Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে যাচ্ছে ঝালকাঠীর ডাব


দৈনিক পরিবার | মশিউর রহমান রাসেল এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ০১:৩২ পিএম এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে যাচ্ছে ঝালকাঠীর ডাব

গ্রীষ্মকালের তীব্র তাপদাহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান নিতে এবং তরল পানীয় পান করতে। কারণ রোদের তীব্রতায় যেন কাঠও ফেটে যায়। সবাই অস্থির হয়ে যাচ্ছে তীব্র গরমে। শরীর ঘেমে দুর্বল এবং তৃষ্ণার্ত হওয়ায় শরীরে দেখা দেয় পানি স্বল্পতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য। এ থেকে বাঁচতে সবারই প্রিয় ডাবের পানি। এ সময় ১ গ্লাস ডাবের পানি পান করলে পানি স্বল্পতা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করে শরীরকে শীতল করে।
ডাব বা নারিকেলের ১২ মাসই ফলন হয়। তবে গ্রীষ্মকালে এর ফলনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাজারে সরবরাহও বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন সময় চিকিৎসকদেরও পরামর্শ থাকে, জ্বর অথবা প্রাথমিক পর্যায়ের কোনো অসুখ হলে মৌসুমী ফল খেতে। তাহলেই অসুখ কমে যায়। তীব্র গরমে পানি শুন্যতার কারণে ডায়রিয়া বা কলেরা রোগ দেখা দিলে ডাবের পানির জুড়ি নেই। এছাড়াও গরমে মশার উপদ্রব বৃদ্ধিতে ডেঙ্গু, ম্যালিয়াসহ নানা রোগের দেখা দেয়। এসব রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও ডাবের পানির বিকল্প নেই বলেই চিকিৎসকরা ডাবের পানি পান করতে পরামর্শ দেন।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসিবুন ইসলাম বলেন, ঝালকাঠি জেলায় ১ হাজার ১শ ৭৭ হেক্টর জমিতে নারিকেলের বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩শ ৯৫ হেক্টর, নলছিটি উপজেলায় ৩শ হেক্টর, রাজাপুর উপজেলায় ২শ ২০ হেক্টর, কাঁঠালিয়া উপজেলায় ২শ ৬২ হেক্টর জমিতে নারিকেল গাছের আবাদ রয়েছে। এতে কয়েক লাখ গাছ রয়েছে। যেখান থেকে এ অঞ্চলের জুন (শুকনা) ও ডাব নারিকেল জনগণের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মৌসুমে ডাবের উৎপাদন বেশি হয়। নারিকেল গাছ লাগানোর পরে প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গাছের গোড়ায় সামান্য কাদা মাটি ও সার দিলে ভালো ফলন হয়। এছাড়া তেমন কোন যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয় না বলেও জানান তিনি।
ডাব ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারবাকপুর ও শুক্তাগড় ইউনিয়নের নারিকেল বাড়িয়া (ক্লাব) এলাকায় রয়েছে ডাবের একাধিক মোকাম। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে খুচরা ক্রেতারা ডাব কিনে মোকামে নিয়ে পাইকারদের হাতে তুলে দেন। প্রতিটি ডাবের (আকারভেদে) ক্রয়মূল্য ৫০ থেকে ৬৫ টাকা গাছ মালিককে দিতে হয় ক্রেতার। ২/৩জনে গ্রুপ ভিত্তিক ডাব ক্রয় করেন। কেউ গাছে উঠেন, কেউ নীচে দাড়িয়ে দড়ি দিয়ে ডাব অক্ষত নামাতে সাহায্য করেন। আবার কেউ ডাব নামানোর পরে ছড়ি থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে পরিস্কার করে একজায়গায় জমা করেন। সারাদিনের পরিশ্রমের মাঝে নাস্তা, গাড়ি ভাড়া দিয়ে পাইকারী বিক্রির মোকামে পৌছাতে ডাবপ্রতি আরো ৫টাকা খরচ হয়। এরপরে পাইকারদের কাছেও ডাবের আকারভেদে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়। পাইকার সেই ডাব কিনে ট্রাকে লোড দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বড় বড় শহরগুলোর আড়তে পৌছে দেন। ট্রাকে উঠিয়ে সাজিয়ে গাড়ি ছাড়ার পূর্ব পর্যন্ত্র প্রক্রিয়া করতে আরো ২/৩জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের বেতন এবং গাড়ির যাবতীয় খরচ শেষে প্রতিটি ডাব আড়তে পৌছাতে প্রায় একশ টাকা খরচ হয়।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া (ক্লাব) এলাকা থেকে ট্রাকে করে ডাব যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের বড় বড় শহরের আড়তে। এতে এলাকার বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতারও দেখা মেলে সংশ্লিষ্ট ৫টি স্তরের সুফলভোগীদের।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুচরা ক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা ডাবের আকার অনুযায়ী ৫০ থেকে ৬৫ টাকা দরে প্রতিটি ডাব ক্রয় করি। গাছে ওঠা ও সরবরাহের পরিশ্রম নিয়ে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ পর্যন্ত দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে ডাব কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়।
খুচরা ক্রেতা জাকির ও আবুল হোসেন জানান, এই রৌদে গ্রামে ঘুরে ঘুরে গাছের মাথায় উঠে ডাব কাটতে হয়। গাছের মাথায় উঠে ডাব কাটতে কি যে কষ্ট হয়, তা যে উঠে সেই বুৃজে। যা কথা বলে বুঝানো যাবে না। এরপর ডাব কেটে নামিয়ে হিসেব করে গাছ মালিককে দাম দিয়ে,  ক্ষুধার্ত অবস্থায় নাস্তা করে, গাড়ি ভাড়া দিয়ে মোকামে পৌছাতে  সময়, শ্রম, খরচ যা হয় তাতে ব্যবসা সে অনুযায়ী পাই না। ডাবের পানি ক্রেতার হাতে পৌছাতে প্রতিটি ডাবের দাম ১২০ টাকা থেকে দেড়শ টাকা দাম পড়ে।  আর আমরা পাই তার প্রায় অর্ধেক। দুই/তিন হাত বদলের কারণে আমরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছি বলেও অভিযোগ তাঁদের।
পাইকারি ক্রেতা মো. দুলাল হোসেন বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী সহ দেশের বড় বড় শহরের আড়তে পৌছে দেয়া পর্যন্ত বহন খরচ পথে পথে বিভিন্ন ধরনের রোড খরচ দিয়ে প্রতিটি ডাবে একশ টাকারও বেশি খরচ পড়ে। আড়তদারদের কাছ থেকে আবার খুচরা বিক্রেতারা কিনে নিয়ে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে প্রতিটি ডাব বিক্রি করে।
প্রান্তিক পর্যায়ের নারিকেল চাষিদের কাছ থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত হয়ে ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছতে দাম অনেক হলেও মূলত প্রকৃত চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ চাষিদের।

Side banner