়। কাজও বেশি হয়, আয়ও বেশ ভালো হয়।’
সুজাপুর চৌধুরী মোড়ের কামার নিরেন চন্দ্র রায় জানান, তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে এই পেশায় যুক্ত হন। বর্তমানে নিজস্ব দোকান চালাচ্ছেন, সঙ্গে রেখেছেন দুইজন সহকারী।
তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় নতুন অস্ত্রপাতি তৈরির পাশাপাশি পুরনো দা-বটি ধার দিয়ে কিংবা সান দিয়ে প্রস্তুত করার জন্য অনেক অর্ডার আসে। এখন কাজের চাপ বেশ তীব্র।’
কাঁটাবাড়ীর আরেক কামার পরিমল চন্দ্র রায়, যিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত, তিনি বলেন, ‘কোরবানির ঈদেই এমন কাজের সুযোগ মেলে, যা দিয়ে অন্তত ছয় মাস সংসার চালানোর খরচ উঠে আসে। তবে লোহা কিনতে চড়া সুদে এনজিও কিংবা পরিচিতজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়। ব্যাংকের সহজ ঋণ সুবিধা না থাকায় বেশিরভাগ আয় ঋণ শোধেই চলে যায়।’
পুরাতন দা-বটির ধার দেওয়ার মজুরি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত, আর নতুন অস্ত্রের দাম নির্ভর করে লোহা ও ডিজাইনের ওপর।
ফুলবাড়ী দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল হক বলেন, ‘এই প্রাচীন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ সুবিধা দিলে কামাররা উপকৃত হবেন। বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকজন এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন, বাকিরা অনেক আগেই অন্য পেশায় চলে গেছেন।’
ঈদকে ঘিরে কামারদের এই ব্যস্ততা যেন তাদের কর্মজীবনের সবচেয়ে আলো ঝলমলে অধ্যায়। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো পৈতৃক এ শিল্প আবারও ফিরে পেতে পারে তার হারানো গৌরব।
আপনার মতামত লিখুন :