Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২

ওসমান হাদিকে হারিয়ে তারকা অঙ্গনে শোক


দৈনিক পরিবার | বিনোদন ডেস্ক ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম ওসমান হাদিকে হারিয়ে তারকা অঙ্গনে শোক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের লড়াকু যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি আর নেই। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনী প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন হাদি। টানা ৬ দিনের মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে হার মানলেন এই সাহসী তরুণ নেতা।
হাদির এই আকস্মিক মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের শোবিজ অঙ্গনেও। হাদির মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে শোক ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় তারকারা।
তারকাদের চোখে শহীদ ওসমান হাদি
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ওসমান হাদির একটি ছবি প্রকাশ করে নিজের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘শহীদ ওসমান বিন হাদী আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে থাকবেন।’
ঢাকাই চলচ্চিত্রের সিয়াম আহমেদ ওসমান হাদি ও তার শিশুপুত্রের একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’
অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক হাদির মৃত্যুতে মর্মাহত হয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নামটা মনে রেখো, শহিদ - বীর শরীফ ওসমান হাদি।’
পরবর্তীতে একটি দীর্ঘ পোস্টে নানা সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কথা ও প্রশ্ন তোলেন এই অভিনেত্রী। লেখেন, ‘সে কোনো এমপি-মন্ত্রী ছিল না, কারও হক আত্মসাৎ করেনি, সাধারণ মানুষের ওপর অন্যায় করেনি। তবুও-সামান্য কথার দায়ে, একটা জীবন এভাবে শেষ হয়ে পারে? যে বাকস্বাধীনতার জন্য, এতো আন্দোলন, এতো স্লোগান -আজ সেই স্বাধীনতা কোথায় দাঁড়িয়ে? ভিন্নমত মানেই কি শাস্তি? প্রশ্ন করাই কি অপরাধ? আজ হাদি, কাল কে? এই প্রশ্নটা এখনই, নিজেদের ভেতরে ফিরে তাকিয়ে করার সময়। আমি হাদিকে কোনোদিন সামনাসামনি দেখিনি। ওনার সাথে আমার কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আমি যুক্ত নই। তবুও আজ মনটা কেমন ছটফট করছে, একটা গভীর অস্বস্তি।’ শেষে উল্লেখ করেন, শরীফ ওসমান হাদি (১৯৯৩ - ইনফিনিটি)
মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুল হাদির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে লিখেছেন, ‘এটা সত্যিই খুব কষ্টের আর একেবারেই মেনে নেওয়ার মতো না। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন, আর তার শোকাহত পরিবারকে, বিশেষ করে তার ছোট্ট বাচ্চাকে। ধৈর্য, শক্তি আর সান্ত্বনা দেন। তিনি যেই হোন না কেন, আমরা এমন একটা ভবিষ্যৎ চাই যেখানে রাজনীতি হবে ভালো, মানবিক আর দায়িত্বশীল, যেখানে মানুষের জীবনের মূল্য সবার আগে। এভাবে প্রাণ ঝরে যাওয়া কখনোই স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া উচিত না।’
জনপ্রিয় অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান লেখেন, ‘ওসমান হাদীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তার পরিবার, তার ছোট্ট বাবুটা এই শোক কাটিয়ে উঠুক। রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হোক। দেশে শান্তি ফিরে আসুক হে দয়াময়।’
তরুণ অভিনেতা আরশ খান ক্ষমতা ও জীবনের মূল্য নিয়ে লিখেছেন, ‘একটা একটা করে নিভে যাওয়া বাতিকে যে যাই পরিচয় দাও সবাই দেশের অংশ ছিল। কোন না কোন মায়ের সন্তান ছিল। একদিন জিতে যাবে ক্ষমতা কিন্তু দেখবে পৃথিবীটাই থেমে গেল।’
নির্মাতা আশফাক নিপুন ওসমান হাদির প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে লেখেন, শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। লেখেন, ‘ওসমান হাদি, শান্তিতে ঘুমান। আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দান করুন এবং আপনার পরিবার ও নবজাতককে শক্তি দিন। তারা হয়তো আপনাকে হত্যা করেছে কিন্তু আপনার শুরু করা লড়াই তারা থামাতে পারবে না। খুনিদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে!’
সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
এদিকে ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মিছিল ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারকারা।
আশফাক নিপুন লিখেছেন, ‘শহীদ ওসমান হাদীর অকালমৃত্যুর প্রতিবাদের ভাষা ভাংচুর, নৈরাজ্য হতে পারে না। এই মূহুর্তে সবার এক থাকা প্রয়োজন। দেশে বিশৃঙ্খলা যারা করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে দেশের সম্পদের আর ভবিষ্যতের বারোটা বাজায়েন না!’
সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুনের ঘটনায় শোক জানিয়ে পিয়া জান্নাতুল লেখেন, ‘এটি আমার হৃদয় ভেঙে দিচ্ছে। আগুন ভবন ধ্বংস করতে পারে, সাহস নয়। প্রথম আলো এবং দ্য ডেইলি স্টার মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।’
অভিনেত্রী চমক আক্ষেপ নিয়ে লিখেছেন, ‘কাল বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনায় আসবে অগ্নিসংযোগ, কিন্তু আসার কথা ছিল হাদির কথা, তার বীরত্বের কথা, খুনের বিচারের কথা। এদেশে মানুষ মরলে, শোকও নিরাপদ থাকে না। সবকিছুই ঢেকে ফেলা হয়-আগুনে, ভাংচুরে, রাজনীতিতে। এখানে রক্তের রঙ ও রাজনৈতিক। বরাবরই এখানে বিপ্লব বেদখল হয়, বরাবরই আমরা এখানে অসহায়।’

Side banner