নওগাঁর রাণীনগরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এক জমির সাতচল্লিশ বছরের খাজনা হিসেবে মাত্র চল্লিশ টাকা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এমন শত শত অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য আর হয়রানীর আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাণীনগর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস।
এছাড়া বর্তমান সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোছা. ফাতেমা খাতুন তার ভাই বহিরাগত মামুনের মাধ্যমে অফিসের কম্পিউটারের সকল কাজ সম্পন্ন করে আসছেন এবং মামুন অফিসের নিয়োগপ্রাপ্ত কোন কর্মচারী না হলেও ফাতেমা তার দ্বারাই ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে সকল কাজ চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে যে অফিস থেকে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হিসেবে আয় করছে সেই অফিসে নেই কোন সাইনবোর্ড। দীর্ঘদিন সংস্কার কিংবা মেরামত না করার কারণে বর্তমানে তা মুড়ির টিনে পরিণত হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এই ভবনটি একটি সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস।
ভুক্তভোগী উপজেলার খাগড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আলী আল এফতেখার সেবু। তিনি জানান, উপজেলার বালুভরা-৩৬ মৌজায় ২২৩০ নং হোল্ডিং এ ১২৫৬ দাগে তার ভাই আলী আল এমরানের ক্রয় করা ৩.৫ শতাংশ জমির নিয়মিত খাজনা দিয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের খাজনা দিতে ভূমি অফিসে গেলে সেখানকার বহিরাগত কম্পিউটার অপারেটর মামুন জানান যে নতুন ভূমি আইন অনুসারে আপনাকে ১৯৪৭খ্রি: থেকে ওই দাগের পুরো জমির খাজনা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু তিনি ১৩৭৯ সন থেকে ১৪২৯ সন পর্যন্ত ৩.৫ শতাংশ জমির আংশিক খাজনা পরিশোধ করেছেন। সে কারণে পুরো খাজনা দিতে আপত্তি জানালে তাকে পরবর্তিতে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর অফিসে গেলে মামুন জানান যে এই বিষয়গুলো নিয়ে আগে যোগাযোগ করতে হয়। এরপর সেবু বিগত সময়ের খাজনা পরিশোধের সকল কাগজপত্রাদি দেখানোর পরে ২৯ বছরের খাজনা দিতে বলে জানান মামুন। পরবর্তিতে তিনি বিষয়টি উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানালে তারা পাত্তা দেয়নি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বিষয়টি অবগত করেন। সাংবাদিকরা যাওয়ার পর তার কাছ থেকে এক বছরের খাজনা হিসেবে মাত্র চল্লিশ টাকা নেয়া হয়।
একজন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এই পরিচয় দেওয়ার পরও ভূমি অফিসের ওই বহিরাগত ব্যক্তি কোন মূল্যায়নই করেননি। বরং দিনের পর দিন তিনি হয়রানীর শিকার হয়েছেন। তার ক্ষেত্রে যদি এমন ঘটনা হয় তাহলে ইউনিয়নের অন্যান্য সাধারণ মানুষরা এই অফিস থেকে ঘুষ আর হয়রানী ছাড়াই কতটুকু মানসম্মত সেবা পেতে পারেন সেই বিষয়টি পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। এই অফিসে এসে যারা এক টাকা খাজনা দিতে যোগাযোগের মাধ্যমে আগেই পাঁচটাকা ঘুষ দেন তাদের কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। আর যারা যোগাযোগ করে না, তাদের দিনে পর দিন নানা অজুহাতে হয়রানী করা হয়।
এলাকার সাধারণ মানুষ গুরুত্বপূর্ণ এই অফিস থেকে কোন প্রকারের ঘুষ, হয়রানী ও ভোগান্তি ছাড়াই সেবা পেতে চান। তাই সেবাপ্রাপ্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে তিনি (আলী আল এফতেখার সেবু) সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারি কর্মকর্তা (তহশীলদার) মোছা. ফাতেমা খাতুন বলেন, এসিল্যান্ড স্যারের অনুমতিক্রমে তার কাজের সহযোগিতার জন্য তিনি তার ভাইয়ের মাধ্যমে অফিসের সকল কম্পিউটারের কাজ করে নেন। আর খাজনা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন যে আরএস খতিয়ান অনুসারে খাজনা নিলে সেবুর কাছ থেকে নতুন ভূমি আইন অনুসারে ৪৭ বছরের খাজনা নিতে হতো। আর তিনি যেহেতু জমির আংশিক খাজনা দিয়ে এসেছেন তাই সর্বশেষ বকেয়া বছরের খাজনাই সেবুর কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে ভূমি অফিস নির্মাণ করা হবে বলে অফিসের সামনে কোন সাইনবোর্ড ঝুলানো হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম মোবাইল ফোনে জানান, বহিরাগত মানুষের মাধ্যমে ভূমি অফিসের কাজ করানো হচ্ছে এই বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া ঘুষ, হয়রানী ও ভোগান্তির বিষয়েও অভিযোগ পেলে তিনি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আপনার মতামত লিখুন :