খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি হত্যা মামলায় বিশ্বাস প্রোপার্টিজের স্বত্বাধিকারী ও পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আজগার আলী তারা বিশ্বাসসহ আরো দুই জনকে পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান তামান্নার আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানায়। আদালত শুনানি শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে ৫ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ ও মামলা সুত্রে জানা গেছে, খুলনার ডুমুরিয়ায় ৮নং শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি (৬জুলাই) শনিবার রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী শায়লা ইরিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে রোববার রাতে ডুমুরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপরেই চলছে অভিযান। যাতে অংশ নিয়েছেন পুলিশসহ প্রশাসনের একাধিক টীম। মুলতঃ কি কারণে এবং কেন খুন হলেন চেয়ারম্যান রবি। কিলিং মিশনে কে কে ছিল। হত্যাকান্ডের সমস্ত মোটিভ উদ্ধারে কাজ করছেন তারা। এ পর্যন্ত আজগর বিশ্বাস তারাসহ পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৪জন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিশ্বাস প্রোইটিজের মালিক আজগর বিশ্বাস তারা'সহ তার এক সহযোগীর নাম শোনা গেছে। এছাড়া গুটুদিয়া এলাকার আছে ২ জন।
স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান রবি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর রায়ের মহলের মোস্তফার মোড় এলাকায় বিশ্বাস প্রোপার্টিজের অফিসে অভিযান চালায়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আজগর আলী (তারা বিশ্বাস) বিশ্বাসকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে। আটকের পর তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে, তারা বিশ্বাসের আটকের পর ডুমুরিয়া থানা পুলিশ দীর্ঘ তিন ঘণ্টা তারা বিশ্বাসের মালিকানাধীন বিশ্বাস প্রোপার্টিজের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে একটি শটগান, একটি খেলনা পিস্তল, একটি রিভলবার সদৃশ লাইটার, ৫৭ রাউন্ড কার্তজ ও ৯ রাউন্ড কার্তুজের খোসা জব্দ করেছে। এরআগে রোববার বিকালে এ মামলায় গুটুদিয়া গ্রামের বাবু সরদার ও পলাশ সানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া, সোমবার রাতে বরিশাল থেকে এ হ'ত্যা মামলায় সরাফপুর ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী এইচ.এম.উবাঈদ উল্লাহকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত কুমার সাহা বলেন, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এ মামলার তদন্ত করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কিছু আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে আদালতে হাজির করলে একটু আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। খুলনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডে ক্লু সম্পর্কিত কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তবে তথ্য উদঘাটনের জোর চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে পরে জানানো হবে। মামলায় কতজনকে আসামি করা হয়েছে এবং হত্যার কারণ কী উল্লেখ করা হয়েছে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডুমুরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) শাহীনুর রহমান। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, হত্যাকান্ডে ক্লু সম্পর্কিত কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তবে তথ্য উদ্ঘাটনের জোর চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে পরে জানানো হবে।
এদিকে, রবিউল ইসলাম রবি হত্যার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন মন্ত্রী, মেয়র, সাংসদ এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, রবিউল ইসলাম রবি দলের একজন পরীক্ষিত কর্মী। তিনি তিনবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিকে হত্যা করে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এটা কারো কাম্য নয়। শুধু এটাই না যে কোন হত্যাকান্ডই ঘৃণিত। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু প্রত্যাশা করে। নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি চক্র সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে দেশকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। তারই ধারাবাহিকতায় রবিকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা বা ষড়যন্ত্রকারীরা যে-ই হোক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আর যেন কেউ সাধারণ মানুষকে হত্যার করার দু:সাহস না পায় সে বিষয়ে প্রশাসনকে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রবির মত আর যেন কারো প্রাণ দিতে না হয় সেদিকে কঠিন সতর্কতা অবলম্বের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী।
রবি হত্যার সাথে জড়িত প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রদানের আহবান জানিয়ে অনুরুপ বিবৃতি দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী ও ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাত পৌঁনে ১০টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ওয়াপদার মোড় নামকস্থানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রবিউল ইসলাম রবি (৪৬) নিহত হন। ওইদিন তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সন্ধ্যায় তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের শহিদ জোবায়েদ আলী মিলনায়তনে উপজেলা আ’লীগের বর্ধিত সভা শেষে মোটরসাইকেলে একা খুলনার নিরালা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের গুটুদিয়া ওয়াপদার মোড় নামক স্থানে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে পেছন দিক থেকে বেশ কয়েকটি গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় তার পিঠে পাঁচটি গুলি বিদ্ধ হয়ে রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন। গুলির শব্দ শুনে পরে স্থানীয় লোকজন তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাত সোয়া ১০টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :