Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সৌখিন মৎসচাষী তুহিন এখন এলাকাবাসীর দৃষ্টান্ত


দৈনিক পরিবার | কবীর হোসেন জানুয়ারি ২১, ২০২৪, ০৮:২৯ পিএম সৌখিন মৎসচাষী তুহিন এখন এলাকাবাসীর দৃষ্টান্ত

চার বছর আগে পতিত জমিতে শখের বসেই মাছের ঘের গড়ে তুলেছিলেন। এরপর যেনো আলাদীনের চেরাগের মতোই তা স্বপ্ন পূরণের সারথি হয়ে উঠে। চার বছর পরে আজ সেই মাছের ঘের যেনো এক বিশাল মৎস্য সাম্রাজ্য। প্রায় ২২ একর জমির উপর ছোট বড় মিলিয়ে সাতটি মাছের এই ঘের থেকে এবছর লাভ মিলেছে ১৯ লাখ টাকা। সাফল্যের এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আলফাডাঙ্গার বিদ্যাধর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা তাজমিন উর রহমান তুহিন। এই সৌখিন মৎস্য খামারির সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার অন্যান্যরা। তারাও এখন ভাগ্য ফেরাতে মৎস্য চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
মধুমতি নদীর ওপাড়ে নড়াইল জেলা আর এপাড়ে ফরিদপুরের একেবারে শেষ সীমান্তে আলফাডাঙ্গা উপজেলা। সীমান্তবর্তী এই জনপদের মানুষের বড় অবলম্বন কৃষি। তবে বর্ষার পানি নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় বেশিরভাগ জমিই এক ফসলি। দরিদ্র বর্গাদার কৃষকের বেশিরভাগই এজন্য বছরের বেশিরভাগ সময় কিষাণ দিয়ে বা রিকশা ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। জমির মালিকেরাও কৃষিতে তেমন লাভের মুখ দেখতে পান না। এ অবস্থায় স্থানীয় যুবক তাজমিন উর রহমান তুহিন বিকল্প পন্থা হিসেবে এক ফসলি জমিতে গড়ে তুলেন মাছের ঘের। পড়াশুনা শেষ করে ঢাকায় একটি গার্মেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি অনেকটা শখের বসেই চার বছর আগে গড়ে তুলেন হযরত শাহ্ জালাল মৎস্য এন্ড ডেইরি ফার্ম। এখান থেকে তিনি ধারণারও অতীত লাভের মুখ দেখছেন। তার এই উদ্যোগ আমিষের ঘাটতি মেটাতে সহায়ক ভুমিকা রাখছে পাশাপাশি কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করেছে। মাছের ঘেরের পাশেই তিনি করছেন সব্জির আবাদ। এছাড়া গরুর খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট গড়ে তুলেছেন। সব মিলিয়ে একটি বহুমুখি কৃষি খামারে রূপ নিয়েছে তার শখের উদ্যোগ। তুহিন বলেন, এই জমিগুলো ছিলো নিচু, এক ফসলি জমি। এখানে কৃষিকাজ করে লাভবান হতাম না। কৃষকেরাও জমি লীজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তখন আমি আধুনিক পদ্ধতিতে কি করতে পারি সেই চিন্তা থেকে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে জমি খনন করে মাছের ঘের করি। আর ঘেরের চারপাশে উঁচু জমিতে কলা পেঁপে, সিম, বেগুন সহ নানান সবজি লাগাই। ফলজ গাছও রোপণ করি। এখন এখানে ছোট বড় মিলিয়ে সাতটি বড় ঘের রয়েছে। দেশী প্রজাতির রুই, মৃগেল, কাতল, পুঁটি ও গ্লাসকাপ জাতীয় মাছের চাষ হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য দপ্তরের সহায়তা করছে এ কাজে।
এতে খুবই লাভবান হচ্ছেন জানিয়ে তুহিন বলেন, গত অর্থবছরে এ থেকে তার প্রায় ১৯ লাখ টাকা আয় হয়েছে। তা থেকে সরকারি খাতে ৫৭ হাজার টাকার উৎস কর দিয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে আমিষের ঘাটতি মিটিয়ে যাতে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন সেটিই তার লক্ষ্য বলে জানান।
মাছের ঘেরের সাফল্যের পর তাজমিন উর রহমান তার বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট। নতুন করে আরো দুটি ঘের বাড়ানোরও উদ্যোগ নিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন এই ঘের হওয়ায় তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। তার দেখাদেখি অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন মাছের চাষে।
পাশের মালা গ্রামের তাইজুল ইসলাম টিটন বলেন, আমি তার এই উদ্যোগ দেখে উদ্বুদ্ধ হই। এরপর পাঁচ একর জমিতে মাছের ঘের করি। পাশাপাশি পাড় দিয়ে সবজি লাগাই। এবছর আমি এক লাখ টাকার শুধু লাউ বিক্রি করেছি। আর মাছ বিক্রি করেছি ১১ লাখ টাকার।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সৈয়দ শরিফুল ইসলাম বলেন, এই জমিতে একসময় কিছুই হতোনা বললেই চলে। তবে এখন এই ঘের করায় যেমন এর মালিকেরা লাভবান হচ্ছেন, তেমনি গ্রামবাসীও উপকৃত হচ্ছেন। এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। অনেকে বিনামূল্যে মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছে। তিনি তাজমিন উর রহমানের নানা সমাজকল্যাণ কাজের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, এই ঘেরের মুনাফার বেশিরভাগ তিনি গ্রামের মানুষের সাহায্যে ব্যয় করেন। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তিনি খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে একজন ক্ষতিগ্রস্ত বৃদ্ধাকে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। পথচারীদের বিশ্রামের জন্য বিশ্রামাগার করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম লুৎফর রহমান বলেন, তানজিম উর রহমান তুহিন প্রায় ২২ একর জমির উপরে যে মাছের ঘের গড়ে তুলেছেন, সেটি খ্বুই ভালো একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। আমরা নতুনভাবে যারা মৎস্য চাষের প্রশিক্ষণ নিতে আসেন তাদেরকে সেখানে নিয়ে সরেজমিনে প্রশিক্ষণ দেই। তিনি একজন সফল মৎস্যচাষী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। আমরা তাকে সবধরনের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা করছি।

Side banner