আসন্ন ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন ২০২৩ এর লোগোতে একটি সূর্য রয়েছে। যা পাঁচটি রঙে আলো ছড়ায়: সবুজ, নীল, কমলা, লাল ও হলুদ। যা গ্রুপের বর্তমান পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিত্ব করে। এই বছরের শীর্ষ সম্মেলন ২২ থেকে ২৪ অগাস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হবে। এবারের থিম ‘পার্টনারশিপ ফর মিউচুয়ালি অ্যাসিলেরেটেড গ্রোথ, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এন্ড ইনক্লুসিভ মাল্টিল্যঅটারিজম।’
ব্রিকস কর্মকর্তারা বলছেন, এই চেতনার ফলে গ্লোবাল সাউথের প্রায় ৪০টি দেশ গ্রুপে যোগদানে আগ্রহী হয়েছে। দক্ষিণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক কার্লোস মারিয়া কোরেয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সিনহুয়াকে বলেছেন, আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে নেতারা ব্রিকস গ্রুপের সম্প্রসারণ, অন্তর্ভুক্তির মানদণ্ড এবং নির্দেশনাসহ আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিকস রাষ্ট্রদূত অনিল সুকলল বলেন, ২২টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য ব্রিকস দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এছাড়া একই সংখ্যক দেশ রয়েছে যারা অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকস সদস্য হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। আলজেরিয়া তাদের আগ্রহ দেখানো সর্বশেষ দেশগুলির মধ্যে একটি।
আরবি সম্প্রচারকারী এননাহার টিভি ২২ জুলাই আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাদজিদ টেবুউনকে উদ্ধৃত করে বলেছে, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকস গ্রুপে যোগদানের জন্য আবেদন করেছি, এবং আমরা ব্যাংকে (নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) শেয়ারহোল্ডার সদস্য হওয়ার জন্য একটি চিঠি পাঠিয়েছি।
একটি জাপানি দৈনিক মাইনিচি শিম্বুনের জানায়, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নাইজেরিয়া এবং অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোও আবেদন করেছে। একবার অনুমোদিত হলে ব্রিকস সদস্যরা বিশ্বের তেল ও গ্যাস সম্পদের অর্ধেকেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করবে।
উইটওয়াটারসরান্ড ইউনিভার্সিটির একজন সিনিয়র লেকচারার কেনেথ ক্রিমার একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে সিনহুয়াকে বলেন, গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ আরও ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব ব্যবস্থা নির্মাণে কাজ করার জন্য একত্র হওয়ার চেষ্টা করেছে... ব্রিকস অনেক দেশকে এই দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আবার একত্র হতে অনুপ্রাণিত করে। এই বছরের জুনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একবার দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা মন্ত্রী নালেদি পান্ডোরের সঙ্গে পর আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ব্রিকসের আকর্ষণ এখানেই। ব্রিকস ব্লক আন্তর্জাতিক বিষয়ে একটি ইতিবাচক, স্থিতিশীল ও গঠনমূলক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্প্রচারকারী ডয়চে ভেলে বলেছে, বেশ কয়েকটি উদীয়মান অর্থনীতি আইএমএফ-এর কঠোর অর্থনৈতিক নীতির কারণে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। ডয়চে ভেলে বলেছে, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং ব্রিকস কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারেঞ্জমেন্ট অর্থপ্রদানের সমস্যায় অর্থনীতিকে সমর্থন করতে পারে। নিয়ে গবেষণা করা প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেছেন, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হলো সবচেয়ে বড় অর্জন। এটি দেশগুলোর মধ্যে কিছু বাণিজ্য বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছে এবং কিছু আন্তর্জাতিক মনোযোগ অর্জন করেছে।
কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেল বলেছেন, সর্বোপরি ব্রিকস বহুমুখীতা এবং বহুপাক্ষিকতাকে রক্ষা করে। এটি করার মাধ্যমে, ব্রিকস দেশগুলো স্নায়ু যুদ্ধের ধারণাকে মোকাবিলা করছে এবং আরও ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সম্ভাবনা উন্মুক্ত করছে; যা বিশ্বকে উপকৃত করবে।
কেনিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পণ্ডিত ক্যাভিন্স আধেরে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত বিশ্বে ব্রিকস দেশগুলোর জন্য একটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা তৈরি করার জন্য একটি কার্যকর উপায় তৈরি করছে।
স্প্যানিশ ওয়েবসাইট রেবেলিয়ন জানিয়েছে, বহু দেশ কয়েক দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যে ক্লান্ত। ওয়াশিংটনের নির্দেশনা মেনে চলতে ব্যর্থতার ফলে নিষেধাজ্ঞা ও আর্থিক ব্ল্যাকমেলের শিকার হতে হয়। সম্ভাবনাময় সদস্যদের গ্রুপে অন্তর্ভুক্তি করার মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে এবং আরও বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়বে। ব্রিকসের একটি মুদ্রা ইস্যু করারও সম্ভাবনা রয়েছে।
আমেরিকান সংবাদ প্রকাশনা ফরেন পলিসি ব্রিকসের সম্ভাব্য মুদ্রা সম্পর্কে বলেছেন, এর সদস্যরা সম্ভবত বিদ্যমান যে কোনো আর্থিক ইউনিয়নের তুলনায় বিস্তৃত পরিসরে পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। তারা তাদের প্রতিবেদনে জানায়, যেহেতু ব্রিকস গোষ্ঠীর প্রতিটি সদস্যই তাদের নিজস্ব অঞ্চলে একটি অর্থনৈতিক হেভিওয়েট, বিশ্বের দেশগুলো সম্ভবত তাদের প্রচলন করা মুদ্রায় ব্যবসা করতে ইচ্ছুক হবে। যেহেতু বাংলাদেশ, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উরুগুয়ে ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে। এই চারটি দেশ তিনটি মহাদেশে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে আরও ন্যায্য ও আরও অবারিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হতে বাধ্য।
ওয়াশিংটন পোস্ট সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধে বলেছে, নতুন প্রবেশকারীরা ব্রিকসের অংশ হওয়ার ফলে তাদের কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং লাভজনক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ লাভ করতে পারে।
তাস নিউজ এজেন্সির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জেনেভায় জাতিসংঘে দক্ষিণ আফ্রিকার স্থায়ী প্রতিনিধি নোজিফো ম্যাক্সাকাতো-ডিসেকো বলেছেন, যোগদানের আগ্রহ প্রকাশকারী নতুন সদস্যদের গ্রহণ করতে পেরে ব্রিকস খুশি।
আফ্রিকা-চীন সহযোগিতা বিশেষজ্ঞ জেরাল্ড এমবান্ডা সিনহুয়াকে বলেছেন, ব্রিকস বারবার বহুপাক্ষিকতাকে সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থার সংস্কার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ন্যায্য আচরণ করার পরামর্শ দিয়েছে।
এমবান্ডা বলেন, এই কারণেই আমি বিশ্বাস করি, ব্রিকস নিঃসন্দেহে বর্ধিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগের সঙ্গে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের একটি উপায়।
আপনার মতামত লিখুন :