Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

দম্পতিদের জন্য গ্রিন কার্ডের নিয়মে বড় পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের


দৈনিক পরিবার | প্রবাস ডেস্ক আগস্ট ৪, ২০২৫, ০৩:১২ পিএম দম্পতিদের জন্য গ্রিন কার্ডের নিয়মে বড় পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের

পরিবার-ভিত্তিক অভিবাসন ভিসার আবেদন, বিশেষ করে বিবাহ-ভিত্তিক সব আবেদন আরও কঠোরভাবে যাচাই-বাছাইয়ের নতুন নির্দেশনা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা বিষয়ক সংস্থা (ইউএসসিআইএস)। বিবাহ-ভিত্তিক আবেদনের ক্ষেত্রে ভুয়া দাবি শনাক্ত এবং কেবল প্রকৃত সম্পর্ক রয়েছে; এমন আবেদনকারীদের গ্রিন কার্ড অনুমোদন নিশ্চিত করাই এই পদক্ষেপের লক্ষ্য।
গত ১ আগস্ট প্রকাশিত নতুন এই হালনাগাদ নির্দেশনা ইউএসসিআইএসের নীতিমালায় ‘‘ফ্যামিলি বেইজড ইমিগ্রান্টস’’ শিরোনামে যুক্ত এবং এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে। আগের করা সব আবেদন ও নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে ইউএসসিআইএস।
এক বিবৃতিতে ইউএসসিআইএস বলেছে, ভুয়া, অপ্রাসঙ্গিক কিংবা ভিত্তিহীন পরিবার-ভিত্তিক অভিবাসন ভিসার আবেদন বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা (এলপিআর) হওয়ার পারিবারিক পথের ওপর আস্থা নষ্ট করে এবং যুক্তরাষ্ট্রে পারিবারিক ঐক্য ক্ষুণ্ন করে। আমরা আমেরিকানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে যারা ক্ষতিকর উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশছাড়া করার প্রক্রিয়া শুরু করাই আমাদের লক্ষ্য।
কী কী পরিবর্তন হলো? 
হালনাগাদ নির্দেশনায় কঠোর যাচাই-বাছাই ও নথিপত্র জমার বেশ কিছু নতুন নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে
১। পরিবার-ভিত্তিক ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে যোগ্যতা যাচাই ও অনুমোদন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা।
২। প্রমাণ হিসেবে একসঙ্গে তোলা ছবি, যৌথ আর্থিক নথিপত্র এবং বন্ধু ও পরিবারের ঘোষণাপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; যাতে বৈবাহিক সম্পর্ক সত্যি কি না, তা বোঝা যায়।
৩। দম্পতিদের সশরীরে সাক্ষাৎকার দেওয়া বাধ্যতামূলক, যাতে সম্পর্কের বাস্তবতা যাচাই করা যায়।
৪। আগের সব আবেদন পর্যালোচনা করা। বিশেষ করে একই স্পন্সরের একাধিক আবেদন অথবা একই সুবিধাভোগীর করা একাধিক আবেদন।
৫। ইতোমধ্যে অন্য ভিসা (যেমন এইচ-১বি) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আবেদনকারীদের অভিবাসন ইতিহাসের প্রতি বাড়তি নজর।
৬। আবেদনকারী গ্রিন কার্ড পাওয়ার উপযুক্ত হলেও, যদি তিনি অন্য কোনও কারণে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অযোগ্য বা বহিষ্কারের যোগ্য হন, তাহলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা—এমনকি তার আবেদন মঞ্জুর হলেও।
ইউএসসিআইএস স্পষ্টভাবে বলেছে, পরিবার-ভিত্তিক আবেদন অনুমোদন পেলেই যে আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যাবাসন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রক্ষা পাবেন, বিষয়টি তেমন নয়।
সংস্থাটি বলেছে, এই নির্দেশনা ইউএসসিআইএসের বৈধ ও বাস্তব বৈবাহিক সম্পর্ক যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করবে, যাতে তা সকল প্রচলিত আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
এছাড়া ইউএসসিআইএস তাদের নীতিমালায় আরও কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের ধারা যুক্ত করেছে। যদি কোনও মার্কিন নাগরিক বাংলাদেশি বা অন্য কোনও বিদেশি সঙ্গীকে স্পন্সর করেন, তাহলে তাদের অবশ্যই বাস্তব সম্পর্কের শক্ত প্রমাণ দিতে হবে। এর মধ্যে থাকবে যৌথ ব্যাংক হিসাব, ছবি, এবং বন্ধু বা আত্মীয়দের লেখা চিঠি। তাদের বিস্তারিত সাক্ষাৎকারেও অংশ নিতে হবে; যেখানে তারা একে অপরকে কতটা ভালো জানেন তা যাচাই করা হবে।
যদি ইউএসসিআইএস যাচাই-বাছাইয়ে সন্দেহজনক কিছু পায়—যেমন একই ব্যক্তির একাধিক স্পন্সরশিপ বা অভিবাসন ইতিহাসে অসঙ্গতি; তাহলে তা আরও বিস্তৃত তদন্ত কিংবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের কারণও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিবাহ-ভিত্তিক অভিবাসনের আবেদনের এই নীতিমালা পরিবর্তনের পেছনে সাম্প্রতিক কয়েকটি ভুয়া বিয়ের কেলেঙ্কারির ঘটনা কাজ করেছে। কিছু দিন আগে আকাশ প্রকাশ মাকওয়ানা নামের ভারতীয় এক নাগরিকের ভুয়া বিয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড আবেদনের ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
গত মে মাসে ভারতীয় এই নাগরিক স্বীকার করেন, জে-১ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার জন্য তিনি একটি ভুয়া বিয়েতে জড়িয়েছিলেন। পাশাপাশি বসবাসের ভুয়া নথিও দাখিল করেছিলেন তিনি। ওই সময় পারিবারিক ভুয়া নির্যাতনের দাবি জানিয়ে গ্রিন কার্ড পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আকাশ প্রকাশ।

Side banner