Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

এক বহুমাত্রিক অভিনেতা খলিল উল্লাহ খান


দৈনিক পরিবার | মাহমুদুল হাসান জাহিদ জুন ১৮, ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম এক বহুমাত্রিক অভিনেতা খলিল উল্লাহ খান

বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য কিংবদন্তির নাম খলিল উল্লাহ খান। নায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও, পরবর্তীতে খলনায়ক ও পার্শ্বচরিত্রে অসামান্য অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এক শক্তিশালী অভিনেতা হিসেবে। তার চরিত্রগুলোর মধ্যে ছিল আবেগ, দৃঢ়তা এবং গভীরতা যা তাকে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে দিতে সাহায্য করেছে।
জন্ম ও শিক্ষা
১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে খলিল উল্লাহ খান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা, যার বদলির চাকরির কারণে খলিলের শৈশব কেটেছে সিলেট, কৃষ্ণনগর, বগুড়া ও নোয়াখালীতে। তিনি সিলেটের মদনমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনের শুরু
১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং এক বছর পর, ১৯৫২ সালে আনসার বাহিনীতে এডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত হন। দীর্ঘ কর্মজীবনের পর ১৯৯২ সালে তিনি আনসার বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অভিনয় জীবন
খলিল উল্লাহ খানের অভিনয় জীবন শুরু হয় মঞ্চনাটক দিয়ে। ১৯৫৯ সালে জহির রায়হান ও কলিম শরাফী পরিচালিত ‘সোনার কাজল’ চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক চরিত্রে প্রথমবারের মতো রূপালি পর্দায় আবির্ভূত হন। এরপর ‘কাজল’ (১৯৬৫), ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’ (১৯৬৫), এবং ‘জংলী ফুল’ (১৯৬৮)-এর মতো ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন।
পরবর্তীতে তিনি খলনায়ক ও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে ভিন্ন এক মাত্রা যুক্ত করেন। বিশেষ করে ‘গুণ্ডা’ চলচ্চিত্রে তার খলনায়ক চরিত্র তাকে আলাদা পরিচিতি এনে দেয়।
টেলিভিশন নাটকে দাপুটে উপস্থিতি
বাংলাদেশ টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’-এ ‘মিয়ার ব্যাটা’ চরিত্রে খলিল উল্লাহ খানের অভিনয় আজও দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে। তার সংলাপ, চোখেমুখের অভিব্যক্তি এবং উপস্থিতির শক্তি এই চরিত্রকে দিয়েছে ঐতিহাসিক উচ্চতা।
ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু
১৯৫৪ সালে খলিল উল্লাহ খান রাবেয়া খানমকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে ছিল পাঁচ পুত্র ও চার কন্যা। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮০ বছর।
খলিল উল্লাহ খান ছিলেন এমন একজন অভিনেতা, যিনি চরিত্রকে নিজের মধ্যে ধারণ করতেন। তার অভিনয়ের বিস্তৃত পরিসর বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অমূল্য অধ্যায় হয়ে থাকবে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: ‘গুণ্ডা’ চলচ্চিত্রে  অভিনয়ের জন্য।
আজীবন সম্মাননা: ২০১২ সালে জাতীয়  চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত।
নেতৃত্ব: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির  সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

Side banner