Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২
সরকারি টাকা গচ্ছা

বসানোর ৬ বছরে একদিনও ব্যবহার হয়নি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন


দৈনিক পরিবার | স্টাফ রিপোর্টার সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:৪২ পিএম বসানোর ৬ বছরে একদিনও ব্যবহার হয়নি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন

প্রায় ৬ বছর আগের কথা, মাদারীপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিতে বসানো হয়েছিল ডিজিটাল হাজিরা মেশিন। কিন্তু এরপর একে ছয় বছর পার হলেও একদিনও ব্যবহার হয়নি সেগুলো। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা জানিয়েছেন, মেশিন বসালেও দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ। এতে আজও মেশিনগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকাটির সরকারি প্রাথমিক  স্কুলগুলোর শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে। ওই সময়ে অনেকটা চাপের মুখে স্কুলগুলোতে হাজিরা মেশিন বসানো হয়। প্রতিটি মেশিনে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়। তবে মেশিন বসিয়েই দায় সারে কর্তৃপক্ষ। মেশিন বসানোর ৬ বছর পার হলেও দেওয়া হয়নি ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সংযোগ। পুরো লাখ লাখ টাক গচ্ছা গেছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল।
যেসব স্কুলে হাজিরা মেশিন বসানো হয়েছে সেগুলোর একটি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে ৩৬২ শিক্ষার্থীর বিপরীতে কর্মরত আছেন ৮ শিক্ষক। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এখানকার শ্রেণীকক্ষে বসানো হয় ডিজিটাল হাজিরা মেশিন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি যন্ত্রটি।
পৌর এলাকার রিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই চিত্র। শিক্ষকদের উপস্থিতি নথিভুক্ত করার জন্য বসানো হলেও বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় অলস পড়ে রয়েছে মেশিনটি। একই অবস্থা ১৭৫ নম্বর কলাবাড়ি, ১০১ নম্বর দত্ত কেন্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের। তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরো প্রকল্পই ভেস্তে যাওয়ার পথে। অথচ বিদ্যালয়ের উন্নয়নের বরাদ্দ থেকে শিক্ষকদের বাধ্য করা হয়েছিল ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচে এসব যন্ত্র কেনায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার ২০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ হাজার ১৩০ জন শিক্ষকের জন্য কেনা হয়েছিল এসব মেশিন। একেকটির জন্য খরচ হয়েছে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা। মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪০ জন। কিন্তু কোম্পানি মেশিন বসানোর পর আর কোনো খোঁজ নেয়নি, ফলে প্রতিটি যন্ত্র এখন কার্যত অচল।
রিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার বলেন, ভালো উদ্দেশ্যে মেশিন বসানো হয়েছিল। কিন্তু একটিও কখনো ব্যবহার হয়নি। 
চরমুগরিয়া ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান, আমাদের কর্তৃপক্ষের চাপেই মেশিনগুলো কিনতে হয়েছিল। শুরু থেকেই এগুলো অকার্যকর। কোম্পানি বসালেও পরবর্তীতে আর সফটওয়্যারের সংযোগ দেয়া হয়নি। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সরকারি অর্থ লুটপাটের জন্যই এই প্রকল্প করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে লাখ লাখ টাকা অপচয় হয়েছে। আমরা আমাদের দেয়া টাকা ফেরত চাই এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দাবি করছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ মুহাম্মদ ইমারত হোসেন বলেন, মেশিনগুলো কেন ব্যবহার হচ্ছে না, সেটা আমার জানা নেই। কোথায় এগুলো মনিটরিং করার কথা তাও জানি না। আমি নতুন এসেছি, পুরনো নথি না দেখে কিছু বলতে পারবো না।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, যন্ত্র কেনায় কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে। শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত করতে এগুলো কেনা হয়েছিল। উদ্যোগটি আবার চালু করার বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Side banner