এনসিপি রাজশাহীর প্রধান সমন্বয়কারীর পদত্যাগ

জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। জেলা কমিটি অনুমোদনের মাত্র আট দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
ইংরেজিতে লেখা পদত্যাগপত্রে রাশেদুল ইসলাম লেখেন, যথাযথ শ্রদ্ধা এবং ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, আমি এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারীর পদ থেকে পদত্যাগ করছি।
তিনি আরও লেখেন, এই দলের ব্যানারে দেশের সেবা করতে পারা আমার জন্য সম্মান ও সৌভাগ্যের বিষয়। জেলা ইউনিটের নেতৃত্বের জন্য আমাকে যে আস্থা ও সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে ব্যক্তিগত কারণেই আমাকে এই মুহুর্তে এই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে।
তিনি এনসিপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে উল্লেখ করেন, রাজশাহীতে দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক বিকাশের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জেলা কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটি গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন কারণে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বিরাজ করছে। জেলা ও মহানগর সমন্বয় কমিটির মধ্যে রয়েছে মতপার্থক্য। এই বিভাজনের কারণে সম্প্রতি রাজশাহীতে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণও ছিল অত্যন্ত কম। জেলা ও মহানগরের ব্যানারে আয়োজন করা হলেও ৪৩ জন পদধারী নেতার মধ্যে ওই কর্মসূচিতে অংশ নেন মাত্র ২৭ জন। এ নিয়ে মহানগর নেতাদের অনুপস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যদিও তারা জেলার সঙ্গে দূরত্ব থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। বুধবার রাতে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় জেলা কমিটির কয়েকজন নেতা বসেন। এই রেস্তোরাঁটির মালিক রাশেদুল ইসলাম। সেখানে তার সামনেই ১ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজু অপর যুগ্ম সমন্বয়কারী ফিরোজ আলমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। 
জানা গেছে, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলে তারা একে অপরকে আক্রমণ করতে থাকেন। বুকে লাথির আঘাতে আহত হয়ে ফিরোজ আলম হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ঘটনার পরদিন শুক্রবার এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি নাহিদুল ইসলাম সাজুকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা তিন দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে এক ভিডিও বার্তায় নাহিদুল ইসলাম সাজু বলেন, জেলা কমিটিতে কিছু বিতর্কিত ব্যক্তি রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তাদের বিষয়ে আমি কথা বলেছি। কিন্তু তা আমলে না নেওয়া শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানির শামিল। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ধুম চলছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এনসিপিকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।
এর আগে রাতে পদত্যাগপত্র পাঠান জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম। পদত্যাগ বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি। গ্রহণ করা হয়েছে কি না জানি না। রাজনীতির মানুষ আমি নই। এত বড় পদ আমার জন্য নয় বলেই মনে হচ্ছে। ব্যক্তিগত কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমি এখনো এনসিপির সঙ্গে আছি এবং দলের মঙ্গলই চাই। 
বুধবার রাতের ঘটনার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাই প্রধান কারণ নয়। তবে ঘটনাটি আমার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুক্রবার রাজশাহীতে এসেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। তিনি বলেন, আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি। রাতেও আলোচনা হবে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। এনসিপির রাজশাহীতে কার্যক্রম আছে, সবাইকে নিয়েই দল এগোবে। পদত্যাগপত্রের বিষয়টি এখনও বিবেচনাধীন।