শনিবার ভোর। চারদিক তখনও কুয়াশায় মোড়া। মাইনীমুখ বাজারের ঘাটে ঘাটে ভিড় জমতে শুরু করেছে মানুষের। কোথাও নৌকার গুঁই গুঁই শব্দ, কোথাও কাঠের গন্ধে ভেসে আসছে নতুন নৌকার আভাস। এ যেন এক ভিন্ন আয়োজন লংগদুর মানুষের প্রাণের উৎসব, নৌকার হাট।
নদীমাতৃক জীবনে নৌকা এখানে শুধু বাহন নয়, জীবন ও জীবিকার সঙ্গী। তাই সপ্তাহের একদিন এই হাট যেন মানুষের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার মিলনমেলা। বড়সড় মাছ ধরার নৌকা থেকে শুরু করে গৃহস্থালির ছোট ডিঙি সবই সাজানো থাকে বাজারের একপাশে। চোখে পড়ে কাঠের নৌকায় রঙের প্রলেপ, কোথাও কারুকাজের ছোঁয়া।
ক্রেতারা এসে নৌকা ছুঁয়ে দেখেন, কাঠের শক্তি যাচাই করেন, কেউবা দামের টানাটানি করেন। বিক্রেতারা হাসিমুখে বোঝান এই কাঠ টিকবে দশ বছর, ঝড়-বাদলেও দেবে না ফাঁক। দরদামের কোলাহল মিলে মিশে এক অন্যরকম সুর তোলে।
শুধু লংগদুর মানুষ নয়, বরকল, নানিয়ারচর আর বিলাইছড়ি থেকেও আসেন ক্রেতারা। বর্ষার আগে এ হাটে ভিড় বাড়ে বহুগুণে। কারো জন্য নৌকা নতুন জীবিকার হাতিয়ার, কারো জন্য পরিবারের নিরাপদ যাতায়াতের ভরসা।
স্থানীয়রা বলেন, এ হাট শুধু কেনাবেচা নয়, এ আমাদের ঐতিহ্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নৌকা দিয়ে আমাদের জীবন ভেসে চলেছে।
নৌকার হাট তাই শুধুই বাজার নয়, এটি লংগদুর মানুষের নদীমাতৃক জীবনের রঙিন প্রতিচ্ছবি। যেখানে একসাথে মেলে জীবিকা, ঐতিহ্য, আর মানুষের অদম্য স্বপ্ন।
আপনার মতামত লিখুন :