মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শতবর্ষী নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সোমবার সংঘবদ্ধভাবে মব সৃষ্টি করে হামলা চালানো হয়। এসময় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুনীর হোসেনকে (মনির) মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। আহত শিক্ষককে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল মান্নানের পক্ষের লোকজন, শিক্ষক প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সাইমন, যুবদল নেতা মিরান হত্যা মামলার পলাতক আসামি মহব্বত, নাকোল ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি রবিউল ইসলাম, সানরাইজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও আ.লীগ নেতা মঞ্জুরুল ইসলাম, যুবলীগ কর্মী কুতুবউদ্দিন লাভলুসহ আরও অনেকে। স্থানীয় কিশোর গ্যাং ও মাদক ব্যবসায়ীরাও এ হামলায় অংশ নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হামলার সময় নাকোল পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই মালেক ও আরও দুই পুলিশ সদস্য শিক্ষক মনিরকে রক্ষার চেষ্টা করেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুবর্ণা জামান ও লিপি বেগম অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা শুধু প্রধান শিক্ষক নয়, ক্লাস টেনের শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালায়। এতে পরীক্ষা ভন্ডুল হয়ে যায়। তাদের দাবি, শিক্ষার্থীদেরও পরিকল্পিতভাবে উসকে দেওয়া হয়েছিল।
অফিসকক্ষ ভাঙচুর করে ল্যাপটপ, ক্রীড়া সামগ্রী ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট করা হয়। পরে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জোর করে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
বিদ্যালয়ের সভাপতি শিপন মির্জা বলেন, বিদ্যালয়ে চলমান চার কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত ঠেকাতেই এ হামলা হয়েছে। প্রভাবশালীরা মিলে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস চালিয়েছে। এর দায় কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মিল্টন বলেন, আমরা সামনে থেকে দেখেছি, দুই শতাধিক লোক প্রধান শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছে। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের ঠেকাতে পারেনি। এটি সাধারণ মারামারি নয়, সরাসরি হত্যাচেষ্টা।
হামলার শিকার প্রধান শিক্ষক মুনীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে। প্রথমে গালাগালি করা হয়, পরে চেয়ার দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। আমি আইনের কাছে ন্যায়বিচার চাই।
নাকোল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহব্বত অবশ্য দাবি করেন, শিক্ষার্থীরাই মূলত পরীক্ষার হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। আমরা শুধু ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বর্তমানে বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, জুলাই মাসে এক নিরীক্ষায় প্রাক্তন ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক এবং প্রাক্তন সভাপতির বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ২০২৪ সালের আগস্টে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :