সংসদীয় আসন ৮৬, যশোর-২ চৌগাছা-ঝিকরগাছা এ দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। সংসদীয় এই আসনের মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সংসদীয় এই আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদ প্রার্থীরা তাদের নেতৃত্বের মধ্যেকার সৃষ্ট দ্বিধাদ্বন্দ্ব, বিভক্তি-বিভাজনের পথে হাটছে। দলের অভ্যন্তরে দু’ধারায় বিভক্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে যেন শীতলস্নায়ু যুদ্ধ চলছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যেকার সৃষ্ট এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব, বিভক্তি-বিভাজন কোন মতেই মেনে নিতে পারছেন না দলের তৃণমূল পর্যায়ের সর্বস্তরের নেতাকর্মী। তারা বলছেন, অবিলম্বে আলোচনার এক টেবিলে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বসানো গেলে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দল। এদিকে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক এই দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া ঝিকরগাছা উপজেলা ও পৌর জামায়াতে ইসলামী। দলটির নেতাকর্মীরা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নির্বাচনী কৌশল মাথায় রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোর কদমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভোটার সমর্থকদের পাল্লা ভারী করতে নানা প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, এই আসনটি তাদের। কারণ হিসেবে তারা আত্মপ্রত্যয়ের সাথে জানান ১৯৮৬ ও ২০০১’র জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রার্থী মকবুল হোসাইন ও মহাদ্দিস আবু সাঈদ ,মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। তারা মনে করেন এবারও তাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
এমতাবস্থায় বিএনপি দলীয় তৃণমূল ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলের নেতৃত্বের মধ্যেকার দ্বিধা বিভক্তি কোন মতেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা অবিলম্বে বিরোধ নিষ্পত্তি করে শক্তিশালী ঐক্যের উপর জোর দিয়েছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের মতামত এ প্রতিবেদককে জ্ঞাপন করেন।
সাবিরা নাজমুল: সাবিরা নাজমুল উপজেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতি শহীদ নাজমুল ইসলামের সহধর্মিনী ও সাবেক ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি সংসদীয় এই আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি মনে করেন, বিএনপির রাজনীতিতে শহীদ নাজমুল ইসলামের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও নিজেসহ পরিবারের সদস্যদের কারানির্যাতনসহ দলীয় অবদানের স্বীকৃতি স্বরপ ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন পাবেন।প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আওয়ামী দুঃশাসন-অপশাসন, জুলুম-নির্যাতন ও চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেও উপজেলা নির্বাচনে বিপুল ভোটে দেশের একমাত্র প্রথম নারী চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলাম। সেই প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নারীদের জীবন-মানোন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও আস্থা অর্জনের মাধ্যমে জনমানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই। তিনি দলের ভেতর কোন দ্বিধা-বিভক্তি-বিভাজন নেই দাবি করে এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ব্যক্তির মত ও চিন্তার পার্থক্য থাকতে পারে। দলীয় কার্যালয়টি তার আগের অবস্থানেই রয়েছে।এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি’র ধানের শীষের পক্ষে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যশোরের ছয়টি আসনের মধ্যে আমরা চৌগাছা-ঝিকরগাছা আসনে সর্বাধিক ভোটে বিজয়ী হব-ইনশাল্লাহ।
মোর্তজা এলাহি টিপু: ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থাকা জেল-জুলুমের শিকার ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপি’র জেষ্ঠ্য নেতা মর্তুজা এলাহি টিপু বলেন, আমরা দেশ ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি। দলের মধ্যে কোন বিভক্তি বিভাজন নেই দাবি করে এই নেতা বলেন, ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে রাজপথে থেকেছি-এখনো আছি। ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বলেন তিনি।
তিনি বলেন দলের বহু সংখ্যক নেতাকর্মী জেল-জুলুম, হামলা, মামলা নির্যাতনের শিকার হলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আমরা ঝিকরগাছায় কোন প্রকার প্রতিহিংসা পরায়ণ কিংবা সংঘাত-সহিংসতা হতে দেয়নি। আগামী নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবে এমন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই নেতা বলেন।
ইমরান হাসান সামাদ নিপুন: উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চৌগাছা-ঝিকরগাছা সংসদীয় আসনের ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট ইমরান হাসান সামাদ নিপুন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ৩১দফার রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের আলোকে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে কৃষি শিক্ষা স্বাস্থ্য ভৌতঅবকাঠামো নির্মাণসহ ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন। তাঁর দলের মধ্যেকার নেতৃত্বে বিভক্তি-বিভাজনের বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, দলের মধ্যে কোন বিভক্তি-বিভাজন নেই। কিছু ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। আলোচনার টেবিলে অচিরেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সর্বস্তরের নেতাকর্মী, ভোটার-সমর্থকদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি একটি সর্ববৃহৎ জনপ্রিয় ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এই দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে, একাধিক নেতা থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দলে একটি সংসদীয় আসনে দলের একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে। একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন চাইতেই পারেন। এটা দোষের কিছু নয়। বরং এটি দলের ভেতর আদর্শিক চেতনা, মূল্যবোধ, গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ অবারিত। গণতন্ত্রের এটিই-সৌন্দর্য।
তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ড একজন প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতা বিবেচনায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেবেন এটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি দলীয় একজন প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার দাবি সম্বলিত প্রচারটিকে কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টিকে হাস্যকর ও স্রেফ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এমন মনগড়া সস্তা প্রচার অতিউৎসাহীদের কল্পনাবিলাস ছাড়া আর কিছু নয়’।
জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নিজের প্রার্থিতার বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি দেশের উন্নয়নে, জনমানুষের কল্যাণে, আগামীর তারুণ্যের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের রাজনীতি করেন জানিয়ে বলেন, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তাঁর পারিবারিক ধারাবাহিক ঐতিহ্য-অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে। দলের প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম)’র হাত ধরে তাঁর পিতামহ ঝিকরগাছা থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম আব্দুস সামাদ (বড় সাহেব) পিতা মরহুম আব্দুল হালিম মেহেদী, চাচি মরহুমা জোৎস্না আলিম, চাচা আলহাজ্ব অধ্যাপক শফিউল আজম রুমি ও মশিউল আজম রচিসহ সকলে বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আমৃত্যু অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।তিনি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের কথা স্মরণ করে বলেন, এদেশের ছাত্রযুবক, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী-শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ কি চাই? সেটির বাস্তবতার উপলব্ধি থেকে আমরা তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণের মধ্য দিয়ে আগামীর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। তিনি বলেন, তারুণ্যই আমার শক্তি, প্রবীণরা আমার আশীর্বাদ। সাধারণ মানুষ আমার আস্থা ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দু।
বিগত ফ্যাসিস্ট আমলের টানা ১৭ বছরের নির্যাতন, নিপীড়ন, হামলা-মামলা, জেল জুলুমের বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা স্মৃতিচারণ করে এই নেতা বলেন, ঝিকরগাছা পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচনে আমজনতার বিপুল ভোটে আমার নিশ্চিত বিজয়ের ফলাফল ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয়।ধানের শীষ প্রতীকের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপি’র জনপ্রিয় এই নেতা বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার আগে পরে দলমতের উর্ধ্বে সকল জাতি গোষ্ঠী ও শ্রেণিপেশার মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এবারের সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলিতভাবে যাতে পালিত হয়, পারস্পরিক আস্থা শ্রদ্ধাবোধ, ভ্রাতৃত্বপুর্ সম্পর্ক আরো জোরদার হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করে গেছি। প্রতিটি মন্দিরে মন্দিরে ছুটে গেছি। দলের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি উপহার সামগ্রী তুলে দিয়েছি। শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মন্দিরে দলীয় নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে দিয়েছিলাম। যেটি আমাদের বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ডা: মোসলেহ উদ্দিন ফরিদ : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮৬, যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে একক প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন শিশুহৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা: মোসলেহ উদ্দিন ফরিদ। তিনি উপজেলার এগারটি ইউনিয়নব্যাপি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চৌগাছা-ঝিকরগাছা সংসদীয় এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবক হিসেবে চৌগাছা-ঝিকরগাছাবাসির কাঙ্খিত উন্নয়ন ঘটাতে চান। শতভাগ জয়ের ব্যাপারে আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিনা জামানতে ঋণদান কর্মসূচির আওতায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষুধাও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে জনগণের সেবক হিসেবে জনমানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি ঐতিহাসিক কপোতাক্ষ সংযোগ খাল পুন:খর্ননে দেশি-বিদেশি অর্থায়নের মাধ্যমে এই জনপদের অপার সম্ভাবনার কৃষিতে আধুনিকায়ন ও সমৃদ্ধি ঘটাতে চাই।
মিজানুর রহমান খান: সংসদীয় এই আসনে বিএনপি দলীয় ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশী যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও জেলা বিএনপি নেতা আলহাজ্ব মিজানুর রহমান খান বিগত ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপি আয়োজিত দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। এসব কর্মসূচিতে তাঁর সাথে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতাদের দেখা গেছে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদী জেলা বিএনপির এই নেতা তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনী প্রচারণা অংশ হিসেবে তিনি উপজেলার এগারটি ইউনিয়নে ব্যাপক জনসংযোগ করে চলেছেন। ফ্যাসিষ্ট বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি দলীয় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডেও দেখা গেছে এই নেতাকে।মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
জহুরুল ইসলাম: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র প্রতিষ্ঠা কাল থেকে সক্রিয় রাজনীতির মাঠে থাকা চৌগাছা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক বারবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও সাবেক আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে চৌগাছা-ঝিকরগাছা আসনে লড়তে চান। সংসদ সদস্য হিসেবে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী পাতিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম তাঁর নিজ উপজেলায় সর্বস্তরের জনমানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে একটি শক্ত ভিত তৈরি করেছেন দাবি করে বলেন, জনগণের সেবক হিসেবে এলাকার উন্নয়নে জননেতা প্রয়াত মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের সহযোগিতায় অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি।সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি-এখনো করছি।
ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা বিএনপির এই নেতা স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও ওয়ান ইলেভেনে সেনাবাহিনীর হাতে ডিটেনশনে আটক, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দুটি নাশকতাসহ ১৮টি মামলায় দীর্ঘ কারানির্যাতনের শিকার জহুরুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে দল তাঁর যোগ্যতা দক্ষতা ও ত্যাগের মূল্যায়ন বিবেচনায় তাকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেবেন।
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ইসহক : জেলা বিএনপি’র প্রবীন নেতা, সাবেক পিপি, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহক চৌগাছা-ঝিকরগাছা সংসদীয় আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ‘৮৬ সালে সংসদীয় এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে এবং দলীয় প্রার্থী হিসেবে হাতি মার্কা প্রতীক নিয়ে লড়েছিলেন।জেলা বিএনপির এই প্রবীণ নেতা এবারও ধানের শীষ প্রতীকের একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। সাম্প্রতিক তিনি ঝিকরগাছা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এসে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তার এই প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ঝিকরগাছা-চৌগাছার আপামোর জনসাধারণের সাথে আমার দীর্ঘকালের পরিচয়। দলীয় পরিচয়ের পাশাপাশি সর্বসাধারণের সাথে আমার পেশাগত চমৎকার সুসম্পর্ক রয়েছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে সবাইকে নিয়ে নির্বাচনে লড়ার জন্য প্রস্তুত আছি।
নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া কঠিন হবে বিএনপি দলীয় একাধিক প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতা ও ঐক্য না হলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। এদিকে বিএনপি’র নেতৃত্বে অনৈক্যের অভিযোগ উঠেছে।দলটির নেতাদের মধ্যেকার দ্বিধা-বিভক্তির এই সুযোগ কাজে লাগাতে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় জামায়াতে ইসলামী। তারা দল ও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিংসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। অথচ বিএনপির মত একটি জনপ্রিয় ও সর্ববৃহৎ দলের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতৃত্বে বিভক্তি-বিভাজন নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
এদিকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে জেলা বিএনপি’র নেতাদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের এক মঞ্চে দেখা গেলেও এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে সম্প্রীতি সমাবেশ ও গনসংযোগকালে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমরান হাসান সামাদ নিপুনসহ সিনিয়র নেতাদের একসাথে কিংবা এক মঞ্চে দেখা যায়নি। বরং উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সাবিরা নাজমুল দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদুন নবী মুরাদ, দপ্তর সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সোহাগ, বিএনপি নেতা সাবেক কাউন্সিলর মতিয়ার রহমান, যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক আরাফাত হোসেন কল্লোলসহ তার অনুসারী কয়েকজন নেতাদের নিয়ে পৃথকভাবে চৌগাছাসহ ঝিকরগাছার বিভিন্ন এলাকায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও গণসংযোগ করেছেন।অপরদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামাদ হাসান নিপুন তাঁর অনুসারীসহ উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা সাবেক তিনবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক আহ্বায়ক জননেতা মোর্তজা এলাহী টিপু, সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম, যুগ্মসম্পাদক সরদার শহিদুল ইসলামসহ উপজেলা যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সদস্য সচিবসহ জেলা বিএনপির সদস্য ও চৌগাছা-ঝিকরগাছা সংসদীয় আসনের ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশী যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খানসহ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন, সম্প্রীতি সমাবেশ ও গণসংযোগ করেছেন। ফলে, দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে উপজেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যেকার দ্বিধা-বিভক্তি ও বিভাজনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন অনেকে।
আপনার মতামত লিখুন :