আমি কবি নই কবিতা লিখতে পারিনা। আমি মেধাবী নই মেধার ধারের কাছেও যেতে পারি না। আমার কন্ঠ ভালো নয় তাই আমি কন্ঠ শিল্পী হতে পারিনি। তাহলে করবটা আমি কি! কিন্তু আমি মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আমি তো মানুষ কিছু একটাতো করতে পারি” বলেছেন গাইবান্ধার জেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি।
গাইবান্ধায় এই প্রথম মাটির গন্ধে সুরের ছন্দে সেরা কন্ঠের অন্বেষণে গাইবান্ধা শিল্পকলায় গাইবান্ধা জেলার সাতটি উপজেলা থেকে ৫৬২ জন যারা গান গাইতে পারে তাদের মেধা অন্বেষণ করে ফাইনাল রাউন্ড এর জন্য নির্ধারিত হয়েছে সেরা ৫ জন। বাংলাদেশে জন্ম আমার বাংলাদেশে মরি আমাদের মেধার যা কিছু আছে দেশের কল্যাণে নিবেদন করি। অনেকেরই এই কথাগুলো ভাষাগুলো দেশের তরে দেশের জন্য কল্যাণকর হয়ে থাকে। যা ইতিহাসের পাতায় চিরদিন লেখা থেকে যায়।
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের রংপুর বিভাগের একটি জেলা গাইবান্ধা। অনেক মেধাবী মানুষের জন্ম হয়েছে গাইবান্ধায় অনেক মেধাবী মানুষ রাষ্ট্রপরিচালনা করেছেন। কিন্তু কেউ কখনো ফিরে তাকাইনি কিছু মানুষ নিজস্ব মেধা নিজস্ব কন্ঠ নিয়ে জন্ম নেয়। সেই কন্ঠ মেধা যাচাইয়ের জন্য একটা প্লাটফর্ম দরকার হয়। সেটি বিগত কোনদিনই গাইবান্ধা জেলায় হয়নি। ইতিহাসের পাতায় যখন আবারো রক্ত দিয়ে দেশের আঙ্গিনা ক্ষতবিক্ষত করে বৈষম্য দূর করার জন্য ফিরে এলো নতুন এক স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতার পরপরই ১২ ই সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনে যুক্ত হল এমন একটি নাম যার নাম চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ।
উন্নয়নের মহাসড়কে যখন বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে তখন বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছিল গাইবান্ধা জেলা। গাইবান্ধা জেলা নামে পেয়েছিল স্বাধীনতা। কিন্তু সে স্বাধীনতা ছিল রিক্ত স্বাধীনতা। রাস্তা ছিল সুযোগ ছিল কাজে লাগাতে পারিনি কোন মেধাবী মানুষই। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনে জেলা প্রশাসক হিসেবে যুক্ত হয়ে গাইবান্ধা জেলাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থেকে শুরু করে খেলাধুলা, মাদক বিরোধী, সংস্কৃতি অঙ্গনে নতুন এক মাত্রা যোগ করতে শুরু করলেন চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। ইতিহাসের পাতায় হয়তো বা লেখা থাকবে না কিন্তু গাইবান্ধা জেলার ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে ১১ ই জুলাই শুক্রবার দুপুরের নামাজের পরে জেলা স্টেডিয়াম গাইবান্ধায় প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের ঢল নামে ফুটবল খেলা দেখার জন্য। কেউবা প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে কেউ বা গেট ভেঙ্গে জেলা প্রশাসক ফুটবল টুর্নামেন্ট দেখার জন্য জেলা স্টেডিয়াম গাইবান্ধায় পা রাখে।
নানান প্রতিকূলতা সত্বেও সুন্দর সাবলীলভাবে গ্যালারি পরিপূর্ণ হয়ে মাঠের চতুরর্পাশে বসে মানুষ খেলা উপভোগ করে। বিগত কোন সময়ই গাইবান্ধা জেলা স্টেডিয়াম এত মানুষ একযোগে ফুটবল খেলা দেখতে আসা ভক্তকে দেখেনি। ফুটবল খেলা বাদই দিলাম।
আসুন গাইবান্ধা জেলার গায়েনের কথা শুনি। ৫৬২ জন কণ্ঠশিল্পী গাইবান্ধার গায়েনে রেজিস্ট্রেশন করে তাদেরকে নিয়ে ৪ জুলাই ২০২৫ ইং তারিখ যাত্রা শুরু হয় মাটির গন্ধে সুরের ছন্দে গাইবান্ধার গায়েন অনুষ্ঠান গাইবান্ধা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। গাইবান্ধায় জন্ম নেওয়া গাইবান্ধা জেলার ৩২ জন গুণী বিচারকের প্রত্যক্ষ বিচারের ফলে প্রত্যেকটা শিল্পীর কন্ঠে গান শুনে প্রত্যেকের গানের মেধা যাচাই করে ৫৬২ জনের মধ্যে লড়াইয়ে টিকে থাকে ৫৬ জন। ৫৬ জন কে আবারো প্লাটফর্মে জায়গা করে দিয়ে বিচারকদের বিশ্লেষণ করে কাগজপত্র বয়সের জটিলতায় টিকে থাকে ৪৮ জন। ৪৮ জনকে দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় রাউন্ড কঠিন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সেখানে টিকে থাকে ২৮ জন। প্রথম রাউন্ডে টিকে থাকা ৪৮ জন কে এই গাইবান্ধা জেলা শিল্পকলার একাডেমির শিল্পী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। ৪৮ জন শিল্পী কে বাহিরের জেলার যারা কন্ঠের জাদুগর বিচারক সেই বিচারকদের নিয়ে এসে বিচার করার ফলে টিকে থাকে ২৮ জন।২৮ জন কন্ঠ শিল্পী তো শিল্পকলার শিল্পী হয়েই গেছেন। তাদেরকে গাইবান্ধার জেলার রেডিও সারাবেলা ৯৮.৮ এ গান গাওয়ার সুযোগে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। সুযোগের হাতছানি দিয়ে ডেকে আনা ২৮ জনকে গান গাওয়ার জন্য রেডিও সারাবেলার অন্তর্ভুক্ত করে নেয় । প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ধাপ শেষে বিচারকরা প্রত্যেকটা শিল্পী কন্ঠে গান শুনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেমে নিয়ে আসেন ২০ জনে। ২০ জন শিল্পী কে নিয়ে তৈরি হয় কৌতূহল। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে আসা বাংলাদেশের স্বনামধন্য গীতিকার সুরকার আলাউদ্দিন আলীর সহধর্মিনী মিমি আলাউদ্দিন, ঢাকা থেকে আসার একজন বিচারক খালেদ মুন্না, বিটিভির সংগীত পরিচালক শামীম রেজার উপস্থিতিতে শুরু হয় কোয়ার্টার ফাইনাল। ২০ জন শিল্পীর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে ২০ জনকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান গাওয়ার সুযোগ এর প্রতিশ্রুতি দেন সংগীত পরিচালক বিটিভির শামীম রেজা । কোয়াটার ফাইনালের এই বিশ জনের মধ্যে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ১০ জনকে সেমিফাইনালের জন্য টিকিয়ে রাখা হয়। ২ আগস্ট বিকেল পাঁচটা বিচারকদের সামনে একটা রবীন্দ্রসংগীত অথবা নজরুল সংগীত গাইতে হয় শিল্পীদের সেইসঙ্গে গাইতে হয় বাংলা সিনেমার একটি করে গান। চূড়ান্ত ফলাফলে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় ৫ জনকে। ফাইনালের স্বপ্ন টিকে রাখে পাঁচ জন মেধাবী কন্ঠ শিল্পী। বিচারকরা কান্না ভেজা কণ্ঠে বলেন।গাইবান্ধা জেলার সবাই এত ভালো গান গায় আমরা ঢাকায় বসে কখনো চিন্তা করতে বা কখনো মনে করিনি যে উত্তরবঙ্গের জেলা গাইবান্ধায় এত কন্ঠের যাদুকর শিল্পীরা আছেন। গাইবান্ধা জেলায় যখন রাত সাড়ে আটটা তখন শিল্পকলা মেতে ওঠে বিচারকদের সাথে কন্ঠে কন্ঠের সুরে দশজনের সুরে গান গাওয়া। সমাপ্তি এখনই কোথায় দশজন থেকে পাঁচজনে যখন আসার সময় হয়ে আসে তখন বুকের হার্টবিটটা সবার যেন কাঁপছিল কাকে বাদ দিয়ে কে টিকবে। কিন্তু বিচারকের বিশ্লেষণে পাঁচজনকে দিতে হয়েছে ফাইনালের টিকেট আর ৫ জনকে বিদায় দিতে হয়েছে কান্না ভেজা কন্ঠে। কত চড়াই উৎরাই পার করে প্রত্যেকটা রাউন্ড হার্টবিট কাপিয়ে যারা টিকে ছিল তাদের মধ্য থেকেও পাঁচজনকে চোখের জলে কান্না করে বিদায় নিতে হয়েছে। আগামী ৯ই আগস্ট শুক্রবার এই পাঁচজন শিল্পী লড়বেন ফাইনাল রাউন্ডে সেখানে থাকবেন দেশে সেরা বিচারকগণ। যে শিল্পী প্রথম স্থান অধিকার করবে সে পাবে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা। দ্বিতীয় যিনি হবেন তিনি পাবেন ৭০ হাজার টাকা। তৃতীয় যিনি হবেন তিনি পাবেন ৫০ হাজার টাকা চতুর্থ যিনি হবেন তিনি পাবেন ৩০ হাজার টাকা। পঞ্চম যিনি হবেন তিনি পাবেন ২০ হাজার টাকা। আমরা বইয়ের পাতায় হ্যামিলিয়নের বাশিওয়ালার গল্প শুনেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে কখনো হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালাকে দেখা সম্ভব হয়নি। গাইবান্ধা জেলায় জন্ম নয় তবু ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে একটি নাম যিনি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালাও নন তিনি আমাদের মত একজন সাধারন জীবন যাপন করা মানুষ গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। গাইবান্ধা জেলাকে বেকার মুক্ত জেলা গড়তে ইতিমধ্যেই গাইবান্ধার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে ৪ হাজার যুবক ও যুব নারীর পরীক্ষা নিয়ে ৮০০ শত যুবক ও যুব নারীকে আত্মনির্ভরশীল করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং কোর্সের ওরিয়েন্টেশনও হয়ে গেছে ৩ আগস্ট। আগামী ৯ তারিখ গাইবান্ধার গায়েন সেরা কন্ঠের অন্বেষণে মাটির গন্ধে সুরে ছন্দের ফাইনাল রাউন্ড। ৯ তারিখ শুক্রবার ২০২৫ ইং তারিখ গাইবান্ধা জেলার মাটির গন্ধে সুরের ছন্দে সেরা কন্ঠশিল্পীর অন্বেষণে “স্বাদে ভরা রসমঞ্জুরীর ঘ্রাণ, চরাঞ্চলের ভুট্টা মরিচ গাইবান্ধার প্রাণ” সাক্ষী হতে যাচ্ছে এক নতুন ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ এর অপেক্ষায়।
আপনার মতামত লিখুন :