Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

ট্রাম্পকে জেট উপহার দিয়েও রক্ষা পায়নি কাতার


দৈনিক পরিবার | আন্তর্জাতিক ডেস্ক     সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ০৮:৪১ পিএম ট্রাম্পকে জেট উপহার দিয়েও রক্ষা পায়নি কাতার

মাত্র চার মাস আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দোহা সফর করেছেন। সে সময় তাকে রাজকীয় অভ্যর্থনা দেওয়া হয়, কোটি ডলারের চুক্তি সই হয় এবং একটি বিতর্কিত প্রেসিডেনশিয়াল বিমান উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। গাজা যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কাতার। 
সোমবার কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি ব্যক্তিগতভাবে হামাসের প্রধান মুখপাত্র খালিল আল-হাইয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন নতুন মার্কিন-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তি নিয়ে।
সেই আলোচনার পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যখন হামাসের আনুষ্ঠানিক জবাব আসার কথা ছিল, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দোহার একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালায়। এতে হামাসের পাঁচ সদস্য এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন।
এই হামলার ফলে দোহায় শোক, ক্ষোভ ও বিশ্বাসভঙ্গের একটি প্রবল অনুভূতি তৈরি হয়েছে। সাধারণত কূটনৈতিক ভাষায় সাবলীল কাতারি প্রধানমন্ত্রী এবার কঠোর, আবেগপ্রবণ ও নিন্দাসূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন।
সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই হামলাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্তির শেষ আশাও শেষ করে দিয়েছেন। শান্তির সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছেন। তিনি নেতানিয়াহুকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।
গাজা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কাতারের উদ্যোগের প্রশংসা করেছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দোহাকে ঝুঁকি নিয়ে শান্তির জন্য কাজ করা সাহসী দেশ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
এছাড়া চলতি বছরের জুন মাসে ইরান যখন দোহায় অবস্থিত আল-উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় (যা অঞ্চলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি) তখন অনেকেই মনে করেন, কাতার সেই আঘাতটা মূলত আমেরিকার পক্ষেই সহ্য করেছে। ইরান দাবি করে, এই হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পাল্টা জবাব। দোহা কড়া ভাষায় এর নিন্দা জানালেও, বাস্তবে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলার বার্তা কাতারের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে যারা গত কয়েক দশক ধরে আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে তারাও এখন ভাবছে সেই সম্পর্ক আসলে কতটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে।
ট্রাম্পের সফরের সময় সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল। কিন্তু বিনিময়ে কী পেয়েছে তারা?
কারনেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের গবেষক এইচএ হেলিয়ার বলেন, এই দেশগুলো এখন ভাববে যে ভবিষ্যতে আক্রমণ প্রতিহত করতে তারা কী করতে পারে? এবং তারা আর কতদিন এমন এক নিরাপত্তা অংশীদারির ওপর ভরসা রাখবে, যারা তাদের এমনকি নিজস্ব মিত্রের হাত থেকেও রক্ষা করতে পারেনি?
এই হামলার ফলে গাজা যুদ্ধ বন্ধে কাতারের মধ্যস্থতা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। যদিও দোহা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ভূমিকা থেকে সরে আসেনি, তবে আলোচনার অগ্রগতি এখন গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ভবিষ্যতে আরব রাষ্ট্রগুলো কী মার্কিন নেতৃত্বাধীন শান্তি উদ্যোগে অংশগ্রহণে আগ্রহী থাকবে? এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিনিময়ে তারা কি আদৌ নিরাপদ?
সূত্র: সিএনএন

Side banner