বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আহত আবদুর রশিদের চিকিৎসার জন্য পরিবারকে লাভ শেয়ার বিডি ইউএস পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসন কনফারেন্স রুমে জাগ্রত তেঁতুলিয়ার আয়োজনে ও লাভ শেয়ার বিডি ইউএস আর্থিক সহায়তা অনুষ্ঠিত হয়।
আর্থিক সহায়তা অনুষ্ঠানে জাগ্রত তেঁতুলিয়ার সমন্বয়ক মো.ফিরদৌস আলম লিটনের সভাপত্তিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ফজলে রাব্বি।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তেতুলিয়া উপজেলা শাখার সমন্বয়ক হযরত আলী, ওবায়দুল হক, উপজেলা ছাত্র দলের সাবেক ছাত্রদল সভাপতি খন্দকার আবু সালেহ ইব্রাহিম ইমরান, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সবুজ আল পায়েল, জাগ্রত তেঁতুলিয়া সংগঠনের সদস্য তহিদুল হক, মোবারক হোসেন, মাসুদ রানা, সোহেল রানা, আহসান হাবীবসহ আরোও অনেকে।
এসময় আরও আবদুর রশিদের ছোট ভাইয়ের উপস্থিতিতে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন তেতুলিয়া ইউএনও মো. ফজলে রাব্বি। এছাড়াও ভবিষ্যতে চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করার আশ্বাস প্রদান করেন।
গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদ বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই মাকে হারিয়ে পারিবারিক ঝামেলা ও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারনে পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ নিতে পারি নি। আমার চিকিৎসার জন্য আমার স্ত্রী আমার কন্যা শিশুকেও বিক্রি করেছিলে। কিন্তু দেশের ভোটার বা নাগরিক না হওয়ায় কোন সহযোগিতা পাই না। আমার শরীরে এখনো চারটা গুলি রয়েছে। পরিচয় না থাকায় সবাই আমার চিকিৎসা করতে ভয় পায়। বিষয়টি ফোনে ইউএনও স্যারকে জানালে, নিজে পরিষদে এসে আমার সব কথা শুনেন। পরে তিনি আমার পরিচয় প্রদানের জন্য সকল ব্যাবস্থা নিজে বসে থেকে করেন এবং আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। মধ্যরাত পর্যন্ত তিনি আমার পাশেই ছিলেন। এই বিপদে স্যার সাহায্য করেছেন, আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি কখনো কল্পনাও করতে পারি নি। সেই সাথে নতুন বাংলাদেশের নাগরিক হতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। যদিও দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমি এখনো দেখতে পারিনি, হাসপাতালের চারদেয়ালের কারণে। আমি চাই দেশটা ভালো চলুক। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি জানান, গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত আব্দুর রশিদের পরিচয়হীনতা, স্বামীর চিকিৎসার জন্য তার স্ত্রীর সন্তান বিক্রির মত মর্মান্তিক এই ঘটনা জানার পর শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক জঞ্জাব মোঃ বাসেত আলী স্যারের নির্দেশনাক্রমে ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ, স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গসহ সকলের সহযোগিতায় কাজটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরো জানান, সরেজমিনে সকল তথ্য সংগ্রহ ও অন্যান্য সকল বিষয়ে বিশেষ সহায়তা করেছে কয়েকজন তরুন উদ্দীপ্ত সমন্বয়ক। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করেই তার নাগরিগত্ব প্রদান করা হয়েছে। তার শরীর এখনো গুলী রয়েছে, এছাড়াও পূর্বের অপারেশন থেকে তিনি এখনো আশংকামুক্ত নন। শারীরিকভাবে সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত তিনি উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন। যদি প্রয়োজন হয়, তবে উদ্ধর্তন নির্দেশনা মোতাবেক আরো উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। সবাই দোয়া করবেন।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগষ্ট দিনাজপুরে বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন আব্দুর রশিদ। তার বক্তব্য অনুযায়ী, হাসপাতালের গেটে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজনের সহায়তায় চিকিৎসা করা হয় তার, কোনরকমে প্রাণে বেচে ফেরেন তিনি। অর্থাভাব ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর বাচ্চা প্রসবের সময় যখন প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে ঠিক তখনই ধীরে ধীরে তার শারীরীক অবস্থান অবনতি বাড়তে থাকে। ৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি এবং সেখানে পরদিন শুক্রবার তার অপারেশন হয়। অপরদিকেতার পরদিন (শনিবার) রাজবাড়ী এলাকার বাড়ীতে আব্দুস রশিদের স্ত্রী রোকেয়া বেগম নীরবে নির্ভৃতে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বা বৈধ পরিচয় সম্পর্কিত কোন ধরনের কাগজপত্র না থাকায় এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় তার চিকিৎসা জটিল এবং মর্মান্তিক এই পরিস্থিতিতে অসহায় গরীব এই দিনমজুরের স্ত্রী স্বামীর জীবন বাঁচানোর তাগিদে বাধ্য হয়ে রংপুরের এক দম্পতির কাছে মাত্র ২৫ হাজার টাকায় শিশুকে বিক্রি করে দেনা সেই টাকায় আবার শুরু হয় চিকিৎসা শুরু হলেও আবারো বৈধ পরিচয়হীনতার জটিলায় বন্ধ হয়ে যায় তার চিকিৎসা। ঘটনাটি জানাজানি হলে, দ্রুততার সাথে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিক্রি করে দেয়া সন্তান ফেরত পেয়েছেন আব্দুর রশিদের অভাগী স্ত্রী।
আপনার মতামত লিখুন :