নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের কাছিকাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছে প্রকৃতির আশ্চর্য সৃষ্টি ১৩ মাথাওয়ালা নারকেল গাছ। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন এক ঝাঁক গাছ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। তবে কাছে গেলেই বোঝা যায় এটি আসলে একক কাণ্ড থেকে জন্ম নেওয়া ১৩টি মাথাওয়ালা একটি গাছ। স্থানীয়দের কাছে এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘কুদরতি নিদর্শন’ হিসেবে।
বিরল এই গাছটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন আশপাশের গ্রামের মানুষ। এমনকি দূরদূরান্ত থেকেও আসছেন কৌতূহলী দর্শনার্থীরা। কেউ গাছটির মাথা গুনছেন, কেউ আবার মোবাইল ফোনে ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিস্ময়ের গল্প।
শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাছটির এক সময় মাথা ছিল ১৪টি, বর্তমানে ১৩টি মাথা সবুজ ও সতেজ রয়েছে। প্রতিটি মাথায় ঘন পাতার বিন্যাস এমনভাবে ছড়ানো যে দেখে মনে হয় প্রকৃতি নিজেই যেন এক শিল্পকর্ম এঁকেছে।
কাছিকাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম বলেন, গাছটির বয়স প্রায় ২৫ থেকে ২৬ বছর। লাগানোর পর কয়েক বছর যেতে না যেতেই গাছটির কাণ্ডে একাধিক মাথা গজাতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে মাথার সংখ্যা বেড়েছে, আবার কিছু শুকিয়েও গেছে। বর্তমানে ১৩টি টিকে আছে। কলেজের পক্ষ থেকে নিয়মিত সার ও ওষুধ দিয়ে পরিচর্যা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমার জীবনে এমন গাছ আর দেখিনি। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে এই গাছ দেখতে, বিস্মিত হয়। এটি নিঃসন্দেহে প্রকৃতির এক অনন্য রূপ।
স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল আহমেদ বলেন, একটি নারিকেল গাছের অনেকগুলো মাথা, এরকম গাছ আর অন্য কোথাও নেই। এটি আল্লাহর ‘কুদরতি নিদর্শন’। বর্তমানে গাছের ১৪টি মাথা আছে, যার ১৩ টি সতেজ। এর আগে আরও মাথা ছিল। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ গাছটি দেখতে আসে এটি আমাদের জন্য সত্যিই অনেক গর্বের বিষয়।
গাছটি ঘিরে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও রয়েছে উচ্ছ্বাস। কাছিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম জানান, নারিকেল গাছের ১৪টি মাথা দেখতে অনেক মানুষ তাদের স্কুলে আসে। গাছটি দেখে সবাই খুঁশি হয়, বিষয়টি তাদেরও ভালো লাগে।
গাছটি দেখতে আসা পাবনার চাটমোহর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকার মকবুল হোসেন (৬০) বলেন, সকালে পার্শ্ববর্তী চাচকৈড় বাজারে কাজে এসে শুনি এখানে একটি বহুমাথার নারিকেল গাছ আছে। পরে গাছটির দেখার জন্য এখানে এসে দেখি গাছটির ১৪টি মাথা। আরও অনেক দর্শক এটি দেখতে আসছে। এটি ‘আল্লাহর কুদরতি নিদর্শন’ ছাড়া কিছুই না।
এলাকাবাসীর দাবি, এই বিরল নারিকেল গাছটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করলে এটি স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে। এতে একদিকে যেমন বাড়বে এলাকার পরিচিতি, তেমনি দর্শনার্ধীরা প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে. এম. রাফিউল ইসলাম বলেন, একটি নারকেল গাছের যে ১৩-১৪টি মাথা বেরিয়েছে এটি সাধারণত হয় না। এটি একটি বিরল ঘটনা। জেনেটিক কারণে এটি হয়েছে। গাছের কারণে এটি গুরুদাসপুর এলাকার একটি দর্শনার্থী প্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। এই গাছের সঠিক পরিচর্যা ও সার ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এর পরিচর্যা নেবেন। গাছটির সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এটি যেন ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য আরও দর্শনীয় করা যায় সে ব্যপারে কৃষি অফিস সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।








































আপনার মতামত লিখুন :