Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোনভাবেই চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়া যাবে না: গয়েশ্বর


দৈনিক পরিবার | নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৫, ২০২৫, ০৬:২৫ পিএম কোনভাবেই চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়া যাবে না: গয়েশ্বর

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, এই মুহূর্তে দেশ ও বন্দর বাঁচানো গুরুত্বপূর্ণ। দেশি লোকদের দিয়ে যদি বন্দর চালানো না যায় তাহলে বিদেশ থেকে আমরা এক্সপার্ট আনতে পারি। যেমনটি গার্মেন্টস শিল্প উন্নয়নে বিদেশ থেকে সহযোগিতা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনভাবে চট্টগ্রাম বন্দর কোনভাবেই বিদেশিদের দেওয়া যাবে না।  
রবিবার (২৪ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেওয়া ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলন নামে একটি সংগঠন।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর একটি লাভজনক এবং প্রাকৃতিক বন্দর। সেটা কোনোভাবেই বিদেশিদের দেওয়া যাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দেশে তো দুর্নীতি কমেনি বরং বেড়েছে। কারণ হাসিনার আমলের ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনো রয়ে গেছে। এই সরকার তো দুর্নীতি রোধে হাত দেননি। কত জনকে ধরা হয়েছে? ধরার উদ্যোগ নেয়নি, এমনকি বিচারও করেনি।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে মানুষ বলাবলি করছেন, ড. ইউনূসের যত সুবিধা নেওয়া দরকার তাই নেবেন। 
শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ৩১ দফা নিয়ে আন্দোলনে আছি। মাঝখানে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ছাত্ররাও আসেন। অর্থাৎ সংস্কার নিয়ে আমরা তো একমত আছি। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো তো একমত। তাদেরকে ডেকে পরামর্শ নিয়ে সংস্কারের পথ ত্বরান্বিত করেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে দেশ বাঁচাতে গিয়ে সবাই গণতন্ত্রের প্রশ্নে একমত। আমরা চাই ড. ইউনূস সফল হোক। তিনি সফল মানে তো জুলাই অভ্যুত্থানের সফলতা।
ছাত্রদের প্রতিদিন সচিবালয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে গয়েশ্বর বলেন, তারা কেন থানার ওসির টেবিলের সামনে বসে থাকে? আমাদেরকে অন্য কিছু মনে করবেন না। তবে, আমরা লড়াই করা জাতি। গণতন্ত্র, জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার আগে যেন ঈশ্বর আমার ম্তৃ্যু না দেয়।
মোস্তফা জামাল হায়দার সরকারের সমালোচনা করে বলেন, নয় মাসে একজনেরও বিচার হয়নি। তারা চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি- সেটি বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দরকার হলে দেশের মেধাবী কর্মকর্তা দিয়ে বন্দর পরিচালনা করুন। আমরা আমাদের অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রকে কারও কাছে দেব না।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। আপনারা দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। উপদেষ্টারা একের পর এক বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক করছেন।
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, ১৩৮ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দর চালু হয়েছে। পিতার চাকরি সূত্রে আমার জন্ম চট্টগ্রাম বন্দরে। চট্টগ্রাম বন্দর একটি প্রাকৃতিক বন্দর। সেটি জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ জাহাজ ভেড়াতে জোয়ার-ভাটার দরকার হয়। সেখানে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও কলম্বো থেকে ফিডার জাহাজে ১ হাজার থেকে আড়াই হাজার কন্টেইনার সম্বলিত জাহাজ ভিড়ে।
চট্রগ্রাম বন্দরে একটি বাঁক থাকার কারণে ১৯০ মিটারের বেশি বড় জাহাজ ভেড়ানো যায় না বলে উল্লেখ করে সেলিম বলেন, বিশ্বের কোনো শক্তি এসে সেখানে এর চেয়ে বড় জাহাজ ভেড়াতে পারবে না। বরং আমরা নতুনভাবে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কথা বলছি। যাতে বন্দর সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে না যায়।
বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্লডকে দিলে তারা নিজের মতো করে ট্যারিফ নির্ধারণ করবে বলে দাবি করেন সেলিম। তিনি বলেন, বন্দর নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা ও জাতির স্বার্থ দেখতে হবে। আজকে জিটুজি পদ্ধতিতে বন্দর দেওয়ার চিন্তা করছে। আবার পিপিপি পদ্ধতিতে দেওয়ার কথা বলছেন। মনে রাখতে হবে ২০২১ কিংবা ২০২২ সালের দিকে শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের জামাই যখন দুবাই কারাগারে আটক তখন সালমান এফ রহমান একটা টার্মিনাল বের করে ডিপি ওয়ার্লডকে দেওয়ার জন্য। তখনও আমরা বিরোধিতা করেছি। আবারও সেই একটি কোম্পানিকে সাবের হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে দেওয়ার কথা শুনছি।
চট্টগ্রাম বন্দর এমনিতেই আয়বর্ধক প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করে সেলিম বলেন, সেখানে ২ হাজারের মতো শ্রমিক কর্মচারী নিয়োজিত। মাত্র দুই ঈদে ৮ ঘণ্টা করে ১৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। বন্দরের ট্যারিফের বিভিন্ন ভাগ আছে। ডিপি ওয়ার্লডকে দিলে তারা নিজের মতো ট্যারিফ নির্ধারণ করবে। বর্তমানে বন্দর ১০০ ডলার আয় করলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয় ৮ থেকে ৯ ডলার এবং সেটি বাংলাদেশি টাকা। আর ডিপি ওয়ার্লডকে দিলে তাদেরকে বৈদেশিক মুদ্রায় এর চেয়ে দ্বিগুণ/তিনগুণ দিতে হবে। ডিপি ওয়ার্লড তো কোনো গভর্নমেন্ট না। চট্টগ্রাম বন্দরও কোনও গভর্নমেন্ট না। তাহলে জিটুজি কিভাবে হবে?
সেলিম বলেন, বন্দরের ব্যবস্থাপনা নিয়ে তো ব্যবসায়ীরা কোনো কথা বলেনি। তাহলে সেটি কেনো বিদেশি কোম্পানিকে দিতে হবে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে যাতে চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দেওয়া না হয়।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, যে কোনো বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উত্তম। বাংলাদেশের যে সম্পদ তা খুব সীমিত। বঙ্গোপসাগর এবং চট্টগ্রাম বন্দর অন্যতম। ফলে, দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্দর দেওয়ার বিষয়ে গণশুনানি করুন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করুন। কারণ আপনারা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, আগামীতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকার চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত না এলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।
বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, আমজনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান প্রমুখ।

Side banner