Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
চরশিবপুর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ


দৈনিক পরিবার | স্টাফ রিপোর্টার জুলাই ১৫, ২০২৫, ০৩:০০ পিএম প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

২০১৬ সালে বাঞ্ছারামপুর কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন দেলোয়ারা বেগম। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়া জেলায় প্রশিক্ষণের জন্য চলে গেলে দেলোয়ারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন। সংগ্রহ করেন এইচএসসি জাল সনদ। উপর মহলকে ম্যানেজ করে বনে যান স্থায়ী প্রধান শিক্ষক। 
বিষয়টি ইব্রাহিম মাস্টার সাংবাদিকসহ কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। সংবাদ প্রকাশিত হয়। তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু, দেলোয়ারা বেগমের দুই বছরের কারিশমাটিক ম্যানেজের কাছে সবাই হেরে যায়। তদন্তের ফাঁকে দেলোয়ারা বেগম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে গোপনে পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি সার্টিফিকেট অর্জন করে। পরে বদলী হয়ে সরিষার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে আসেন বর্তমান কর্মস্থল ১২৭ নং চরশিবপুর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু, এখানেও তার বিরুদ্ধে নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ উঠে। 
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস আরার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিভাক ও এলাকাবাসী।
প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা বেগমের অনিয়ম ও অসদাচরণের কারণে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বিদ্যালয়ে স্লিপ বরাদ্দ থেকে শুরু করে সরকারি সব বরাদ্দ নামেমাত্র খরচ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক ইচ্ছেমতো ভোগ করে যাচ্ছেন, যা সহকারী শিক্ষকদেরও জানানো হয় না। বিদ্যালয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেন বলে জানান সাবেক কমিটির সদস্যরা।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত বছরগুলোতে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে (এসএমসি) বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মনগড়া মতো বিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। ইচ্ছেমতো বিদ্যালয়ে আসা এবং নিয়ম ভঙ্গ করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের মতো সহকারী শিক্ষকরাও নিয়ম শৃঙ্খলার ধার ধারে নেই। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়মিত না আসার সুযোগে সহকারী শিক্ষকরাও বিদ্যালয়ে ঠিক মতো আসেন না, এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। সকাল ৯টায় স্কুল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ১০টায় গিয়েও বিদ্যালয় বন্ধ থাকতে দেখা যায় এবং বিকেল ৩টার আগেই বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যায়।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান এতটাই নিম্নমানের যে আশপাশের অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষার্থী সংগ্রহে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, এমনকি কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতেও যান না। শিক্ষকগণ শিক্ষার্থী জরিপ করেন না, হোম ভিজিট করেন না। মা সমাবেশ-অভিভাবক সমাবেশ করেন না। ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং করেন না।
উপস্থিতি এত কম কেন জিজ্ঞেস করা হলে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা জানান, আশপাশে মাদ্রাসা থাকায় শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। তবে স্থানীয়দের দাবি, মূলত শিক্ষকদের খামখেয়ালীপনা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে। 
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অর্থ আত্মসাত, দুর্নীতি ও অনিয়মসহ মোট ৭টি খাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা।
লিখিত অভিযোগকারী অভিভাবক ও এলাকাবাসী বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে স্কুলগামী শিশুরা শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত হলেই প্রধান শিক্ষকের সকল দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সকল চিত্র উঠে আসবে।
এই প্রতিবেদকের কাছে অর্থ ব্যয়ের কোনো বিল ভাউচার দেখাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা। বরাদ্দের অর্থ কোথায় এবং কীভাবে খরচ হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো প্রমাণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অভিভাকরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। 
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা বেগম বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি এই বিদ্যালয়ে যোগদান করি। এরপর থেকে বিদ্যালয়ে যত বরাদ্দ এসেছে, সব কাজে ব্যবহার করেছি। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষার মান বৃদ্ধি করেছি। বদলিজনিত একটি বিষয়ে আমাকে হয়রানি করতে কিছু মানুষ মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের কোনো কিছু জানাতে চান না। সরকারি কোনো বরাদ্দ কীভাবে খরচ হয় তাও গোপন রাখেন। তিনি নিয়মিত দেরি করে স্কুলে আসেন, অথচ কেউ কিছু বললেই হঠাৎ ক্ষেপে যান এবং রাগান্বিত হয়ে ওঠেন। তখন স্কুলে কেউ আর কিছু বলতে পারে না। এতে সহকর্মী হয়েও আমরা অনেক সময় অসহায় অবস্থায় পড়ি। তাছাড়া তিনি তার আত্মীয় স্বজন ও গ্রামের জোর দেখান এবং রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে হুমকী দেন।
এদিকে প্রধান শিক্ষকের মেয়ে আইরিন আক্তার একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক, তিনি মনগড়া সবকিছু করেন। তিন-চারদিন পর স্কুলে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া স্কুলে এলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে যান।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০ টায়ও বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক আসেননি। ৪/৫ জন শিক্ষার্থীকে বারান্দায় দেখতে পাওয়া যায়। শ্রেণিকক্ষের দরজা জানালা বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল আজীজকে জানানো হলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। আদতে ওই সময় তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে দেওয়া অভিযোগপত্রে অভিভাবকরা উল্লেখ করেন, প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা বেগম অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। আমার বিষয়গুলো ডিজি, ডিডি, ডিপিও ও জেলা প্রশাসক জানেন। আপনাদের আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস আরা বলেন, অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Side banner