Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তিতে উলিপুরের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা


দৈনিক পরিবার | স্টাফ রিপোর্টার জুলাই ২০, ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তিতে উলিপুরের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। স্থাপনের পর থেকে সোলার প্যানেলগুলো কোনো কাজে না এলেও সেগুলো এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা। উল্টো পল্লী বিদ্যুতের বিলের কাগজ ধরিয়ে দেওয়ায় শঙ্কিত তারা।
জানা গেছে, ২০২১ সালে ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল সাহেবের আলগা ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের চর ঘুঘুমারি ও সুখেরবাতির চরে ৩৭৫ পরিবারকে সোলার প্যানেল দেওয়া হয়। সেসময় কিস্তিতে সোলারের দাম পরিশোধ করার কথা বলে জনপ্রতি ৫০০-১০০০ টাকা করে নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, টাকা হাতিয়ে নেন তৎকালীন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের সেখানকার নেতাকর্মীরা। কিন্তু সোলারগুলো স্থাপনের পর থেকেই অকেজো হয়ে পড়ে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, কিস্তিতে দাম পরিশোধের কথা বলে সোলার প্যানেল দেওয়া হলেও এর প্রায় আট মাস পর পল্লী বিদ্যুৎ থেকে তাদের বিলের কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয়। যা এ পর্যন্ত ওই বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা। বর্তমানে সোলারগুলো খুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চললেও বিল পরিশোধ না করা হলে মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বাসিন্দারা।
যেসব চরাঞ্চলে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। সেসব চরে বিআরইবি পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে সোলার সরবরাহ করা হয়। সেখানে প্রত্যেক সোলার গ্রাহকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে একটি মাসিক বিল নির্ধারণ করে পল্লী বিদ্যুৎ। সে অনুপাতে এ চরে প্রত্যেক গ্রাহকের দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে।
চর ঘুঘুমারীর রুহুল আমীন, আব্দুর রাজ্জাক প্রামাণিক, আব্দুস সবুর প্রামাণিক, কাশেম আলীসহ একাধিক বাসিন্দারা বলেন, আমাদের চরে বিদ্যুতের লাইন নেই। ২০২১ সালে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সহযোগিতায় দুই চরে ৩৭৫ পরিবারে মাঝে বিভিন্ন পাওয়ারের সোলার দেওয়া হয়। এসব সোলারের মূল্য না কি কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু সোলার স্থাপনের আট-নয় মাস পর গ্রামে পৌঁছানো হয় কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির উলিপুর অফিস থেকে বিলের কাগজ।
বাসিন্দারা আর জানান, এসব সোলার দিয়ে কোনো বাতি জ্বলে না। কারো ব্যাটারি নষ্ট, কারো বা লাইন নষ্ট। এভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে সবার বাড়ির সোলার।
জহুর উদ্দিন নামে আরেক বাসিন্দা আক্ষেপ করে বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কথা শুনে শুরুতে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে ৫০ ওয়াটের সোলার নিয়েছি, যা এক দিনের বেশি বাতি জ্বালাতে পারিনি। সোলারগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও প্রতি মাসে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে বিলের কাগজ দিয়ে যাচ্ছে।
সৌর বিদ্যুৎ পাওয়া সেবারন বেগম (৪১) বলেন, আমার নামে ৫০ ওয়াট সোলার কাগজে কলমে থাকলেও, আমাকে দেওয়া হয়েছে ৩০ ওয়াটের সোলার। যার মাসিক বিল পাঠানো হচ্ছে ৫০ ওয়াটের হিসেব ধরে ৫৮ টাকা। মোট বকেয়া বিল চার হাজার টাকা ধরা হয়েছে। বাতি তো জ্বালাতে পারিনি, কিন্তু চার হাজার টাকা কেন দেবো?
আরেক বাসিন্দা লুৎফর প্রমাণিক বলেন, আমাকে একটা ৩০ ওয়ার্ডের সোলার প্যানেল দেওয়া হয়েছে। যার গড় মাসিক বিল ৪৮ টাকা। ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বকেয়া বিল ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু তখন থেকে একটা বাতি জ্বললেও সেটি এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি চলেনি। কোনোদিন পল্লী বিদ্যুতের লোকও আসেনি। প্রতি মাসে নদীর ঘাটে এসে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে যেত।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উলিপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম বলেন, যারা সোলার রাখতে চাচ্ছেন না তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোলারগুলো খোলা হচ্ছে। তবে যারা রাখতে চান, রাখতে পারেন। প্রতি মাসের বিল সময় মতো দিলে এত টাকা হতো না। নিয়মানুযায়ী তাদের বিল পরিশোধ করতে হবে।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু আপনি বলছেন সেহেতু ওই (উলিপুর) উপজেলায় আমাদের অফিস আছে তারা বিষয়টি দেখবে। আর যদি এমনটা (নষ্ট সোলার) হয়ে থাকে তাহলে গ্রাহকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিলের বিষয়টি মওকুফ করা হবে।

Side banner