Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

তেঁতুলিয়ায় টিউবওয়েলে মিলছে না পানি


দৈনিক পরিবার | আহসান হাবিব এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ০৮:৩৭ পিএম তেঁতুলিয়ায় টিউবওয়েলে মিলছে না পানি

চৈত্র-বৈশাখে গ্রীস্মের দাবদাহে ভূ-গর্ভস্থে নেমে গেছে পানির স্তর। এতে করে তেঁতুলিয়ায় বেশি কিছু এলাকার নলকূপগুলোতে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও পাওয়া যাচ্ছে না প্র্রয়োজনীয় পানি। দেখা দিয়েছে পানির সংকট। সুপেয় পানিসহ দৈনন্দিন পানির সংকট দেখা দেয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর জানাচ্ছেন, পরিবেশগত নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, তেঁতুলিয়ার বেশ কিছু এলাকায় সাধারণত পানির স্তর গড়ে ৬০ থেকে ৮০ ফুট গভীরে। বেশিরভাগ এলাকায় এ স্তর পৌঁছলেই পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু এই খরা মৌসুমে অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। প্রতি বছর তীব্র তাপদাহে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এ অবস্থা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। খবর নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলার সিদ্দিক নগর, সাহেবজোত, দর্জিপাড়া, কানকাটা, শারিয়ালজোতসহ বেশ কিছু এলাকায় অগভীর নলকূপে পানি উঠা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
এমনকি বর্তমানে ১০০ থেকে ১৩০ ফুট গভীরেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এসব অঞ্চলে পানি সংকট চরমে পৌঁছেছে।  সুপেয় পানির সংকট দেখা দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাদের (সাবমার্সিবল পাম্প) কেনার মতো সামর্থ নেই- এমন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে ১০ হাজার ৭৫০ টি টিউবওয়েল চালু রয়েছে। সাবমার্সিবলযুক্ত টিউবওয়েল (উচ্চ জলধারাসহ) রয়েছে ৯০টি। তবে সাধারণ টিউবওয়েলের হিসাব পাওয়া যায়নি।
বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, খরা মৌসুমে এখানকার নদীগুলোতে পানি নেই। শুকিয়ে গেছে পুকুরের পানিও। বিশেষ করে তেঁতুলিয়া সদরের দর্জিপাড়া, কানকাটা, শারিয়াল জোত, ডাঙ্গীবস্তি, সিদ্দিকনগর ও শালবাহান ইউনিয়নের পেদিয়াগছ এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গা উচু হওয়ায় গ্রীষ্ম মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এতে করে অচল হয়ে পড়ে নলকূপ। সংকট দেখা দেয় পানির। হাজারও পরিবারে পানি সংকটে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি। পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে পাশের বাড়িতে।
চৈত্র-বৈশাখের কাঠফাটা রোদে মাঠ, ঘাট, পথ, খাল, বিল ও প্রান্তর ফেটে চৌচির। বৃষ্টির অভাবে ফসলি ক্ষেতও ক্ষতির সম্মুখীন। পুকুর ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। এতে খরতাপে হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ ও প্রাণিকুল।
সিদ্দিক নগরের নুরনেহার, জাহানারা ও শহিদাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দুই মাস ধরে ঠিকমতো টিউবওয়েলের পানি উঠছে না। পাম্প বসিয়েও পানি মিলছে না। যারা মাটির গভীরে বডিং করে পাম্প বসিয়েছেন, তারা কিছুটা পানি পাচ্ছেন। তাদের বাড়ি থেকে পানি আনতে গেলেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা পানি দিতে চাচ্ছেন না। কাপড়, থালাবাসন ধোয়া ও রান্নাবান্না করতে যে পানি দরকার তা মিলছে না।
একই কথা বলেন দর্জিপাড়া গ্রামের আছমা বেগম ও ফিরোজা আক্তার। তারা বলেন, এই সময়টাতে পানি পান না তারা। মোটর পাম্প লাগিয়েও পানি মিলছে না। অনেকে টিউবওয়েলের ধারে ৮-১০ ফুট গভীরে গর্ত করে নিচে মোটরপাম্প বসিয়ে কিছুটা পানি পাচ্ছেন।
যাদের সামান্য সামর্থ রয়েছে তারা টিউবওয়েলের সাথে মোটরপাম্প সেট করলেও পানি পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের পাইপের কাছে ১০ ফিট গভীরে গর্ত করে মোটরপাম্প বসিয়ে নিচ্ছেন। তবে যাদের এ খরচ করার সামর্থ নেই তারা দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অন্যের বাড়িতে পানি আনতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন।
নলকূপ মিস্ত্রি তরিকুল ইসলাম বলেন, তেঁতুলিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকায় এই সময়য়ে পানির সংকট দেখা দেয়। টিউবওয়েলে পানি থাকে না। আমরা সর্বোচ্চ এখানে ৭০-৮০ ফুট পর্যন্ত পাইপ বসিয়ে নলকূপ স্থাপন করে থাকি। তারপরেও জানুয়ারি থেকেই পানির লেয়ার নামতে শুরু করে। ৬০ ফুট পর্যন্ত লেয়ার নেমে গেছে। এ কারণে এখানকার টিউবওয়েলগুলোয় পানি উঠছে না। যাদের অর্থ আছে, তারা সাবমারসিবল বসাচ্ছেন। অসহায়-গরীবদের জন্য খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে পুকুর-ঘাট, খাল-বিল ও নদ-নদীতে পানি শুকিয়ে গেছে। চৌচির হয়ে ফেটে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত। পানি নিম্নস্তরে চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে অনেক স্থানে অগভীর নলকূপ (শ্যালো মেশিন) দিয়ে পানি কম উঠছে। ৮-১০ ফুট গর্ত খুঁড়ে শ্যালো মেশিনগুলো সেখানে বসানো হচ্ছে। ইঞ্জিন গর্তে বসানোর পরেও পানি উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ছে না। কম পানি উঠছে। এতে করে বোরো আবাদসহ অন্যান্য আবাদেও সেচ খরচ অনেকগুণে বেড়েছে।
তেঁতুলিয়ার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে পানির সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য আমরাও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। কীভাবে এ সমস্যা উত্তরণ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মিঠুন কুমার রায় বলেন, এ সময়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নেমে গেছে। গত বছর আমরা সিদ্দিকনগর এলাকায় সার্ভে করেছিলাম, তখন পানির প্রথম লেয়ার ২০ ফুট নিচে নেমে যেতে দেখেছিলাম। বিশেষ করে বরেন্দ্রসহ অনেক গভীর নলকূপ স্থাপন হওয়ায় সাধারণ নলকূপে পানি উঠে না। এখন পানির স্তর ৩০-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। এতে খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

Side banner