চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এলাকায় গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে নারীকে লাথি মেরে আলোচনায় আসা আকাশ চৌধুরী সিবগাতুল্লাহ এবার মুখ খুলেছেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে একজন মুসলমান হিসেবে ঈমানী দায়িত্বের জায়গা থেকে শাহবাগী, বাম, ইসকন, ইসলামবিদ্বেষীদের প্রতিহত করতে তিনি সেদিন সেখানে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
শনিবার (৩১ মে) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। এতে তিনি গত বুধবারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
দীর্ঘ স্ট্যাটাসের শুরুতে তিনি লেখেন, ‘গত দু-একদিন আগে প্রেস ক্লাবের ঘটনাটিতে আমি গিয়েছিলাম শুধু একজন মুসলমান হিসেবে ঈমানী দায়িত্বের জায়গা থেকে শাহবাগী, বাম, ইসকন, ইসলামবিদ্বেষীদের প্রতিহত করতে। এখানে ইসকনকে টেনে আনার অন্যতম কারণ যারা সেদিন মিছিল করতে গিয়েছিলো অধিকাংশই ইসকনের সদস্য দুই-একজন ছাড়া। আর ইসকন সদস্যরা আমার পেছনে লেগে আছে ইসকন জঙ্গি চিন্ময়ের জামিনের প্রতিবাদে কোর্ট বিল্ডিং চত্বরে মিছিল করার পর থেকেই।
‘শুরুতেই প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কথা হয় আমরা আমাদের অবস্থান ক্লিয়ার করি, আমরা বলি আমাদের তরফ থেকে ততক্ষণ উশৃঙ্খলমূলক কিছু করা হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা নিজ থেকে কিছু করে এবং প্রশাসনকে অনুরোধ করি ওনাদের চলে যেতে বলেন। এটা একটা দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে রায় এসেছে এটিএম আজহারুল ইসলাম সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত, এটার বিরুদ্ধে কথা বলা মানে আদালতকে অবমাননা করা।’
‘প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেছে ওদের বুঝানোর জন্য কিন্তু ওরা কথার গুরুত্বই দিল না, একপর্যায়ে আমাদের থেকে প্রতিনিধিরা কথা বলার জন্য যায়, কিন্তু তারা প্রথমেই ‘আ তে আজহার তুই রাজাকার তুই রাজাকার’ এইভাবে ব্যঙ্গাত্মকমূলক স্লোগান দিয়ে আমার ভাইদের কলার ধরে টানা হেঁচড়া করে, এরপর থেকে শুরু হয় ঝামেলা, আমিও দৌড়ে গেলাম প্রথমে আমাকে তিন-চার জন মহিলাসহ ধরে টানা হেঁচড়া করে গায়ে হাত তুলে, অকথ্য ভাষায় আমার মাকে ধরে গালি গালাজ করে। আপনারা জানেন আমার মা মারা গেছে। আমি আমার মাকে ধরে গালি দেওয়াটাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি। এরপর আমি আত্মরক্ষার জন্য ওদের প্রতিহত করি এবং একপর্যায়ে ওরা ওখান থেকে পালাতে শুরু করে। এরপর বাসায় আসতে না আসতেই মিডিয়ায় কাটছাঁট করে আমি মারছি ওটা দেখালো, আমাকে যে তারা প্রথমে হাত তুলেছিল সেটা দেখালো না।’
দীর্ঘ স্ট্যাটাসের শেষের দিকে তিনি লেখেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে নারীর ওপর আঘাত করা আমার ভুল ছিল। আমি ওনার নিকট ক্ষমা চাই এবং এটা নিয়ে আমি লজ্জিত। কিন্তু ওই নারীর নীতি বা আদর্শ, যে কারণে ওনারা সেখানে সমবেত হয়েছিল তা আমি ব্যক্তিগতভাবে ঘৃণা করি, তাদের এই নীতি আদর্শকে আমি ঘৃণা করি। আর তা প্রতিহত করা আমার ঈমানী দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। আর আমি আমার প্রাণের সংগঠনের সিদ্ধান্ত মেনে নিলাম এবং এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল, সংগঠনের কোনো ভুল ছিল না।
জানা যায়, গত বুধবার (২৮ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এলাকায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির প্রতিবাদ এবং রাজশাহীতে ছাত্রজোটের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের ডাকা মানববন্ধনে হামলা চালায় শাহবাগবিরোধী ঐক্য। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। এদিন একজন নারীকে লাথি মারতে দেখা যায় আকাশ চৌধুরীকে। পরবর্তীতে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আকাশ চৌধুরীর প্রকৃত নাম সিবগাতুল্লাহ। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পৌরসভা এলাকার জামায়াত নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর নেছার আহদের ছেলে। আকাশ চৌধুরী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগরের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের কর্মী বলে জানায় সংগঠনটি। এর আগে আকাশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নগরের মুরাদপুরে সুন্নিদের কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ ছিল।
আপনার মতামত লিখুন :