ভারতের রাজধানী দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (আইজিআইএ) এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমে বড় ধরনের প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এতে করে একশোটিরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। এছাড়া সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমস্যা সমাধানে তৎপরতা চলছে এবং যাত্রীদের অসুবিধা ও ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এদিকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে যাত্রীদের জন্য প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) সিস্টেমে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনায় দেরি হচ্ছে। ডায়াল (দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড)সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে মিলে দ্রুত সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
এছাড়া ফ্লাইটের সর্বশেষ আপডেট জানতে নিজ নিজ এয়ারলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের অনুরোধ করেছে।
ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (এএআই) জানিয়েছে, স্বয়ংক্রিয় বার্তা বিনিময় ব্যবস্থা বা অটোমেটিক মেসেজ সুইচিং সিস্টেম (এএমএসএস)-এ ত্রুটির কারণেই এই ব্যাঘাত ঘটেছে। এই সিস্টেমটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ডেটা পরিচালনায় সহায়তা করে।
এএআই বলেছে, ফ্লাইট পরিকল্পনাগুলো এখন কন্ট্রোলাররা হাতে করে প্রক্রিয়াজাত করছেন, ফলে দেরি হচ্ছে। প্রযুক্তি টিম দ্রুত সিস্টেমটি পুনরায় সচল করতে কাজ করছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এয়ারলাইন বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে ফ্লাইট স্ট্যাটাস যাচাই করতে যাত্রীদের অনুরোধ করেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এই ত্রুটির কারণে দিল্লি বিমানবন্দরে ও বিমানের ভেতরে অপেক্ষার সময় বেড়ে গেছে। তবে তাদের কেবিন ক্রু ও স্থলকর্মীরা যাত্রীদের অসুবিধা কমাতে তাৎক্ষণিক সহায়তা দিচ্ছেন।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, দিল্লির এটিসি সিস্টেমে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সব এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে দেরি হচ্ছে। এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য আমরা দুঃখিত এবং আপনাদের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞ।
এছাড়া বাজেট এয়ারলাইন্স স্পাইসজেট ও ইন্ডিগো জানিয়েছে, দিল্লিসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ফ্লাইটও এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে। স্পাইসজেট বলেছে, তাদের ক্রু ও গ্রাউন্ড টিম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে যাতে দ্রুত স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরা যায়।
ইন্ডিগো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিমানবন্দরে বা বিমানের ভেতরে দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে যাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে— আমরা এই ধৈর্যের প্রশংসা করি।
ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ভারতের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার ৫৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। গত সপ্তাহজুড়েও বিমানবন্দরটির কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, জিপিএস স্পুফিং বা ভুয়া স্যাটেলাইট সংকেতের কারণে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছে, ফলে বেশ কয়েকটি ফ্লাইটকে অন্যত্র ঘুরিয়ে নিতে হয়। এতে হঠাৎ করেই আকাশপথে ট্রাফিক জট সৃষ্টি হয়।
মূলত জিপিএস স্পুফিং এমন এক ধরনের প্রযুক্তি, যেখানে ভুয়া স্যাটেলাইট সংকেত পাঠিয়ে বিমানের নেভিগেশন সিস্টেমকে বিভ্রান্ত করা হয়, ফলে বিমান ভুল অবস্থান বা উচ্চতার তথ্য দেখাতে শুরু করে। এটি জিপিএস জ্যামিং থেকে আলাদা, কারণ জ্যামিং কেবল সংকেত ব্লক করে, আর স্পুফিং সক্রিয়ভাবে ভুল তথ্য পাঠিয়ে সিস্টেমকে প্রতারিত করে।
এর আগে এসব ঘটনার মূল কেন্দ্র ছিল সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলো। তবে এখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর ক্ষেত্রেও এই হুমকি বাড়ছে। গত মাসে ভিয়েনা থেকে দিল্লিগামী একটি ফ্লাইট জিপিএস স্পুফিংয়ের কারণে দুবাইয়ে অবতরণে বাধ্য হয়েছিল।








































আপনার মতামত লিখুন :