Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে নিহত কালাম

শত মানুষের ভিড়ে বাবাকে খুঁজছে দুই অবুঝ সন্তান


দৈনিক পরিবার | স্টাফ রিপোর্টার অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ১১:২৭ এএম শত মানুষের ভিড়ে বাবাকে খুঁজছে দুই অবুঝ সন্তান

আব্দুল্লাহ আর পারিসা। নিষ্পাপ দুই জোড়া চোখ। শত মানুষের ভিড়ে খুঁজে ফিরছে বাবা আবুল কালাম আজাদকে। অবুঝ এই শিশু দুটি এখনো বুঝে উঠতে পারেনি তাদের বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই। বাবা আর ফিরবে না, কোলেও নেবে না তাদের। বাবার মৃত্যুতে নিমিষেই শিশু দুটির ভবিষ্যৎ ঢেকে গেছে কালো মেঘে। বাবার বিনিময়ে যেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের ভুলের মাশুল গুনছে শিশু দুটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠী এলাকার মৃত আব্দুল জলিল চোকদারের ছেলে আবুল কালাম আজাদ। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায়। ঢাকায় তিনি একটি বেসরকারি এজেন্সিতে চাকরি করতেন। তার আয়ের একটি অংশ গ্রামের বাড়িতে পাঠাতেন।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে ব্যক্তিগত কাজে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় যাওয়ার সময় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে তার ওপর পড়লে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় আবুল কালাম আজাদের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলার মোক্তারের চর পূর্ব পোড়াগাছা দাখিল মাদরাসা মাঠে নিহতের জানাজা সম্পন্ন হয়।
এর আগে তার মরদেহ রাত একটার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। নিহতের জানাজায় সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেয়। জানাজা শেষে নিহতের মরদেহ নড়িয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।
স্বামীর এমন আকস্মিক মৃত্যুতে দুই শিশু সন্তান নিয়ে এক অথৈ সাগরে পড়েছেন স্ত্রী প্রিয়া। সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিলেও তা যৎসামান্য ও অপ্রতুল। কীভাবে সন্তানদের নিয়ে সামনের দিনগুলি পার করবেন সেই প্রশ্নের উত্তর এখন অজানা। ছেলের এমন মৃত্যুতে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতাকেই দুষছেন স্বজনরা।
নিহত আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী প্রিয়া বলেন, আমার হাজবেন্ড ছাড়া আমাদের এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আমাদের সংসার এখন কীভাবে চলবে। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো নিয়ে সামনে কীভাবে চলবো বুঝতে পারছি না। সরকারের কাছে একটাই দাবি, আমার স্বামীর মতো যাতে আর কারো মৃত্যু না হয়।
প্রতিদিনের মতোই ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় গতকালও ছিল কোলাহল আর যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা। ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বাসের হর্ন, আর রিকশার বেলের শব্দে আবুল কালাম আজাদ একমুহূর্তের জন্যও টের পাননি এই যাত্রাটাই হয়তো তার শেষযাত্রা। চোখের পলকেই মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি।
এদিকে সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তবে শুধু আশ্বাস নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দাবি স্বজন ও এলাকাবাসীর।
নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুল গণি বলেন, সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টাকা অনুদানের কথা ঘোষণা দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কেউ আমাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি। আবুল কালাম আজাদের আয়ের টাকায় পুরো পরিবার চলতো। আমরা দাবি জানাই, তার পরিবারের কথা ভেবে সরকার অন্তত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। যাতে তার সন্তানদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ হয়।
নিহতের আরেক নিকটাত্মীয় কাওসার আহম্মেদ বলেন, আমরা মনে করি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এভাবে একটি তাজা প্রাণ চলে যাবে তা আমরা কল্পনা করিনি। আমরা চাই এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পরিবারটির পাশে দাঁড়াক সরকার।
ক্ষতিপূরণের বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, আমরা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জেনেছি। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Side banner