বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের নতুন খতিব খতিব নিযুক্ত হয়েছেন ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ ও হাদিস বিশারদ আল্লামা মুফতি আবদুল মালেক। হাদিসশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি বাংলাদেশসহ পুরো মুসলিম বিশ্বে সুপরিচিত।
তিনি আব্দুর রশীদ নোমানীর কাছে তিন বছর উচ্চতর হাদিসশাস্ত্র এবং আলেম তাকি উসমানির কাছে দুই বছর ফিকহশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছেন। পরবর্তীতে সৌদি আরবে আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর সাথে আড়াই বছর হাদিসশাস্ত্রে গবেষণামূলক কাজ করেন।
১৯৯৮ সালে তার রচিত আল মাদখাল ইলা উলুমিল হাদিসিশ শরিফ প্রকাশিত হয়, যা বিভিন্ন দেশে পাঠ্যবই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার সহ প্রতিষ্ঠাতা, বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসচিব ও উচ্চতর হাদিস বিভাগের প্রধান। এই প্রতিষ্ঠানের মুখপত্র হিসেবে ২০০৫ সালে তার তত্ত্বাবধানে মাসিক আল কাউসার প্রকাশিত হয়। ২০১২ সালে তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের সদস্য মনোনীত হন। এছাড়াও তিনি ভারতের ইসলামি ফিকহ একাডেমির সদস্য।
মুফতি আবদুল মালেক ১৯৬৯ সালের ২৯ আগস্ট কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার সারাশপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার বাবা শামসুল হক একজন আলেম ছিলেন।
পরিবারে কুরআন ও প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর তিনি চাঁদপুরের খিড়িহারা কওমি মাদ্রাসায় মিশকাত জামাত পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি পাকিস্তানের জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি এই মাদ্রাসার উচ্চতর হাদিস বিভাগে ভর্তি হয়ে তিন বছর আব্দুর রশীদ নোমানীর তত্ত্বাবধানে হাদিস অধ্যয়ন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি দারুল উলুম করাচিতে ভর্তি হয়ে দুই বছর তাকি উসমানির তত্ত্বাবধানে উচ্চতর ফিকহ ও ফতোয়া অধ্যয়ন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সৌদি আরব গমন করে আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর তত্ত্বাবধানে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর হাদিসশাস্ত্রসহ অন্যান্য গবেষণামূলক কাজের গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯৬ সালে তিনি সহ আরও কয়েকজন আলেম ঢাকায় উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসচিব ও উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া ঢাকার শায়খুল হাদিস হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ২০১২ সালে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠিত হলে তিনি এর সদস্য মনোনীত হন। ২০১৯ সালে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা উপকমিটির প্রধান মনোনীত হন।
২০০৫ সালে মুফতি আব্দুল মালেকের তত্ত্বাবধানে মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মুখপত্র হিসেবে মাসিক আলকাউসার প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকায় ইসলাম ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখা প্রকাশিত হয়। আরবি ও বাংলায় তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: আল মাদখাল ইলা উলুমিল হাদিসিশ শরিফ, উম্মাহর ঐক্য পথ ও পন্থা, আল ওয়াজিজ ফি শাইয়ি মিন মুসত্বলাহিল হাদিসিশ শরিফ, মুহাদারাত ফি উলুমুল হাদিস, ইনায়াতুর রহমান ফি আদাদি আয় আল কুরআন, তাসাওউফ তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ, তালিবানে ইলম পথ ও পাথেয়, ঈমান সবার আগে, প্রচলিত ভুল, তাবলীগ জামাত: বর্তমান পরিস্থিতি ও উত্তরণের উপায়, ইত্যাদি।
মাওলানা আব্দুল মালেক শুধু বাংলাদেশেই বরেণ্য নন, তার পরিচয় ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো মুসলিম বিশ্বেই। ভারত, পাকিস্তান, ও আরবের অনেক প্রখ্যাত আলেম তার যোগ্যতার স্বীকৃতি দিয়েছেন, তার প্রশংসা করেছেন। সিরিয়ার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আওয়ামা (রহ.) মাওলানা আব্দুল মালেককে ‘মুহাক্কিক আলেম’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সিরিয়ার আরেকজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.) তার সম্পর্কে বলেন, তিনি দাবি করেন, আমার কাছ থেকে তিনি উপকৃত হয়েছেন। অথচ আমি দেখি তার থেকে আমিই অনেক উপকৃত হয়েছি। সে তার অনেক উস্তাদের থেকেও এগিয়ে যাবে। সেই উস্তাদদের মধ্যে আমি হব প্রথমজন।
ভারতের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা সাঈদ আহমদ পালনপুরী (রহ.) তার কিতাব ‘আল-মাদখাল’ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর বিশেষ তওফিকপ্রাপ্ত ও ইলমব্যস্ত এই উস্তাদ ও শায়খের কিতাব আমাকে বিমোহিত ও বিস্মিত করেছে।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের মধ্যে জামিয়া হাটহাজারির প্রয়াত মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী (রহ.) ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার প্রয়াত মুহতামিম নুর হুসাইন কাসেমীও (রহ.) তাকে ‘বাংলাদেশের গৌরব ও সৌভাগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :