১০ম হতে ৯ম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছে বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসোসিয়েশন। আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটির কর্মকর্তারা।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে সংগঠনটির নেতারা একথা জানান। এতে সংগঠনের আহবায়ক মুহাম্মদ মিলন মিয়া ও সদস্য সচিব আল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা অংশ নেন।
এ সময় সংগঠনটির নেতারা বলেন, উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদটি ৯ম গ্রেডে উন্নীত করা হলে সরকারের অতিরিক্ত আর্থিক ব্যয় বা বাড়তি বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না। কারণ বর্তমানে এ পদে কর্মরত ১ হাজার ৭২৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ২৬৭ জন কর্মকর্তা ব্যতীত বাকি সকল কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই ১০ম গ্রেড থেকে উচ্চতর গ্রেড/টাইম স্কেল/সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে ৭ম, ৮ম ও ৯ম গ্রেডে বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করছেন। ইউএপিইও/টিএপিইও পদটি ৯ম গ্রেডে উন্নীত করা হলে এটি আর্থিক প্রাপ্তির তুলনায় বহুগুণে সামাজিক মর্যাদা ও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব বৃদ্ধিতে অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এমতাবস্থায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড সুসংহতকরণ এবং প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কর্মরত উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে পদটি ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীত করার জোর দাবি জানান। যদি দাবি বাস্তবায়নের স্বপক্ষে আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কর্তৃপক্ষ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন তাহলে বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ মাঠ পর্যায়ে মানসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। ১৯৯৪ সালে সংশোধিত নিয়োগবিধি অনুযায়ী পদটি ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। সে সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি ছিল ১৭তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষক পদটি ছিল ১৮তম গ্রেডে। পরবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক পদটি কয়েক দফায় উন্নীত হয়ে বর্তমানে ১০ম গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদটিও চার দফায় উন্নীত হয়ে সর্বশেষ ২০২০ সালে ১৩তম গ্রেডে উন্নীত হয়। অন্যদিকে, এ দপ্তরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট পদটি ৯ম গ্রেড থেকে উন্নীত হয়ে বর্তমানে ৬ষ্ঠ গ্রেডে রয়েছে। একইভাবে, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদটি ৩য় শ্রেণি থেকে ১ম শ্রেণি (৯ম গ্রেড) এ উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য দপ্তরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ যেমন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার প্রমুখ ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। দীর্ঘ ৩২ বছর অতিক্রান্ত হলেও উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদটি এখনো ১০ম গ্রেডেই বহাল রয়েছে। এ অবস্থাকে আমরা হতাশাব্যঞ্জক এবং বৈষম্যমূলক বলে বিবেচনা করি।
আরও বলা হয়, বর্তমানে উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অনুমোদিত পদসংখ্যা ২,৬২৯টি এবং এর অব্যবহিত ঊর্ধ্বতন পদ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পদসংখ্যা মাত্র ৫১৬টি। বিদ্যমান নিয়োগবিধি অনুযায়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে ৫০% পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে, অর্থাৎ মাত্র ২৫৮টি পদে পদোন্নতি সম্ভব। এর ফলে গড়ে প্রতি ১০ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর একই পদে চাকরি করে যাচ্ছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই পদে থেকে অবসর গ্রহণ করছেন। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে এবং কর্মস্পৃহা হ্রাস পাচ্ছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি করা হলে দীর্ঘদিনের লালিত প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ হবে, কর্মকর্তাদের কর্মোদ্দীপনা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের সর্বাধিক সংখ্যক অফিসারের বঞ্চনাবোধের অবসান ঘটবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৫,৬৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়কে কার্যকরভাবে পরিচালনা ও তদারকির জন্য প্রায় ২৫-৩০টি বিদ্যালয় নিয়ে একটি ভৌগোলিক ইউনিট গঠন করা হয়েছে, যা ‘ক্লাস্টার’ নামে পরিচিত। প্রতিটি ক্লাস্টারের নেতৃত্বে থাকেন একজন ইউএপিইও/টিএপিইও, যিনি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর ২৫-৩০ জন প্রধান শিক্ষক, ১৬০-২০০ জন সহকারী শিক্ষক, হাজারো শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় কমিউনিটি ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় সাধনে নেতৃত্ব প্রদান এবং বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার, তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের তদারকিও করেন। সরকারের অন্য কোনো দপ্তরের কর্মকর্তাকে মাঠপর্যায়ে এত অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব প্রদান করতে হয় না।
সংগঠনের নেতারা বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণের প্রশাসনিক ও একাডেমিক তত্ত্বাবধান, মেন্টরিং, মনিটরিং, প্রশিক্ষণ, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) ও ছুটি প্রদান এবং পদোন্নতি, অনিয়ম তদন্ত, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও আর্থিক-প্রশাসনিক বিষয়ের নিস্পত্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ প্রদানকারী কর্মকর্তা হলেন উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এই দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রশাসনিক ও একাডেমিক কর্তৃত্ব। কিন্তু একই গ্রেডের পদে অবস্থান করলে সেই কর্তৃত্ব কার্যত দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রচলিত প্রশাসনিক প্রথা অনুযায়ী, একজন পরিদর্শকের পদমর্যাদা সর্বদা যাকে পরিদর্শন করা হয় তার চেয়ে উচ্চতর হওয়া বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের পদ ১০ম গ্রেডে উন্নীত হয়েছে। ইউএপিইও পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কার্যকরভাবে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষা এবং নির্দেশ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রধান শিক্ষকের চেয়ে ন্যূনতম এক ধাপ উচ্চতর পদমর্যাদায় উন্নীত করা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়ার এবং নির্দেশ কার্যকর না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তারা বলেন, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রাথমিক শিক্ষার বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে গঠিত কনসালটেশন কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা এর ৪নং কলামে জনবল এবং আর্থিক ও বস্তুগত সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পদের গ্রেড উন্নীতকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। এর পূর্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি তাদের ১৯তম বৈঠকে উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পদকে ২য় শ্রেণি (১০ম গ্রেড) থেকে ১ম শ্রেণি (৯ম গ্রেড) এ উন্নীত করার পক্ষে সুপারিশ প্রদান করেছে। কিন্তু কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই এ সুপারিশ আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।








































আপনার মতামত লিখুন :