Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সৃষ্টিশীল আরিশার অধরা স্বপ্ন


দৈনিক পরিবার | তামিম আশরাফ মে ৮, ২০২৪, ০৪:২৪ পিএম সৃষ্টিশীল আরিশার অধরা স্বপ্ন

ব্যঞ্জনবর্ণ লিখতে দেওয়া পেন্সিল দিয়ে লেখা রেখে আঁকতেন চিত্র। ফলস্বরূপ শুনতেন মাতার বকুনি। তবুও লুকিয়ে আড়ালে চট করে এক দেখাতেই অঙ্কন করে ফেলতেন যেকোনো কিছুর  হুবহু চিত্র। চিত্রাংকন যার নেশা। বলছি মাদারীপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিশা হক মুনার কথা। শান্ত স্বভাবের আরিশা সবসময় এড়িয়ে চলেন জনসমাগম। মনে ধরেছে তার ভিনসেন্ট ভ্যান গনের প্যারিসের মতো শহর ছেঁড়ে চলে যাওয়া গ্রামেটাকে। কিন্তু মনের সব চাহনি তো পূরণ হবার নয়। তাইতো বিসর্জন দিতে হলো মেয়েবেলা হতে লালিত স্বপ্ন ‘চিত্রশিল্পী’ হওয়া।
কর কর্মকর্তা বাবা ওবায়দুল হক ভূইয়া ও গৃহিণী মায়ের চার কন্যার মধ্যে আরিশা তৃতীয়। বেড়ে ওঠা মাদারীপুর শহরতলী পাকদী গ্রামে। মায়ের হাতেই পড়াশোনার হাতেখড়ি। প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন পাকদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এসময় স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া বিভিন্ন চিত্র অংকন প্রতিযোগিতায় বরাবরই রেখেছেন মেধার স্বাক্ষর। তার এই মেধার জন্য ছিলেন ক্লাসের সকলের প্রিয়। সহপাঠীদের আবদার রাখতে গিয়ে প্রতিদিন আঁকতেন একাধিক ছবি। ফলস্বরূপ দিনে দিনে তার কোমল হাত হয়ে ওঠে নিখুঁত পটুত্ব।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ ভর্তি হন মাদারীপুর শহরের কেন্দ্র অবস্থিত ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। লোককথায় আছে গুণীর কদর সর্বত্র। যার উপকৃষ্ট উদাহরণ আরিশা। মাধ্যমিক স্কুলে পর্দাপনের সাথে সাথে তার জুটে যায় একগুচ্ছ বন্ধু। দিনে দিনে হয়ে ওঠেন শিক্ষকদের মধ্যমনি। সকলের উৎসাহ উদ্দীপনায় তার লালিত স্বপ্ন বড় হতে থাকে। আরিশা পরিচিত হতে থাকেন বিশ্ব খ্যাতনামা চিত্র কর্মের সাথে আর তাদের স্রষ্টাদের সাথে। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, পাবলে পিকাসো, ভিনসেন্ট ভ্যান গগন, বাংলার জয়নুল আবেদীন, হাশেম খান, এসএম সুলতানের মতো জগৎ বিখ্যাত শিল্পীদের সাথে। স্বপ্ন দেখেন তাদের ওই জায়গায় নিজেকে। মাধ্যমিক স্কুলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আবশ্যক বিষয় ছিলো চারুকলা সাবজেক্ট। ফলস্বরূপ এসময় তার চিত্র অংকন পূর্বের তুলনায় বেড়ে যায়। তাই এ সময়টাকে সে জীবনের স্বর্ণালী সময় বলে আখ্যায়িত করেন। জুনিয়র স্কুলে শেষে যখন ভর্তি হন নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে। এসময় একাডেমিক পড়াশোনার চাপের কারণে চিত্র অঙ্কনে বিঘ্ন ঘটে। তবুও হাল ছাড়েননি, চলেছেন নিজের লালিত স্বপ্ন নিয়ে। দিন পরিক্রমায় স্বপ্নবাজ এই তরুণী কৃতিত্বের সাথে শেষ করেন তার মাধ্যমিক জীবন।
পরবর্তীতে ভর্তি হন মাদারীপুর সরকারি কলেজে। কলেজ জীবন কেবলমাত্র শুরু। এরই মাঝে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরে পুরো পৃথিবী জুড়ে। লকডাউনে অন্য সাধারণ মানুষের মতো আরিশা হয়ে পরেন গৃহবন্দী। কাটতে থাকে অলস সময়। এই সময়টা সবার জন্য অভিশাপ হলেও আরিশা ভাবতে থাকেন আশীর্বাদ। কেননা এ পুরোটা সময় জুড়ি সে ব্যস্ত থাকতেন চিত্র অংকন নিয়ে। নিজের চিত্রকর্মের সাথে বাড়ে স্বপ্নের পরিধি। সময়ের পরিক্রমায় ২০২১ তার শেষ হয় উচ্চমাধ্যমিক। ইতিপূর্বে জানতে পারেন প্রতিষ্ঠানিক ভাবে রয়েছে তার সৃজনশীল সৃষ্টিকর্ম বিকাশের সুযোগ। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহীশহ দেশের প্রায় সকল প্রথম শাড়ির বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে চারুকলা বিভাগ। সেখানকার শিক্ষার্থীদের মূল কাজ হচ্ছে শিল্পকর্মের চর্চা করা। যা জানার পরে উদ্দীপনা বেড়ে যায় বহুগুণ। তাই নিতে থাকেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে উচ্চমাধ্যমিকে ফলাফল ঘোষণা হয় যেখানে সে মেধার স্বাক্ষর রাখেন।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) উত্তির্ন হলেও রাখা হয় ওয়েটিং লিস্টে, তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আসে সুর্বণ সুযোগ। সেখানে চান্স পেয়ে আরিশা স্থির করেন পড়বেন তার স্বপ্নের চারুকলা বিভাগে। হবেন পৃথিবী খ্যাত চিত্রশিল্পী। কিন্তু আসে বিপত্তি। এতোদিন পারিবারিক ভাবে পিতামাতা তার এই চিত্রকর্ম চর্চাকে ভালোভাবে না নিলেও এইবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আরিশাকে পড়তে দিবেনা চারুকলায়। আঁকতে দিবেনা নতুন কোন শিল্প কর্ম। পিতামাতার ধারণা যে সন্তান চিত্রকর্মের সাথে যুক্ত তার হায়াৎ সংকুচিত হয়। এভাবেই অংকুরে বিনষ্ট হয়ে যায় সম্ভাবণাময় এই খুদে চিত্রশিল্পী। তবে এখনো লালন করছেন তার সেই অধরা স্বপ্ন ‘চিত্রশিল্পী’ হওয়া।
তামিম আশরাফ
শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

Side banner