Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঘুরে আসুন হিমালয় কন্যা নেপাল


দৈনিক পরিবার | ভ্রমণ ডেস্ক মে ৭, ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম ঘুরে আসুন হিমালয় কন্যা নেপাল

হিমালয়কন্যা নেপাল ভ্রমণ বাংলাদেশিদের জন্য অত্যন্ত সহজ, তাই তো প্রতিবছরই হাজার হাজার বাংলাদেশি পর্যটক বাংলাদেশ থেকে নেপাল ভ্রমণে গিয়ে থাকেন। আপনার নেপাল ভ্রমণকে সহজ করার জন্যেই ৫ দিন ৪ রাত ভ্রমণের সমস্ত প্ল্যান দেওয়া হয়েছে।
হিমালয়ের মাঝে অবস্থিত সৌন্দর্যে ঘেরা একটি দেশ, নেপাল। নেপাল তার মনোরম দৃশ্যাবলী, প্রাচীন মন্দির এবং বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে উপমহাদেশের অন্যতম পছন্দের একটি টুরিস্ট স্পট। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ নেপালয়ে যায় নেপাল ভ্রমণ করতে, না হয় ট্রেকিং করতে। নেপালে পাহাড়-পর্বত  এবং ট্রেকিং ছাড়াও পর্যটকেরা আসেন এখানকার দর্শনীয় স্থান মন্দির এবং বুদ্ধস্তুপ গুলোর মতো দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করতে।
আজকের এই ব্লগটি আপনাকে বাংলাদেশ থেকে নেপালে ৫ দিন, ৪ রাত ভ্রমণের একটি ধারণা দিবে। ভ্রমণ গাইডটিতে থাকবে কাঠমান্ডু, পোখারা, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেক এবং চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। শুধু মাত্র ভ্রমণ গাইডই নয়, নেপালের সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানার ইচ্ছা থাকলে, সেটাও আজকের ব্লগটি থেকে আপনি জানতে পারবেন।
পূর্ব প্রস্তুতি:
বাংলাদেশ থেকে নেপালে আপনার জার্নি শুরু করার আগে, কয়েকটি প্রয়োজনীয় পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি:
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস: আপনার নেপাল টুরটির আগে নিশ্চিত করুন আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ আছে কিনা। তবে একটা জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, নেপালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ মিনিমাম ৬ মাস বা তার বেশি হতে হবে। অনেকসময় আমরা নির্ধারিত তারিখে টুর প্ল্যান করার আগে পাসপোর্টের মেয়াদের কথা খেয়ালে রাখি না।
মানি ট্রান্সফার এবং বাজেট নির্ধারণ: বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার আগে অবশ্যই টাকার বিনিময় এক্সচেঞ্জ করে নিবেন। থাকা, খাওয়া, যাতায়াত এবং নেপালে আপনার সমস্ত এক্টিভিটিসের একটি বাজেট আগে থেকেই নির্ধারণ করে যাবেন। তাহলে নেপালের আপনার থাকাকালীন সময়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।
ট্র্যাভেল ইন্সুরেন্স: শেয়ারট্রিপের হলিডে প্যাকেজের সাথে ট্র্যাভেল ইন্সুরেন্সেও নিয়ে নিতে পারেন। কেন? যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা ভালো।
নেপাল যদি বাঙালি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি দেশ তারপরও যাতে কোনো রকম সমস্যার সম্মুখীন পড়তে না হয় তাই পূর্বপ্রস্তুতি থাকাটা বেশ জরুরী।  
বাংলাদেশ থেকে নেপাল কিভাবে যাবেন?
বাংলাদেশ থেকে নেপাল প্রতিদিন অসংখ্য ফ্লাইট যাওয়া আসা করে। যদি ফ্লাইটের বিকল্প হিসেবে কিছুটা কম খরচে নেপালে যেতে চান সেই ব্যবস্থাও আছে। নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে:
ফ্লাইট: বাংলাদেশ থেকে নেপাল পৌঁছানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দ্রুততম উপায় হল ফ্লাইট। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফ্লাইটে যেতে সাধারণত সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দু ঘন্টা। ফ্লাইটে জনপ্রতি আপনার খরচ হতে পারে ২০-২৭ হাজারের মতো। সবচেয়ে ডিসকাউন্টেড রেটে ফ্লাইট রেট পেতে শেয়ারট্রিপ থেকে ঢাকা টু নেপাল বিমান ভাড়া চেক করে দেখতে পারেন।
বাই রোড: আপনি যদি বাই রোড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তবে ইন্ডিয়ার ট্রান্সজিট ভিসা থাকতে হবে। কেননা বাই রোডে গেলে আপনার যাতায়াতের বাসটি ইন্ডিয়া হয়ে নেপালে অনুপ্রবেশ করবে। বাংলাদেশ টু নেপালে বাই রোডে আপনার ক্ষেত্র বিশেষে ১২-১৫ হাজার টাকার মতোন খরচ হতে পারে। মনে রাখবেন যে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসের কারণে জার্নিতে অনেক সময় লাগতে পারে (প্রায় ১৬ থেকে ২৪ ঘন্টা)। তাই পরিশ্রম এবং সময়, সবদিক থেকে বিবেচনা করলে ফ্লাইটে যাতায়াত করাটাই উত্তম।
বাংলাদেশ থেকে নেপালে ভিসা প্রাপ্তির উপায়
ট্যুরিস্ট ভিসা: বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ ভ্রমণকারী নেপালে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আগে থেকেই আবেদন করতে পারেন। নির্ধারিত দিনে নেপালে যাওয়ার আগে বাংলাদেশে নেপালী দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে ভিসা পেতে পারেন। প্রক্রিয়াকরণের সময় দেওয়ার জন্য কয়েক সপ্তাহ আগে ভিসার জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে ভিসাটি হবে স্টিকার ভিসা।
অন এরাইভাল ভিসা: নেপাল বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য অন এরাইভালে ভিসা প্রদান করে। আপনি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা নির্দিষ্ট স্থল সীমান্ত ক্রসিং-এ পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন ডেস্কে অথবা বাংলাদেশে বসেই অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে নেপালে ভিসার আবেদন করতে পারেন। তবে অনলাইনে পোর্টালে শুধু অন এরাইভাল ভিসার আবেদন করতে পারবেন, যা শুধু বাই এয়ারে গেলেই প্রযোজ্য। আপনার কাছে বৈধ ৬ মাস মেয়াদী পাসপোর্ট, নগদ ভিসা ফি এবং ভিসার আবেদনের জন্য পাসপোর্ট আকারের ছবি সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে অন এরাইভালেই ভিসা প্রদান করা হয়। তবে বাংলাদেশ থেকে নেপালে ভিসা প্রাপ্তির সহজলভ্যতার জন্যে শেয়ারট্রিপের ভিসা গাইডটি পড়ে দেখতে পারেন। অথবা শেয়ারট্রিপের সহায়তায় রেডি করতে পারেন আপনার ভিসা।
প্রথম দিন: কাঠমান্ডুতে আগমন
কাঠমান্ডু শহর
কাঠমান্ডুতে স্বাগতম, নেপালের প্রাণবন্ত রাজধানী শহর, এবং আপনার স্মরণীয় যাত্রার সূচনা বিন্দু! কাঠমান্ডুতে পৌছানোর পরে কোথায় থাকবেন তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। কেননা শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে আপনি বাজেট হোটেল থেকে শুরু করে প্রিমিয়াম, যেকোনো ধরনের হোটেল বুকিং করতে পারবেন।
নেপালের প্রথম দিনটি লোকাল দোকান, ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁয় ভরা জনপ্রিয় পর্যটন জেলা থামেলের কোলাহলপূর্ণ রাস্তায় ঘুরে দেখতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের স্যুভেনির, হস্তশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী নেপালি শিল্পকর্মের কেনাকাটা করতে ভুলবেন না।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে একটি স্থানীয় রেস্তোরাঁয় খাঁটি নেপালি খাবারের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেলতে পারেন। কিছু স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারেন, যেমনঃ মোমোস (ডাম্পলিংস), নেপালী থালি (মসুর ডালের সাথে ভাত) এবং সুস্বাদু তরকারি। এছাড়া নেপালের এক গ্লাস ফ্রেশ লাচ্ছি অবশ্যই ট্রাই করে দেখবেন। নেপালের লোকাল লাচ্ছি তার অভিন্ন স্বাদের জন্যে অনেক বিখ্যাত। প্রথমদিন যেহেতু জার্নির একটা ধকল কাটাতে কাটাতেই চলে যায় তাই কাঠমান্ডু শহর ঘোরাঘুরি করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক আপনার প্রথমদিনের ভ্রমণ গন্ডি।
দ্বিতীয় দিন: ঘুরে আসুন কাঠমান্ডুর দর্শনীয় স্থানসমূহ
দ্বিতীয় দিন হচ্ছে কাঠমান্ডুর মনোমুগ্ধকর ল্যান্ডমার্ক এবং সাংস্কৃতিক ভান্ডার ঘুরে দেখার আদর্শ সময়। সকালে নাস্তার পর পর, কাঠমুন্ডুর দর্শনীয় স্থানসমূহ ভ্রমণের জন্য যাত্রা শুরু করুন।
স্বয়ম্ভুনাথ স্তূপ (বানরের মন্দির): আপনার দিন শুরু করুন স্বয়ম্ভুনাথ স্তূপা থেকে, যা বানর মন্দির নামেও পরিচিত। এটি কাঠমান্ডু শহরের পশ্চিমে পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত যেখানে যেতে হলে পাড়ি দিতে হবে ৩৬৫টি পাথরের সিড়ি। পাহাড়টির চূড়া হতে পুরা কাঠমান্ডু শহরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। আপনি স্তূপের ধাপে আরোহণ করার সাথে সাথে মন্দিরের জটিল স্থাপত্য এবং স্থানীয়দের রঙিন প্রার্থনা পতাকাগুলো দেখতে পাবেন। সিড়ি চড়বার সময়ই আপনার নজর পরবে বানররের দিকে। এই সমস্ত বানরকে নেপালীরা পবিত্র দূতে মনে করে যা জায়গাটিতে এক অনন্য আকর্ষণ যোগ করে।
স্বয়ম্ভুনাথ স্তূপ
কাঠমান্ডু দরবার স্কোয়ার, পাটান, ভক্তপুর: কাঠমান্ডু দরবার স্কোয়ারের অবস্থান থামেলের দক্ষিণে। জায়গাটির ঐতিহ্যবাহীতার জন্যে ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কো একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করে। এই ঐতিহাসিক চত্বরটি নেপালের সমৃদ্ধ রাজকীয় ঐতিহ্যের স্বাক্ষী। উনিশ শতক পর্যন্ত নেপালের রাজ পরিবারের সদস্যগণ এখানেই বসবাস করতেন। তাই এর প্রাচীন প্রাসাদ, মন্দির এবং উঠান যা একসময় রাজকীয় কমপ্লেক্স দেখে পর্যটকরা আশ্চর্য হতে বাধ্য। দরবার স্কয়ারের স্থাপত্য এবং জটিল কাঠের কাজ আপনাকে নেপালের রাজকীয় অতীতে নিয়ে যাবে।
কাঠমান্ডু দরবার স্কোয়ার
ঐতিহ্যবাহী নেওয়ারি রেস্তোরাঁ: দুপুরের খাবারের জন্য, নেপালের স্থানীয় নেওয়ারি খাবারকে আপনার মেনুতে রাখতে পারেন। নেওয়াররা কাঠমান্ডু উপত্যকার আদিবাসী এবং তাদের রন্ধনপ্রণালী এর অনন্য স্বাদের জন্য বিখ্যাত। ইয়োমারি (একটি মিষ্টি চালের আটার ডাম্পলিং), বড়া (মসুর ডাল প্যানকেক), এবং সময় বাজি (বিভিন্ন অনুষঙ্গ সহ পিটানো ভাতের থালা) এর মতো মজাদার খাবারগুলি নেপালে ঘুরতে যাওয়া যেকোনো পর্যটকের কাছেই মাস্ট ট্রাই আইটেম!
ঐতিহ্যবাহী নেওয়ারি রেস্তোরাঁ
পশুপতিনাথ মন্দির: বিকেলের দিকে, নেপালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে একটি পবিত্র পশুপতিনাথ মন্দির পরিদর্শন করে আসতে পারেন। বাগমতি নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দিরটি গড়ে উঠেছে ভগবান শিবের উৎসর্গে ।
পশুপতিনাথ মন্দির
বৌদ্ধনাথ স্তূপ: যদি হাতে সময় থাকে, আপনি বৌদ্ধনাথ স্তূপা, ইউনেস্কো স্বীকৃত অন্যতম একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। স্থানটিকে বৌদ্ধ ধর্মের আলোকবর্তিকা বলা হয়। স্থাপনাটি দেখলে সবার আগে চোখে পড়ে একটি বিশাল গম্বুজ। তার ওপর রয়েছে পিরামিড আকৃতির টাওয়ার। নির্মল পরিবেশ এবং স্তূপের উপর বুদ্ধের সদা সজাগ দৃষ্টি আপনার মনকে শান্ত এবং মননশীল করতে বাধ্য।
বৌদ্ধনাথ স্তূপ
দিনটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে, কাঠমান্ডুর সাংস্কৃতিক সম্পদের স্মৃতিতে ভরা ক্যামেরা এবং হৃদয় পূর্ণ বিস্ময় নিয়ে আপনার হোটেলে ফিরে আসুন। আগামীকাল, আপনি মনোরম শহর পোখারার উদ্দেশ্যে রওনা হতে পারেন, যেখানে শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং উত্তেজনাপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
তৃতীয় দিনঃ পোখারার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্বেষণ
দ্বিতীয় দিনটি কাঠমান্ডুতে কাটানোর পরে আপনার হোটেল থেকে থেকে সকাল সকালই রওনা করতে পারেন পোখরার উদ্দেশ্যে। কাঠমান্ডু থেকে পোখরাতে যাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে বাসে যাওয়া এছাড়া গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া। সেক্ষেত্রে ড্রাইভিং এর সময় কাঠমান্ডু থেকে পোখরা যাওয়ার পথে মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি রাস্তা এবং অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃশ্যে উপভোগ করতে করতে যেতে পারবেন। তবে সবচেয়ে দ্রুত যেতে পারবেন যদি কাঠমান্ডু থেকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে যেতে পারেন। পোখরা এমন একটি জায়গা যেখানে সবুজ পাহাড় এবং রাজকীয় পর্বত দৃশ্যে আপনার মনকে উৎফুল্ল করতে বাধ্য। যাওয়ার পথে শ্বাসরুদ্ধকর প্যানোরামাগুলি ক্যাপচার করতে আপনার ক্যামেরাটি হাতের কাছে রাখুন।
এবার আলোচনা করবো পোখরার বিখ্যাত সব স্থান সমূহ নিয়ে যেখানে ঘুরে না আসলেই নয়! ফেওয়া লেক: পোখারা ভ্রমণের একটি আবশ্যকীয় কাজ হলো ফেওয়া লেকে বোটিং করা। পোখরায় ৩টি লেক আছে যার মধ্যে ফেওয়া হ্রদ অন্যতম। ৩টির মধ্যে যেকোন একটি হ্রদ ঘুরে দেখলেই হয়। ফেওয়া লেকের স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী কাঠের নৌকা দেখার মতোন একটি নিদর্শন। কাঠের নৌকা ভাড়া করে ফেওয়া লেকে অবশ্যই ঘুরোঘুরি করে দেখবেন।
ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা: নৌকায় চড়ার পর, শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডায়  অল্প সময় হাইকিং করে আসতে পারেন। প্যাগোডাটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত, যেখান থেকে পোখরা শহর, ফেওয়া হ্রদ এবং আশেপাশের পাহাড়ের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়।
ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা
লেকসাইডে অবসর সময়: দিনটি ঘনিয়ে আসতে আসতে লেকসাইডে ঘুরে আসতে পারেন। জায়গাটি পোখরার অন্যতম ব্যস্ত পর্যটন কেন্দ্র। দোকান, ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁর সাথে সারিবদ্ধ রঙিন রাস্তায় হাটাহাটি করতে মনে হবে যেন অন্য এক জগতে নিজেকে আবিষ্কার করছেন। নেপাল ভ্রমণের স্বারক হিসেবে কেনাকাটায় লিপ্ত হতে পারেন, স্থানীয় সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নিতে পারেন, অথবা উপভোগ করতে পারেন লেকের ধারের নির্মল পরিবেশ।
চতুর্থ দিনঃ পোখারায় অ্যাডভেঞ্চার
নেপালে ভ্রমণের চতুর্থ দিনে, আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে রোমাঞ্চকর সব অ্যাডভেঞ্চার। চতুর্থ দিনে কি থাকছে? নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে
সারংকোটে ভোরবেলা: সারাংকোট থেকে অন্নপূর্ণা এবং ধৌলাগিরি পর্বতমালার উপর একটি মুগ্ধকর সূর্যোদয়ের সাক্ষী হতে আপনার উচিত একদম ভোরবেলায় সেখানে হাজির হওয়া। ভোর সকালে সারাংকোটে থেকে আপনি যে দৃশ্যের স্বাক্ষী হতে পারবেন তা ইহজগৎ এর যেকোনো দৃশ্যের থেকে অতুলনীয়!
সারাংকোট হচ্ছে পোখরার বিখ্যাত প্যারাগ্লাইডিং স্পট। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ সারাংকোটে আসেই প্যারাগ্লাইডিং করতে। সারাংকোটে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে মনে হবে যেন হাজার হাজার রঙ বেরঙের পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে, আসলে তারা সবাই প্যারাগ্লাইডিং করা পর্যটক।
দুঃসাহসিক এক্টিভিটিস: অ্যাড্রেনালাইন জাঙ্কিদের জন্য, পোখারার রোমাঞ্চকর এক্টিভিটিস হিসেবে প্যারাগ্লাইডিং বেছে নিতে পারেন। যেখানে আপনি ফেওয়া লেকের মনোরম দৃশ্য উপর থেকে উপভোগ করতে পারবেন। বিকল্পভাবে, জিপ-লাইনিংও যেতে পারেন যা আপনাকে অত্যাশ্চর্য পর্বত দৃশ্যের সাথে একটি অ্যাড্রেনালিন-পাম্পিং রাইড অফার করবে।
দুঃসাহসিক এক্টিভিটিস
দেবীর জলপ্রপাত এবং গুপ্তেশ্বর মহাদেব গুহা: পোখরায় অবস্থিত ছোট একটি ঝর্ণার নাম দেবীর জলপ্রপাত। দেবীর জলপ্রপাত এর একপাশে রয়েছে একটি বাঁধ। কোন একসময় যখন বাঁধে পানি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছিলো, ঝর্নার পানিতে তেমন স্রোত ছিল না। দেবীর জলপ্রপাত পরিদর্শনের সাথে পোখরার অনন্য ভূতাত্বিক বিস্ময়গুলি  আপনার চোখে পড়বে। ভূগর্ভস্থ টানেলে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পারদী নদী হাজার বছর ধরে হয়ে আসা বজ্রপাতের স্বাক্ষী। জলপ্রপাত থেকে অল্প হাঁটার দূরত্বেই আপনি গুপ্তেশ্বর মহাদেব গুহা পাবেন, যেখানে আপনি হাজার বছরের পুরনো স্ট্যালাকটাইট এবং স্ট্যালাগমাইটস দেখতে ভীড় করে অসংখ্য পর্যটক। পোখরায় দুদিনে যতটুকুন ঘোরাফেরা করা যায় তা নিয়েই একটি গাইড আপনাকে প্রদান করা হয়েছে এই ব্লগটিতে।  নেপালে আপনার শেষ দিনটি মূলত চলে যাবে নেপাল ছেড়ে চলে যাওয়ার আয়োজন করতে করতেই। তার মধ্যেই যতটুকুন ঘোরা ফেরা করা যায় তা নিয়েই পঞ্চম দিনের গাইডটি তৈরী করা হয়েছে।
পঞ্চম দিন: বাংলাদেশে ফেরা
আপনার নেপাল ভ্রমণের শেষ দিনটি দেখতে দেখতে চলে আসছে। যেহেতু এয়ারপোর্টের দিকেই রওনা দিবেন, তাই পোখরায় থাকা হোটলটি ছেড়ে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিন। এবং যাওয়ার পথে কোথায় কি করতে পারেন, অথবা কোথায় ঘুরতে যেতে পারেন তা নিয়েই আলোচনা করা হবে।
তিব্বতিয় বুদ্ধ মোনেস্ট্রী: পোখরার শহরতলীতে, বিমানবন্দর থেকে চার কিলোমিটার দূরে শ্বেতি নদীর তীরে অবস্থিত। জায়গাটি বৌদ্ধদের একটি উপাসনালয়।
তিব্বতিয় বুদ্ধ মোনেস্ট্রী
ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেন মিউজিয়াম: পোখরা শহরের কেন্দ্রস্থলে, বিমানবন্দর থেকে ১.৫ কিলোমিটার দক্ষীণে এই মিউজিয়ামটি অবস্থিত। এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট হলো, এখান থেকে তিনটি পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায়। যার নাম, ধওলাগীরি, অন্নপূর্ণা ও মানাস্লু। এই মিউজিয়ামের প্রধান বৈশিষ্ট হলো, এতে পর্বতারোহনের কলা কৌশল, বিশ্বব্যাপি প্রধান পর্বতমালার তথ্য সমূহ, পর্বতমালার ভৌগলিক অবস্থান, বিশ্বব্যাপি পর্বতারোহীদের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদী, পোশাক-আশাক এবং আরোহনের ইতিহাস প্রদর্শন করা আছে।
ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেন মিউজিয়াম
মাউন্টেন মিউজিয়াম থেকেই আপনি সরাসরি চলে আসতে পারবেন ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এবং এরই মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে নেপালে ৫ দিন ৪ রাতের অসাধারণ ট্রিপটি।
বাংলাদেশ থেকে নেপাল ভ্রমণের সর্বোত্তম সময়
নেপাল ভ্রমণের আদর্শ সময় হল বসন্ত (মার্চ থেকে মে) এবং শরৎ (সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর) ঋতুতে যখন আবহাওয়া মনোরম থাকে । এই সময় আকাশ পরিস্কার থাকে, উষ্ণ তাপমাত্রা থাকে, সবুজ গাছগাছালি থাকে এবং অনেক দূর থেকেও হিমালয়ের দৃশ্য দেখা যায়। এই টিপসগুলি মাথায় রেখে, আপনি নেপালের মধ্য দিয়ে একটি নিরাপদ, আনন্দদায়ক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে পারেন।

Side banner