Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
জবির আবাসিক শিক্ষার্থীদের

ছাত্রী হলের সিট নবায়ন ফি কমানোর দাবি


দৈনিক পরিবার | নাজমুস শাহাদাত এপ্রিল ৪, ২০২৩, ১২:১৭ এএম ছাত্রী হলের সিট নবায়ন ফি কমানোর দাবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রীদের একমাত্র আবাসস্থল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সিট নবায়ন ফি কমানোর দাবি জানিয়েছে হলের বসবাসরত আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
(সোমবার) হল প্রভোস্ট বরাবর এক লিখিত আবেদনপত্রে এ দাবি জানান ছাত্রীরা। একই  আবেদনপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।  
আবেদনপত্রে বলা হয়, ইতোমধ্যেই আমাদের হলের সিট পুনরায় নবায়নের নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে যেই টাকা (৫২৬৫) বরাদ্দ করা হয়েছে তা অন্যান্য যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি। যেখানে আমরা সকল সুবিধা একজনের জায়গায় দুইজন ভাগ করে ব্যবহার করছি। আপনি অবগত আছেন যে একজনের সিট জনপ্রতি দু'জনের মধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখানে খাট, টেবিল, আলমারি দু'জন ভাগ করার পরেও আমাদের প্রতিটি সিটের জন্য ১০ হাজার ৫৩০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। যে ফি প্রদান করা আমাদের সকলের জন্য ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য।
আবেদনপত্রে আরও বলা হয়েছে, আমরা জনপ্রতি একজনের সিট দু'জন ব্যবহার করছি। যার ফলে প্রতিটি সিট বাবদ ফি ও ভাগ করে দেওয়াটা নিয়মের অন্তর্ভুক্ত। গতবছর হলে উঠার সময়ে ফি প্রদানকালে বলা হয়েছিল ৫০০ টাকা জামানত ফি সহ মোট ফি পাঁচ হাজার ২৬৫ টাকা। কিন্তু চলতি বছরও পুনরায় জামানত ফি সহ হলের ফি ৫ হাজার ২৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাহলে কি আমরা প্রতিবছর জামানত ফি জমা দিব?
লিখিত পত্রটিতে বলা হয়, আপনার অবগতির জন্য অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর সিট ভাড়া নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে বাৎসরিক ফি ৮১০ টাকা, শামসুন্নাহার ও সুফিয়া কামাল হলে এক হাজার টাকা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া, রোকেয়া, খালেদা জিয়া হলে এক হাজার ৪৪০ টাকা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলে ৪০০, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও শেখ হাসিনা হলে ৩০০ টাকা। উক্ত হলে থাকা সিংহ ভাগ শিক্ষার্থীই দারিদ্র্য এবং টিউশনের মাধ্যমে নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালায়। সুতরাং, এই টাকাটা প্রদান করা আমাদের সকলের পক্ষে অসম্ভব। উক্ত হলের সকল ছাত্রীদের সমস্যা বিবেচনা করে হলের পূর্ব নির্ধারিত ফি কমিয়ে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পুনরায় নির্ধারণ করার অনুরোধ জানান শিক্ষার্থীরা।
হলে বসবাসরত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হলের সিটের নবায়ন ফি'র টাকাটা কম নেয়া হোক। আমার কথায় মনে করুন, 'টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালায়। কিছুদিন আগে সেমিস্টার ফি, পরীক্ষা ফি জমা দিলাম। আর এখন ঈদে বাড়ি যাওয়ার মুহুর্তে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। ভাবছিলাম বাড়িতে গেলে পরিবারের সদস্যদের জন্য সামান্য কিছু কেনাকাটা করব কিন্তু হলের ফি দিতে নাজেহাল অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, অবশ্যই ফি কমানো উচিত। যেই জায়গায় ৬০০ মেয়ে থাকার কথা হলে সেখানে ১২০০ জন থাকে একই পরিমাণ খরচ দিয়ে। আমাদের হলের এক আসনের জন্য ১০ হাজার ৫৩০ টাকা দিতে হচ্ছে। যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে চার-পাঁচগুন বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমা আক্তার বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের আবাসিক সিট ভাড়া ১৪৪, হল উন্নয়ন ফি ৬০, হল খেলাধুলা ফি ৫০, বাসনাদি ফি ৩০ অর্থাৎ সর্বমোট হল বাবদ ফি ২৮৪ টাকা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক হল সিট ভাড়া ৬০ টাকা ও অন্যান্য ফি ১০০ টাকা সর্বমোট ১৬০ টাকা। এমনকি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের বার্ষিক ফি ১২০০ টাকা। সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হলে ১২০০ শিক্ষার্থী ৫২৬৫ টাকা ফি দিয়ে হলে উঠেছি। বছর ঘুরতেই  আবার নোটিশ, সিট পুনরায় নবায়নের জন্য বার্ষিক ফি বাবদ ৫২৬৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে। যা বাংলাদেশের যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আকাশচুম্বী। জবির এই হল বাণিজ্যের লাগাাম টানার জমা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে যেখানে নামমাত্র বাৎসরিক ফি, সেখানে আমাদের হলের অবস্থা যেনো একই মুদ্রার অপর পিঠ। যে হলে ওঠানোর কথা ছিল ৬০০ সেখানে ওঠানো হয়েছে ১২০০ জনের বেশি। অর্থাৎ যার সংখ্যাটা বরাদ্দ সিটের তুলনায় দ্বিগুণ। আমাদের সিট ভাড়াও হবে বরাদ্দ ফি কিংবা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোর ফি থেকে অর্ধেক।  
এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, সেখানে আমাদের হল কর্তৃপক্ষ কোন হিসেবে এতগুলো টাকা ফি নিচ্ছে তা আমাদের নিশ্চয়ই জানা দরকার। হয়তো এর যথার্থ কারণ আছে কিংবা নেই সে যাই হোক, ছাত্রীদের সার্বিক অবস্থা চিন্তা করে হলের বাৎসরিক ফি কমানো হোক। এদিকে আকাশচুম্বী হলের সমস্যার কথা তো বললে শেষই হবে না।
এ বিষয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা সরকারের কাছে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।

 

Side banner