বাংলাদেশে আলোচিত পর্ণ তারকা যুগল আজিম ও বৃষ্টিকে বান্দরবান থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। রবিবার (১৯ অক্টোবর) দিবাগত গভীর রাতে শহরের রোয়াংছড়ি বাস স্টেশন সংলগ্ন হাজী পাড়া এলাকার ৬ তলা ভবনের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ব্যবসার কথা বলে বান্দরবানে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন সেই পর্ন তারকা যুগল।
জানা গেছে, গত ১৫ দিন আগে তারা বান্দরবান এসে ফল ব্যবসা করার কথা বলে ওই এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। এরপর থেকে তারা ওই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। এলাকায় তাদের সঙ্গে কারও পরিচয় ছিল না। জরুরি কাজ ছাড়া তারা বাসা থেকে তেমন একটা বের ও হতেন না। সম্প্রতি তারা আলোচনায় আসার পর রবিবার ঢাকার সিআইডির একটি দল বান্দরবান জেলা পুলিশের সহায়তায় রোযাংছড়ি বাস স্টেশন এলাকার সেই বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।
বৃষ্টি ও আজিম মাত্র ২৮ বছর বয়সেই পৌঁছে গেছেন বিশ্বের শীর্ষ পর্ন তারকাদের কাতাওে আর সেই কাজ করেছেন বাংলাদেশেই বসে। দেশের ভেতর থেকেই তারা গড়ে তুলেছিলেন একটি আন্তর্জাতিক পর্ন নেটওয়ার্ক, যা সম্প্রতি ফাঁস করেছে অনুসন্ধানী প্ল্যাটফর্ম ‘দ্য ডিসেন্ট’।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৭ মে প্রথম এডাল্ট ভিডিও আপলোড করেন বৃষ্টি ও আজিম। এরপর ১৭ মাসে তারা তৈরি করেন মোট ১১২টি কনটেন্ট, যা ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিশ্বের জনপ্রিয় পর্ন ওয়েবসাইটগুলোতে। এক বছরেই তাদের ভিডিওর ভিউ সংখ্যা ছাড়ায় ২৬৭ মিলিয়ন।
আরও অবাক করা তথ্য হলো এই পুরো সময় জুড়েই তারা বাংলাদেশে থেকেই এসব ভিডিও ধারণ করেছেন।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বৃষ্টি নিজেকে পরিচয় দিতেন “বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান মডেল” হিসেবে। বর্তমানে তিনি বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে অস্টম স্থানে রয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়। তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যায় বিলাসবহুল জীবনের নানা চিত্র নগদ টাকার স্তূপ, দামি গাড়ি ও মোটরবাইক, গাঁজা সেবনের দৃশ্য এবং নিজেদের ভিডিওর প্রচারমূলক পোস্ট। কেবল নিজেরাই ভিডিও বানানোতেই থেমে থাকেননি তারা।
দ্য ডিসেন্টের অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫৫ ডলার “ফ্রি ইনসেনটিভ” দেখিয়ে তারা তরুণ তরুণীদের টানতেন পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে। একপ্রকার রিক্রুটমেন্ট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন এই যুগল। এমনকি ২০২৪ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা প্রায় ১৫ হাজার মার্কিন ডলার আয় করেন বলে দাবি করেছে সূত্রটি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, ওই নারী মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা। তবে ওই ঠিকানায় গেলে দেখা যায়, সেটি তার প্রথম স্বামীর বাড়ি, যিনি পেশায় একজন জেলে। তার শ্বশুর নিশ্চিত করেন যে, তিনি তার পুত্রবধূ ছিলেন।
তিনি বলেন, একদিন সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, আট বছর হয়ে গেছে, আর ফিরে আসেনি।
জানা গেছে, ওই নারীর বাবার বাড়ি একই উপজেলার ভিন্ন একটি গ্রামে। তার ভাষায়, আমরা গত এক বছর ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখিনি। আমি তাকে ত্যাজ্য করেছি।
অন্যদিকে পুরুষ সদস্যটির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বিষয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সে অন্ধকার জগতের মানুষ। ওর কারণে আমাদের গ্রামের নাম খারাপ হচ্ছে।
পেশায় অটোরিকশা চালক মো. ফারুক নামে এক প্রতিবেশি বলেন, তার পুরো পরিবার বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা অপরাধী পরিবার বলে এলাকায় পরিচিত।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মফিজ বলেন, তার বাবা এক সময় রিকশা চালাতেন, কিন্তু এখন তাদের আচরণ দেখে মনে হয় যেন তারা কোটি টাকার মালিক।
অবশেষে দীর্ঘ তদন্ত ও নজরদারির পর ২০ অক্টোবর বান্দরবানে বিশেষ অভিযানে সিআইডি গ্রেপ্তার করে এই আলোচিত যুগলকে। অভিযানকালে উদ্ধার করা হয় ক্যামেরা, লাইট, মোবাইল, মেমোরি কার্ড এবং বিদেশি ওয়েবসাইটের লগইন তথ্য।
সিআইডির মিডিয়া বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার জসিমউদ্দিন খান জানান, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা প্রক্রিয়াধীন।
তবে প্রশ্ন থেকে গেছে একটি যুগল কীভাবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে বাংলাদেশ থেকেই চালিয়ে গেল এমন আন্তর্জাতিক পর্ন নেটওয়ার্ক? এই কর্মকাণ্ডের পেছনে কি আরও বড় কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে? তদন্ত এগোচ্ছে সেই দিকেই।








































আপনার মতামত লিখুন :