Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
শারিরিক প্রতিবন্ধী আদনানুজ্জামান

শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে ভর্তি যুদ্ধে অংশ নিলেন


দৈনিক পরিবার | ইবি প্রতিনিধি এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে ভর্তি যুদ্ধে অংশ নিলেন

শারিরিক প্রতিবন্ধী আদনানুজ্জামান। অদম্য মেবাধী এ শিক্ষার্থী শনিবার (২৭ এপ্রিল) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কেন্দ্রে। তাঁর বাসা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আরওয়া পাড়া গ্রামে। বাবার নাম মোহাম্মদ আজগর আলী ও মায়ের নাম সাবিনা সুলতানা লিলি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাবা-মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে আদনান। শারিরিকভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত এ শিক্ষার্থী। ঠিকমত হাটতে পারেন না, কথা বলতেও বেগ পেতে হয়, এমনকি হাতেও রয়েছে প্রতিবন্ধীজনিত সমস্যা হাত কাঁপুনি। হাজারো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বিন্দুমাত্র দমে যাননি তিনি। নিজের প্রবল ইচ্ছে শক্তি ও পারিবারিক সহায়তায় সে শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছে। অদম্য এ আদনান কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে প্রস্তুতি নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধের। তার ছোট বেলা থেকেই স্বপ্নছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়াশোনা করবে। সে স্বপ্ন থেকে ভর্তি যুদ্ধে অংশও নিয়েছিলেন। কিন্তু শারিরিক প্রতিবন্ধী ও হাতের কাঁপুনি সমস্যায় এ যাত্রায় ব্যর্থ হয়ে যান।
আদনান জানান, আমি ঢাবিতে যখন ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি শ্রুতিলেখককে সাথে নিতে পারেননি। কারণ এরকম কোন অনুমতি সে পায়নি। যার ফলে হাতের কাঁপুনি থাকায় বৃত্ত ভরাট করতে গিয়ে একটার সাথে আরেকটা গুলিয়ে ফেলেছি। পরবর্তীতে আমার ফলাফল অকৃতকার্য আসে।
আদনান বলেন, আমার বিশ্বাস যদি শ্রুতিলেখক বা প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদাভাবে পদ্ধতিতে খাতা দেখা হয়, তাহলে আমার এ স্বপ্ন পূরণ হত।
তিনি আরো জানান, যেহেতু ঢাবিতে আমার সুযোগ হয়নি। ইন-শা-আল্লাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবোই। ইচ্ছে আছে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে আমি একটি সরকারী জব করবো। আমার এ যাত্রায় পিতামাতাকে সবসময় পাশে পেয়েছি। যারা হাজারো সমস্যা সত্ত্বেও আমার পাশে থেকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
আদনানের মা সাবিনা সুলতানা লিলি বলেন, অনেক কষ্ট করে এই ছেলে নিয়ে পথচলা। প্রাথমিক পর্যন্ত ওকে কোলে করে স্কুলে নেওয়া লেগেছে। এক হাতে ব্যাগ অন্য হাতে ও, তবুও হাল ছাড়ি নাই। এই ছেলেকে মানুষ আমার করতেই হবে। সবাই আমরা সুস্থদের দিকে তাকাই অসুস্থদের দিকে কেউ তাকাই না! তবে মায়েরা ভিন্ন! একজন মা ইচ্ছে করলেই, তবে একজন সন্তান কে মানুষ করতে পারে। আমি আমার এই ছেলেকে দীর্ঘ আট বছর কোলে করে স্কুলে নিয়েছি। ওর পিছনে ওর শিক্ষকদের ও অনেক অবদান রয়েছে। এই ছেলে ১৮ মাস বয়সে বসতে শিখেছে, ৭ বছর বয়সে বসতে শিখেছে এবং ৯ বছর বয়সে হাটা শিখেছে। এমনকি ছোটো সময় ও কথাও বলতে পারতো না। ওর নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ওর স্বপ্ন ও আমাদের ইচ্ছেশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করছি। আমি মন থেকে চাই আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হোক এবং ওর অদম্য ইচ্ছেশক্তির মাধ্যমে অন্যরাও তাদের প্রতিভা বিকশিত করুক এই প্রত্যাশাই রাখছি।

Side banner