ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফারুক মিয়ার (ইনডেস্ক নং ২০১৩৫৩৯) বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষকের সীমাহিন অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগে তার অপসারণের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া প্রধান শিক্ষক ফারুক মিয়ার নানা অপকর্ম তুলে ধরে তাকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য আবেদনও করা হয়েছিল।
২০২২ সালের ২৯ মে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর অভিযোগ করেছিলেন তৎকালিন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আবুল। ওই অভিযোগে প্রধান শিক্ষক ফারুকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল।
গত ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে ক্লাস বর্জন করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় চালু থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষার্থীরা। পরে বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের নানা দুর্নীতির বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে স্লোগান দেয়।
মো. মজিবুর রহমান নামে জনৈক ব্যক্তি ৬৮ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সহ ফারুক মিয়ার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ প্রদান করেন। তারপরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন ফারুক মিয়া। আর সেই কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক সহ জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নানাভাবে বিতর্কিত ফরদাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক মিয়া ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১ হাজার টাকার পে অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট আবেদনের সাথে জমা দেয়ার কথা থাকলেও যথাযথভাবে প্রদান করেননি। ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি বোর্ড কর্তৃক স্কুল কমিটি অনুমোদিত হয়। ওই কমিটি অনুমোদনের পর কমিটির মাধ্যমে কোন বিল ভাউচার অনুমোদন বা স্বাক্ষর করেননি। বারবার তাগাদা দিলেও কোন হিসাব দেননি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই ধরাকে সরাজ্ঞান করতেন।
ফরদাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কাঠ বাজার আছে। এখান থেকে প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকার উপর আয় হয়। ওই টাকার কোন হিসেব নেই। পুরোটাই আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে ভাগ করে লুটেপুটে খেতেন প্রধান শিক্ষক ফারুক মিয়া, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
ফরদাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক মিয়ার সর্বমোট বেতন ৪৫ হাজার ৩শত ৩৪ টাকা। এই টাকার মধ্যে স্কুল থেকে ১২ হাজার ১শত এবং সরকারিভাবে ৩৩ হাজার ২শত ৩৪ টাকা বেতন পেতেন। অথচ গ্রামের বাড়ি গঙ্গানগরে কোটি টাকা খরচ করে তিনি বাড়ি করেছেন। বর্তমানে ফরদাবাদ স্কুলের শিক্ষার্থী প্রায় ১৩শত। উপজেলার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই স্কুলের শিক্ষার মান খুবই নিম্নমানের। চাকুরির কারণে তিনি সরাসরি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় কোন পদে না থাকলেও রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচিতেই তার সরব উপস্থিতি ছিল। আর সেই কারণে শিক্ষার মান উন্নয়নে উল্লেখ করার মতো কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। ফলে প্রতিবছর এসএসসির রেজাল্টের পর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এলাকাবাসী বারবার তার অপসারণ দাবি করলেও একশ্রেণীর আওয়ামী লীগ নেতাদের ম্যানেজ করেই বহাল তবিয়বে থাকেন। যারফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আজ নানা প্রশ্নের মুখে।
একসময় বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফরদাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার গুণগত মান এবং ফলাফলে উপজেলার শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। অথচ আজকের চিত্র ভিন্ন। আর সেই কারণেই স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবক সহ এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফারুক মিয়া, বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি এবং হিসাবরক্ষকের অপসারণ দাবি করছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত শিক্ষকদের অবহেলার কারণে বিগত সময়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪ জন উপবৃত্তির টাকা পেয়েছিল। তাছাড়া নিরাপদ পানির জন্য সরকারি বরাদ্দের ৩ লক্ষ টাকাও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালীপনা, রাজনীতি ও লুটপাটের কারণে স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থাই আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ১টা ১৫ মিনিটে কথা হয় প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফারুক মিয়ার সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে মিটিংয়ে আছেন, পরে কথা বলবেন।
ফরদাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকার সচেতন মহল শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, দুদক, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির হৃত গৌরব ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :