মসজিদে চলছে নামাজ আবার মন্দির চলছে পূজা এ যেনো সম্প্রীতির এক অটুট বন্ধন। নড়াইল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মহিষখোলা এলাকায় একপাশে মসজিদে চলছে নামাজ আদায়, অপরপাশে মন্দিরে চলছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গপূজা। এভাবে যার যার ধর্ম সে সে পালন করছে প্রায় ৪৫ বছর। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
জানা যায়, ১৯৮১ সালে নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা এলাকায় পুরাতন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আর এর কয়েকমাস পরে মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্ডপটি তৈরী করা হয়। সেখান থেকেই এখানে শারদীয় দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ এলাকার মানুষের মাঝে নেই কোন ভেদাভেদ। যার যার ধর্ম সে সে পালন করছেন।
এবছর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে এ বছরের পূজার আনুষ্ঠানিকতা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সব বয়সের লোকজন ধর্মীয় আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে। এ উৎসব চলবে ২ অক্টোবর পর্যন্তু। এবছর জেলায় ৫২৪টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে নড়াইল সদর উপজেলায় ২৩৯টি, লোহাগড়া উপজেলায় ১৪৪টি এবং কালিয়া উপজেলায় ১৪১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্ডপে পূজা দেখতে আসা দর্শনার্থী কলেজ ছাত্রী অনিতা বিশ্বাস বলেন, নড়াইলের মানুষ সব সময় একে অপরের ধর্মের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে থাকে এটিই তার বাস্তব উদাহরন। সম্প্রীতির অটুট বন্ধন না থাকলে একই যায়গায় মসজিদে নামাজ আর মন্দিরে পূজা হতে পারে না। দেখে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো।
মহিষখোলা পুরাতন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস জামে মসজিদের মুসল্লি রফিকুল ইসলাম বলেন, যার যার ধর্ম সে সে পালন করে। নামাজের সময় পূজার গান-বাজনাসহ আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলে আবার শুরু হয়। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কখনও কোন সমস্যা হয়নি।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক (অব:) নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, আমরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করি। মুসলমানরা একপাশে তাদের মসজিদে নামাজ আদায় করে, আর আমরা পাশের মন্ডপে পূজা-অর্চনা করে থাকি। কখনও কারো সাথে ধর্মিয় বিষয় নিয়ে কখনও টুশব্দ হয়নি, আশা করি বাকি জীবনে আর কখনও হবেনা।
নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারন সম্পাদক শুভংকর সরকার টুপাল বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে এখানে হিন্দু-মুসলিম সকলে আমরা একসাথে বসবাস করে আসছি। একই আঙ্গিনায় এখানে একপাশে মসজিদ অন্যা পাশে পূজার মন্ডপ। আমরা যার যার ধর্ম সে সে পালন করে থাকি। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করে থাকি। আমাদের মধ্যে সম্প্রীতির অটুট বন্ধন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ৪৫ বছর ধরে আমরা এ মন্ডপে দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন পূজা করে আসছি। এখন পর্যন্তু কারো সাথে কখনও মনোমালিন্যও হয়নি। যার যার ধর্ম সে সে পালন করছি। আশা করছি আগামীতেও কোন সমস্যা হবে না। তারা আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে।
নড়াইলের মহিষখোলা পুরাতন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা এনামুল হক বলেন, আমরা আমাদের ধর্ম পালন করি, তারা তাদের ধর্ম পালন করে এতে আমাদের কোন সমস্যা হয়না। আমাদের নামাজের সময় পূজার কার্যক্রম বন্ধ রাখে। নামাজ শেষ হলে তারা তাদের পূজা-অর্চনা, গানবাজনাসহ কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। এভাবেই বছরের পর বছর আমরা সবাই মিলেমিশে এখানে বসবাস করে আসছি। ইসলাম কখনও অন্যের ধর্মকে অবমূল্যায়ন করতে শেখায় না। সকল ধর্মকে সম্মান দেখায়।
আপনার মতামত লিখুন :