Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

‘চেতনা’ ব্যবসা দিয়ে আর পলিটিকস চলবে না: ব্যারিস্টার ফুয়াদ


দৈনিক পরিবার | নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০৬:২১ পিএম ‘চেতনা’ ব্যবসা দিয়ে আর পলিটিকস চলবে না: ব্যারিস্টার ফুয়াদ

ডাকসু নির্বাচন আগামী দিনের রাজনীতির একটি ‘গ্রামার’ সবার হাতে তুলে দিয়েছে মন্তব্য করে আমার বাংলাদেশ-এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, ’৭১ ব্যবসা, ’২৪ ব্যবসা, চেতনার ব্যবসা দিয়ে আপনি পলিটিকস করতে পারবেন না, আমরাও পারবো না। পলিটিকসে স্বচ্ছ হতে হবে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বরিশাল প্রেসক্লাবের হলরুমে এবি পার্টি আয়োজিত ‘বরিশালের উন্নয়ন ও সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং’-এ দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জনআকাঙ্খাকে যদি আমরা রিড করতে না পারি, সময়কে যদি রিড করতে না পারি, ১৯৯১ অথবা ২০০১-এর মানদণ্ড দিয়ে যদি ২০২৫ সালকে পড়বার চেষ্টা করি, তাহলে সেটা আমাদের জন্য ভুল হবে। ডাকসু নির্বাচনটা কিন্তু আগামী দিনের রাজনীতির একটি ‘নির্বাচনী গ্রামার’ আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। আমরা যেন কেউই ৯১, ৯৬, ২০০১-এর ম্যাট্রিক্স দিয়ে না মাপি। মাপলে সবাই ভুল করবো। কারণ এটাই (ডাকসু) একটি নতুন ম্যাট্রিক্স আগামী দিনের রাজনীতির।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে যেভাবে ইসলামপন্থিদের বিজয়, জামায়াত-শিবিরের বিজয়, জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের উত্থান, দক্ষিণপন্থিদের উত্থান হিসেবে পড়ার চেষ্টা হচ্ছে—এভাবে পড়ার গ্রামারটাকে আসলে আমি মনে করি তরুণদের বুঝতে না পারার সমস্যা। গণঅভ্যুত্থানকে আওয়ামী লীগ যেভাবে বুঝতে পারছে না, ডাকসু নির্বাচনকেও বিএনপিসহ অনেক বুদ্ধিজীবী, বাম বলয়ের লোকেরাও বুঝতে পারছে না।
‘নির্বাচন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ছাড়া ইনক্লুসিভ হবে না—এই বক্তব্য যারা দিচ্ছে, ডাকসু নির্বাচন সেটিকে অলরেডি ভুল প্রমাণিত করেছে। শুধু জগন্নাথ হলের ভোটের গ্রামারটা পড়লেই বোঝা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের বাইরে দল ও প্রার্থী এ দেশে রয়েছে এবং তারা জামায়াত-শিবিরে ভোট দেবে না। আর এমন জায়গায় ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করে জামায়াত-শিবিরের প্যানেল ভোট পেয়েছে—এটা খুবই রং রিডিং হবে। ’
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, অনেকগুলো ‘দেবো না ভোট’ দিন শেষে গিয়ে শিবিরের প্যানেলে জমা হয়েছে, অর্থাৎ ভোটগুলো শিবিরের না। শিবিরকেও মাথায় রাখতে হবে—এত খুশি হওয়ার কিছু নেই।
‘ট্যাগিং’ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তুমিও জানো, আমিও জানি সাদিক কায়েম পাকিস্তানি’— এই স্লোগান দেওয়া হয়েছে ঢাবি ক্যাম্পাসে, কিন্তু ছেলেমেয়েরা যারা ২৪-এর আন্দোলন করেছে তারা সবাই সাদিক কায়েমকে চেনে। ওরা একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। হঠাৎ করে এই ছেলেটাকে ‘পাকিস্তানি’ বলায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। আবার এস এম ফরহাদ ছেলেটা পরিচিত ছিল না; ওর প্রার্থিতা বাতিলে হঠাৎ করে এক সপ্তাহ আগে একটি রিট করা হয়, যা করে ওকে জাতীয়ভাবে পরিচিত করে দেওয়া হয়েছে। সে কিন্তু ফেভারিট ক্যান্ডিডেট ছিল না। তারপর বাম বলয়সহ কিছু বিষয় নিয়ে কিছু জাতীয় পত্রিকা ডেলিভারিটলি কিছু অজনপ্রিয় প্রার্থীকে নিয়ে প্রথম পাতায় কালারফুল তিন কলাম, চার কলামের নিউজ করে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে তাকে অলরেডি ভিপি বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ সে ব্যাপক ভোটে হেরেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ছোট জায়গায় সাড়ে ৬শ’ সাংবাদিক ডাকসু নির্বাচন কাভার করেছে উল্লেখ করে ফুয়াদ বলেন, এখানে চুরি করবেন কোথায়? প্রত্যেক বুথে সিসি ক্যামেরা ছিল, এলইডিতে লম্বা করে কাগজে-কাগজে ভোট গণনা হয়েছে সারা রাত। আপনি চাইলেও ৮০-এর দশকের দুই নাম্বারি রাজনীতি— ‘ভোট জালিয়াতি হয়েছে, কেন্দ্র দখল হয়ে গেছে’—এইরকম গুজব ছড়িয়ে দিলেন আর সেটা সবাই মেনে নেবে, এটা কিন্তু বাস্তবে হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ছাত্রী হলে ছাত্রদলের ভিপি ঢুকছে, তার প্রতিবাদ মেয়েরাই করছে। সেখানে ভোট জালিয়াতির কথা তোলা হলে পাল্টা বলা হয়েছে, ‘আপনার প্যানেলের মেয়েরা এখানে কেন আসলো না?’— এমন প্রশ্ন উঠেছে।
তিনি বলেন, দুই নাম্বারি চক্করের পলিটিকস এখন আর চলবে না। এটা আমাদের সবার জন্য লেসন। যে যেই দলের রাজনীতি করি, ন্যূনতম স্বচ্ছতা, ভদ্রতা, সততা যদি না থাকে, আগামী দিনে ঠিকাদারির রাজনীতি দিয়ে করতে পারবেন না। ঠিকাদারির পলিটিকস ইজ ডেথ। ৭১ ব্যবসা, ২৪ ব্যবসা, চেতনা ব্যবসা কেনা-বেচা দিয়ে আপনি পলিটিকস করতে পারবেন না, আমরাও পারবো না। পলিটিকসে স্বচ্ছ হতে হবে এখন আপনাকে। যে ভদ্র, বিনয়ী, কাজে স্বচ্ছতা আছে, কথা কাজে মিল আছে, যাকে দেখে মানুষ মনে করে তার কাজে লাগবে, তাকে মানুষ দল-মত ছাড়া ভোট দেবে। মার্কা দেখে, দল দেখে ভোট তরুণরা আর দেবে না এখন।
তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন ফেয়ার হয়েছে—এটা আমাদের কনক্লুশন; এখানে কোনো ইসলামপন্থীর বিজয় হয়নি। এটার মধ্য দিয়ে জামায়াত-শিবির আগামী দিনে দেশে অনেক বড় ইসলাম কায়েম করে ফেলবে—এটার সম্ভাবনা দেখছি না।
‘দেশ কিন্তু শান্ত হয়নি; আমরা কিন্তু এখনো ভলকানোর ওপরে বাস করছি। কেউ যদি মনে করেন ফেব্রুয়ারির (নির্বাচনের) পরে দেশ সুইজারল্যান্ড হয়ে যাবে, একদম জান্নাতি পরিবেশ বিরাজ করবে মোটেই তা হবে না। যে কোনো সময় এখানে আবার নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, জর্জিয়া ফিরে আসতে পারে। সব রাজনৈতিক দলকে মনে রাখতে হবে: তরুণরা পলিটিক্যালি অনেক কনশাস (সচেতন), প্রচণ্ড রকম প্রিপেয়ার্ড রাস্তায় নেমে আসার জন্য। তাদের খাসলতকে যদি আপনারা ট্যাগ দেন, ‘পাকিস্তানি’ বানান, ‘মৌলবাদী’ বানান—এই রাজনীতি পরাজিত হয়ে গেছে; এটা জিতবে না। তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে তাদের জায়গা থেকে বুঝি এবং সম্মান করি। তাদের আকাঙ্ক্ষায় অসম্মান করলে সামগ্রিকভাবে আমরা সবাই হেরে যাবো’, যোগ করেন ফুয়াদ।

Side banner