Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২

চিকিৎসায় নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী


দৈনিক পরিবার | আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০৫:১১ পিএম চিকিৎসায় নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী

চিকিৎসাবিদ্যায় অনবদ্য অবদান রাখায় চলতি বছর যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের তিন চিকিৎসাবিজ্ঞানী। সোমবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় সুইডেনের স্টকহোম থেকে ২০২৫ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট।
চিকিৎসায় এ বছরের নোবেল বিজয়ীরা হলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক মেরি ই. ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড রামসডেল এবং জাপানের শিমন সাকাগুচি। পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স নিয়ে গবেষণার জন্য চলতি বছর তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট বলেছে, মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমের কাজ হলো শরীরকে জীবাণু ও ভাইরাসের মতো বাইরের হুমকি থেকে রক্ষা করা। তবে কখনও কখনও এই ব্যবস্থা ভুলবশত শরীরের নিজস্ব টিস্যুকেই আক্রমণ করে বসে; যার ফলে দেখা দেয় অটোইমিউন রোগ।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা মানবদেহের ‘সেন্ট্রাল টলারেন্স’ বা কেন্দ্রীয় সহনশীলতার ধারণার ওপর গবেষণা করে আসছিলেন। এতে টি-সেল নামের এক ধরনের প্রতিরোধক কোষ থাইমাসে গঠিত হওয়ার সময়ই শরীরের নিজস্ব উপাদানের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালেও পরে তা ধ্বংস হয়ে যায়।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ওলে কাম্পে বলেছেন, মানবদেহের সব সেলফ-রিঅ্যাক্টিভ টি-সেল থাইমাসে ধ্বংস হয় না; কিছু কোষ রক্তে থেকে যায়। এই কোষগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য শরীরের বাইরে (থাইমাসের বাইরের অংশে) আরও একটি প্রক্রিয়া কাজ করে; সেটিকে পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স বলা হয়।
চলতি বছরের নোবেলজয়ী তিন বিজ্ঞানী এই প্রক্রিয়ার মূল রহস্য উদঘাটন করেছেন। গবেষণায় তারা দেখেছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখে বিশেষ এক ধরনের কোষ; যাকে রেগুলেটরি টি-সেল (Treg) বলা হয়। এসব কোষের বিকাশ ও কার্যক্রম নির্ভর করে ফক্সপিথ্রি (FOXP3) নামের একটি জিনের ওপর।
শিমন সাকাগুচি ১৯৯০-এর দশকে প্রথম প্রমাণ করেন, মানবদেহে এমন একটি রেগুলেটরি টি-সেল আছে, যা শরীরের নিজস্ব টিস্যুর বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় আক্রমণ রোধ করে। পরে মেরি ই. ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র‌্যামসডেল ইঁদুর ও মানুষের শরীরে ফক্সপিথ্রি (FOXP3) জিনের ত্রুটি শনাক্ত করেন; যা এই টি-সেলের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।
গবেষণায় তারা দেখান, ফক্সপিথ্রি (FOXP3) জিনই এসব কোষের বিকাশের মূল নিয়ন্ত্রক এবং এটি পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্সের ভিত্তি তৈরি করে। এই আবিষ্কারের ফলে এখন বিজ্ঞানীরা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন, কীভাবে মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, কেন এই প্রক্রিয়া ভেঙে গেলে অটোইমিউন রোগ দেখা দেয় এবং কীভাবে ক্যানসার কোষ কখনও কখনও এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ইমিউন সিস্টেমের আক্রমণ থেকে বেঁচে যায়।
চিকিৎসাশাস্ত্রের এই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীরা ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট থেকে একটি মেডেল, সনদপত্র এবং ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা পাবেন।
এর আগে, গত বছর চিকিৎসাশাস্ত্রে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুনকে। মাইক্রো আরএনএ আবিষ্কার এবং পোস্ট ট্রান্সক্রিপশন জিন নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখায় তাদের ওই পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রতিবছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল ঘোষণা করে সুইডেনের স্টোকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট। আগামীকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় পদার্থবিজ্ঞানের নোবেলবিজয়ীদের নাম ঘোষণা করবে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স।
১৯০১ সাল থেকে দেওয়া হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার নোবেল। এ পুরস্কারটির নামকরণ করা হয়েছে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নাম অনুসারে। ঊনবিংশ শতকের এই বিজ্ঞানী শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিনামাইট আবিষ্কার করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছিলেন।
তিনি উইল করে গিয়েছিলেন যে তার যাবতীয় অর্থ থেকে যেন প্রতি বছর পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্য এই ৫টি খাতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই পুরস্কারের নামকরণ হবে তার নামে। ১৯৬৯ সাল থেকে এই ৫ বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনীতিও।

Side banner