কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউপি’র হোসেনাবাদ ছমিলপাড়া এলাকায় বিশ্ববরেণ্য বাউল শিল্পী ফকির শফি মন্ডলের ৩য় খেলাফত দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৪ঘন্টার এই সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠান।
“মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি” ফকিল লালন সাঁইয়ের এই আধ্যাত্মিক বাণীকে প্রতিপাদ্য করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভক্তি সংগীত ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ২৪ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর রাতে বসে বাউল সাধক লালন সাঁইয়ের গান, বাণী ও দর্শনের আসর।
সাধুসঙ্গে যোগ দিতে দেশ ও বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য বাউল, ফকির ও ভক্তজন আশ্রমে সমবেত হয়েছেন। সাধুসঙ্গকে ঘিরে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে আধ্যাত্মিক ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশ।
ফকির শফিল মন্ডলের খেলাফত দিবসকে ঘিরে হোসেনাবাদ হিসনা নদীর পাড়ে অবস্থিত ফকির শফি মন্ডলের, সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম প্রাঙ্গণ এখন বাউল সাধু ভক্ত ও দর্শনার্থীতে পূর্ণ রয়েছে। সাধুসঙ্গ উপলক্ষে সেখানে বসেছে গ্রামীণ মেলা। মেলায় স্থানীয় কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, গ্রামীণ খেলনা ও লোকজ পণ্যের পাশাপাশি নানা ধরনের খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা ফকির শন্ডিলের ভক্ত সাব্বির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গুরুর প্রতিটি খেলাফত দিবসে আমি এখানে আসি। মূলত এখানে গুরু শিষ্যের ভাব বিনিময়ের একটি আসর বসে। সবার সাথে দেখা হয়, ভালো লাগে।
মেলার দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, তারা দুই দিন আগেই দোকান বসিয়েছেন। প্রতি বছর এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের সমাগম হয়। মেলায় উপস্থিত ব্যবসায়ীরাও বলেন, বেচাকেনা ভালো হচ্ছে এবং উৎসবের আমেজে তারা আনন্দও উপভোগ করছে।
সাধুসঙ্গের আয়োজক কমিটির সদস্য ও ফকির শফি মন্ডলের বড় মেয়ে ফারজানা ববি লিনা এবং জামাতা মুকুল হোসেন জানান, ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তবৃন্দ এসেছেন। অনেকে রাতেই পৌঁছাবেন। সন্ধ্যায় ভক্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে, বুধবার সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে বলে তারা জানান।
এদিকে, সাধুসঙ্গ ও সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ মেলার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দৌলতপুর থানা পুলিশ।
দৌলতপুর থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, মেলার এলাকা ও আশেপাশে আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসছেন, তাই যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সেই দিক বিবেচনায় পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ফকির শফি মন্ডল বিশ্ববরেণ্য বাউল ও সুফি সংগীতশিল্পী। তিনি ১৯৫২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আহাদ আলী মন্ডল ছিলেন মসজিদের ঈমাম। ছোটবেলা থেকেই সংগীতে আগ্রহী ছিলেন শফি মন্ডল। ১৯৭৯ সালে ভারতের সাধন মুখার্জির কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম নেন এবং পরে ফকির সুলতান শাহের দীক্ষা নিয়ে লালন সাঁইয়ের পথ অনুসরণ করেন।
১৯৯৫ সালে তার প্রথম এ্যালবাম প্রকাশিত হয় এবং ১৯৯৮ সালে লালনের দেশে নামে এ্যালবামের গানে তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। বর্তমানে তিনি তরুণদের বাউল সংগীত শিক্ষা দিচ্ছেন এবং দেশ বিদেশে লালন দর্শন প্রচারে নিবেদিত রয়েছেন। তারকাখ্যাতি পাওয়া সংগীত শিল্পী সালমাসহ দেশের অনেক খ্যাতিমান শিল্পী তাঁর শিষ্য। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর তিনি খিলাফত গ্রহণ করেন।








































আপনার মতামত লিখুন :