Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২
৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

নতুন দিগন্তে আইনজীবী ফোরাম; অঙ্গীকারের বাঁধনে আলোকময় পথ


দৈনিক পরিবার | অ্যাডভোকেট গাজী তৌহিদুল ইসলাম  নভেম্বর ১১, ২০২৫, ১০:১২ পিএম নতুন দিগন্তে আইনজীবী ফোরাম; অঙ্গীকারের বাঁধনে আলোকময় পথ

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম (বিজেএএফ) ২০২৫ সালে ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। ১৯৯১ সালের ৩১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন বিএনপির সহযোগী হিসেবে আইনজীবীদের ন্যায়ের মশালবাহী করে তুলেছে। এবারের উদযাপন শুধু একটি দিনপঞ্জি নয়, অতীত-ভবিষ্যতের মেলবন্ধন ও নতুন অঙ্গীকারের আহ্বান।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন, পলায়ন ও গণতন্ত্রোত্তরণে আইনজীবীদের ঐতিহাসিক ত্যাগ-ধৈর্য ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ থেকে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পর্যন্ত অনবদ্য মাইলফলক। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পতনের পথে আইনজীবীদের দুঃসাহসিক ভূমিকা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রতিদিনের প্রতিবাদ, মিছিল, সমাবেশ; ৪ আগস্ট ‘স্টেপ ডাউন হাসিনা’ কর্মসূচি ও পরদিন ‘চলো চলো ঢাকা চলো’তে হাজারো আইনজীবীর উপস্থিতি গণতন্ত্রের বিজয় নিশান উড়িয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী মূলত ৩১ অক্টোবর হলেও অনিবার্য কারণে ১৪ নভেম্বর পুনর্র্নিধারিত। তবু ৩১ অক্টোবর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা, দোয়া, পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়। দেশব্যাপী ইউনিটগুলো আলোচনা সভা, কেক কাটা, র‌্যালি, শোভাযাত্রা, মৃত সদস্যদের স্মরণ ও বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল আয়োজন করে।
একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, আত্ম-অনুসন্ধান ও পুনর্গঠনের পবিত্র মুহূর্ত। ফোরামের ভিত্তি গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মৌলিক অঙ্গীকারে স্থাপিত। ১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইনজীবীরা এ পতাকাতলে সমবেত। ১৯৮২-৯০ এরশাদের স্বৈরশাসনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজপথ-আদালতে সংগ্রাম ১৯৯০ সালে স্বৈরপতন এনে দেয়। ১৯৯১ সালে মরহুম বিচারপতি টিএইচ খানের আহ্বায়কত্বে ফোরাম আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
গণতন্ত্রের পথ মসৃণ ছিল না। ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ শাসনে হয়রানি-অত্যাচার সত্ত্বেও ২০০১ সালে খালেদা জিয়া দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেন। ২০০৯-২০২৪ শেখ হাসিনার ১৭ বছরের দুঃশাসনে বিএনপি-সমর্থক আইনজীবীদের ওপর মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতনের ভয়াবহ অধ্যায় রচিত হয়। ২০১১ সালে অ্যাডভোকেট এম ইউ আহমেদের পুলিশ হেফাজতে রহস্যজনক মৃত্যু তার জ্বলন্ত উদাহরণ। হাজারো গায়েবি মামলা, পুলিশ-আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা, নারী আইনজীবীদের লাঞ্ছনা সত্ত্বেও আইনজীবীরা অদম্য।
বিচারবিভাগের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রতিবাদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা, তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার নিষেধাজ্ঞা প্রতিবাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থন এসব মাইলফলক ফোরামের অহংকার। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা, জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষক মর্যাদা অস্বীকৃতি বিচারবিভাগ স্বৈরাচারের দোসর হয়ে ওঠে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খাইরুল হকসহ দোসরদের বিচারের দাবি আজও জ্বলন্ত।
প্রতিষ্ঠাতা মরহুম বিচারপতি টিএইচ খান, অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ খন্দকার, মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, এজে মোহাম্মদ আলী, সানাউল্লাহ মিয়াসহ পূর্বসূরিদের ত্যাগ আজকের বটবৃক্ষ। বর্তমান সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও নির্বাচিত মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তিনির্ভর, উদ্ভাবনী কর্মসূচি প্রত্যাশা করে।
১৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বিশাল আয়োজনে প্রধান অতিথি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিশেষ অতিথি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্লোগানে মুখরিত হোক আদালত প্রাঙ্গণ: “ঝড়বৃষ্টি আঁধার রাতে/আইনজীবীরা আছে সাথে”, “৩৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী/সফল হোক সার্থক হোক”।
আইনজীবী ফোরাম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অগ্রভাগ। বিশ্বের সকল আইনজীবীকে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করবে এ ত্যাগ। মার্টিন লুথার কিংয়ের ভাষায়, “যেকোনো স্থানের অবিচার সর্বস্থানের ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি।” অতন্দ্র প্রহরীদের বিরামহীন পথচলায় নিহিত বিজয়ের সৃষ্টিসুখের উল্লাস।
৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল হোক! অঙ্গীকারের বাঁধনে রচিত হোক আলোকময় পথ!
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম জিন্দাবাদ! বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
লেখক: অ্যাডভোকেট গাজী তৌহিদুল ইসলাম
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সদস্য সচিব, সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট।

Side banner