কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখার ভবনের হাঁটু পানিতে বসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৩১ মে) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভোগান্তিকে সঙ্গে করে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ ও পরীক্ষা শেষে বের হতে দেখা গেছে। এই কেন্দ্রে পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থী অংশ নেন বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্ন চাপের প্রভাবে তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রতিটি ভবনসহ দুটি হলের নিচতলায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, পানিতে পা ডুবিয়ে পরীক্ষা দেওয়া খুবই বিরক্তিকর। পা ভেজা থাকায় পরীক্ষা দিতে গিয়ে মনোযোগ হারিয়েছেন তারা।
মিয়াবাজার সরকারি কলেজ থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা জয়নাল আবেদীন বলেন, ভবনের নিচ তলার কক্ষে বসে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। বেশিরভাগ সময় পা পানিতেই ছিল। আর একটু উপরে তুললেই পা চুলকিয়ে বিরক্তিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী নাদিয়া ইসলাম বলেন, যে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম, পরিবেশের কারণে সব গুলিয়ে গেছে।
পরীক্ষার্থীর অভিভাবক জামাল উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছি চৌদ্দগ্রাম থেকে। এসে দেখি জলাবদ্ধ রুমের মধ্যে তার সিট পড়েছে। কিছুই করার নেই, পানিতে পা রেখেই এক ঘণ্টার মত পরীক্ষা দিতে হয়েছে।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার শিকার হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। এক দশক ধরে এই কলেজের জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা পরিকল্পনা হলেও কখনোই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ২৯ হাজার শিক্ষার্থীর বৃহৎ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক শাখা এবং ডিগ্রি শাখা জলাবদ্ধতার শিকার হয়।
শুধুমাত্র ডিগ্রি শাখাতেই বিভিন্ন ভবনের ৩৩টি শ্রেণিকক্ষ জলাবদ্ধ থাকে বিভিন্ন সময়। এ ছাড়া ছাত্রদের কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং ছাত্রীদের নবাব ফয়জুন্নেছা হলের নিচতলায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষ কিংবা ভবন নয় মাঠ ও চলাচলের রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে থাকে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেন, কলেজের ডিগ্রি শাখার জলাবদ্ধতা বিগত ২০ বছরের সমস্যা। কলেজের পাশে বিসিক শিল্পনগরী এলাকা এবং অন্যান্য আবাসিক এলাকার পানি ক্যাম্পাসের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হলেও তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। যে কারণে বছরের পর বছর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কলেজের প্রিন্সিপাল আসে প্রিন্সিপাল যায়, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। ভিক্টোরিয়া কলেজের অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে আছেন; তারা চাইলে কলেজটির দিকে নজর দিতে পারেন।
বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ও হোস্টেলে থাকার ভোগান্তি আসলেই চরমে পৌঁছেছে বলে জানান অধ্যক্ষ আবুল বাশার।
আপনার মতামত লিখুন :