হিফজুল কুরআনের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় পাঠদানের মাধ্যমে সু-শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে “হযরত শাহ্ বদল রহঃ মতিনিয়া হিফজুল কোরআন ক্যাডেট মাদ্রাসা” মাদরাসা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দ্বীনি এ প্রতিষ্ঠানটি ছাত্র ও অভিভাবকদের হৃদয় কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। অত্যন্ত নিরিবিলি, মনোরম ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে চলছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাদান কার্যক্রম। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাফেজ ও বিশিষ্ট শিক্ষকদের নিবিড় যত্ন ও পাঠদানের ফলে এরই মধ্যে হিফজুল কুরআন ও আধুনিক শিক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচিতির পাশাপাশি অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে।
হিফজুল কুরআনের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় এই স্লোগানকে সামনে রেখে শিশুদের ইলম এবং আমল এর সমন্বয় সাধন ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে ২০১২ সালে হাজ্বী আব্দুল মতিন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বাবুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় “হযরত শাহ্ বদল রহঃ মতিনিয়া হিফজুল কোরআন ক্যাডেট মাদ্রাসা” নামে একটি আধুনিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৮ সালে হাজ্বী আব্দুল মতিন ইন্তেকাল করেন। বর্তমানে মুহতামিম কাজি মাওলানা বিলাল আহমদ।
মুহতামিম কাজি মাওলানা বিলাল আহমদ বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। ঘুণেধরা এ সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে ইসলামী জ্ঞানের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। এ দিকটি সামনে রেখেই এখানে প্রতিটি শিশুকে গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়। একটি মুসলিম শিশুকে মহাগ্রন্থ আল কুরআন হিফজের পাশাপাশি দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। ছাত্রদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য এখানে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন ধরণের সহশিক্ষা কার্যক্রমও। আমরা অত্যন্ত দক্ষ হাফেজ ও বিশিষ্ট শিক্ষকদের নিয়ে মাদরাসাটি পরিচালনা করছি। তিনি আরও জানান, কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরনের মাধ্যমে আল্লাহভীরু, সৎ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলতেই আমরা এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছি।
সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, এখানে এবতেদায়ী, নূরানী, হেফজ, কিতাব খানায় শিক্ষা ও পলিটেকনিক্যাল শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি খুবই নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে চলছে মাদ্রাসার কার্যক্রম। ফলে প্রতিটা শিশু মনোযোগ নিয়ে অধ্যবসায়ে মনোনিবেশ করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি একেবারে যুগোপযোগী। এখানে শিশুর শিক্ষাগ্রহণ ক্ষমতার সাথে সঙ্গতি রেখে সাজানো হয়েছে পাঠ কার্যক্রম। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযুক্ত করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার প্রত্যয়ে এ মাদ্রাসাটি অনুসরণ করছে ইংরেজি মাধ্যমে বাংলাদেশী (ন্যাশনাল) কারিকুলাম। একটি সুপরিকল্পিত ও মানসম্পন্ন কারিকুলাম ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের একে অন্যের অভিব্যক্তি, জ্ঞান, যোগ্যতা ও চিন্তা-পরিকল্পনা এবং অনুভব সুস্পষ্টও দৃঢ়ভাবে প্রকাশের সহায়ক হবে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সংগতি রেখে পাঠ্যসূচি এমনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে যাতে শিক্ষার্থী হিফজুল কুরআনের পাশাপাশি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদিত সিলেবাসও শেষ করতে পারে।
আরও জানা গেছে, মাদ্রাসা’য় প্রথাগত পদ্ধতিতে শুধু মুখস্থ বিদ্যা নয় বরং অনুধাবন করার ক্ষমতা সৃষ্টির মাধ্যমে পাঠদান করানো হয়। এখানে শিক্ষকদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুরোপুরি আরবী ও আধুনিক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষা উপকরণ ও কার্যকর পাঠদান করা হয়। পিছিয়ে পড়া ও অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া হয়। পরীক্ষা ভীতি দূর করার জন্য ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নে অভিভাবক-শিক্ষক মতবিনিময় করা হয়। এখানে স্বল্প সময়ে হিফজ সম্পন্ন করানো হয়। হিফজের সাথে সাথে ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসভিত্তিক পড়ানো হচ্ছে। রয়েছে হিফজের সাথে সমাপনী পরীক্ষার ব্যবস্থা।
শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি, মেধা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকাশের জন্য মাদ্রাসাটির বাড়তি উদ্যোগ খুবই প্রশংসার দাবি রাখে। মাদ্রাসাটি আগামী জাতিগঠনের ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখবে। সবাই এই মাদ্রাসাটির জন্য দোয়া করবেন।
বুধবার সকালে জকিগঞ্জ ইউনাইটেড এসোসিয়েশন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুল বাছিত তালুকদার মাদ্রাসা পরিদর্শনে গিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষা উপকরণ ও কার্যকর পাঠদান দেখে প্রসংশা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জকিগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব লায়েক, স্থানীয় ইউপি সদস্য শামীম আহমদ, মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাছিত, সহকারী শিক্ষক খলিলুর রহমান বাবুল আহমদ, সলমান আহমদ।
আপনার মতামত লিখুন :