টানা ১২ দিনের তীব্র সংঘাত শেষে বর্তমানে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম ভয়াবহ এক সংঘাত ছিল এটি। সংক্ষিপ্ত এ যুদ্ধে ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় ৯ শতাধিক মানুষ মারা গেছে ইরানের। সেইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানসহ অন্তত ২৪ জন শীর্ষ কমান্ডার ও ১৪ জন পরমাণু বিজ্ঞানীও হারিয়েছে দেশটি।
শুধু তাই নয়, ইরানের কোমর একেবারে ভেঙে দিতে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকেও রাখা হয়েছিল টার্গেটে। সংঘাতকালে পেজেশকিয়ানকে হত্যা করতে অন্তত ৬টি বোমা ছুড়েছিল ইসরায়েল। এমন বাস্তবতায় দখলদারদের ওপর ভরসা করতে পারছে না তেহরান। বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে ইরান।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদে জানিয়েছেন, চলমান যুদ্ধবিরতিতে তেহরানের আস্থা নেই। তাই নতুন কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপের সম্ভাবনা মাথায় রেখে আমরা একাধিক প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা প্রস্তুত রেখেছি।
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াশার গুলারের সঙ্গে সোমবার আলাপচারিতায় ইরানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধ ও অস্থিরতা ছড়াতে চায় না। তবে কেউ যদি আগ্রাসনের পথে হাঁটে, তাহলে ইরান কড়া ও চূড়ান্ত জবাব দিতে প্রস্তুত। আমরা যুদ্ধবিরতিতে আস্থা রাখতে পারি না। তাই সম্ভাব্য আগ্রাসনের প্রতিটি রূপের জন্য আমাদের প্রস্তুত পরিকল্পনা রয়েছে।
জবাবে তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুলার বলেন, আমরা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সন্তুষ্ট। পাশাপাশি মনে করি, পরমাণু আলোচনা এমন একটি যৌক্তিক চুক্তির মাধ্যমে শেষ হওয়া উচিত, যা ইরান ও গোটা অঞ্চলের উপকারে আসবে।
একইদিনে মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ খালিদ নোরদিনের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন জেনারেল নাসিরজাদে। তিনি ইরানের ওপর আরোপিত ‘অন্যায় যুদ্ধ’ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ইরান আমাদের জন্য একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য দেশ। আমরা শুরু থেকেই এই যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেছি এবং স্পষ্টভাবে এর নিন্দা জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল তাদের কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারবে না—এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। ইরান দেখিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের কথাবার্তা কেবল কল্পকাহিনি ছাড়া কিছু নয়। এদিকে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল আব্দুররহিম মুসাভি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো ভুল পদক্ষেপ বা অপকৌশল হলে শক্তিশালী ও কঠোর জবাব দেওয়া হবে। যতদিন আমাদের বীর সৈন্যরা আছে, ততদিন কেউ ইরানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনী কঠোর পরিশ্রম করে নিরবচ্ছিন্নভাবে অস্ত্র উৎপাদন ও প্রস্তুতির কাজে নিয়োজিত রয়েছে, যেন যেকোনো আক্রমণের মুখে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।
মাজিদ মুসাভি বলেন, আমাদের সেনারা সর্বদা প্রস্তুত, ট্রিগারে আঙুল রাখা আছে। শত্রুর যে কোনো উসকানি, ভুল হিসাব বা আগ্রাসনের প্রচেষ্টায় তারা তাৎক্ষণিক জবাব দিতে সক্ষম।
আপনার মতামত লিখুন :