Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২

সুখের মাত্রা বাড়ানোর নানা অভ্যাস


দৈনিক পরিবার | জীবনযাপন ডেস্ক আগস্ট ২২, ২০২৫, ০২:৪১ পিএম সুখের মাত্রা বাড়ানোর নানা অভ্যাস

মানসিক চাপে থাকা অবস্থায় সহজেই সুখের দিনগুলো ভুলে যাওয়া হয়। তবে মনে রাখতে হবে- সুখ নিজে এসে ধরা দেয় না, বরং এর জন্য নিজের ইচ্ছাটা জরুরি। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে সুখ লাভের জন্য বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ছোটখাট অভ্যাসেই মিলতে পারে শান্তি।
গবেষণার প্রধান, মায়ামি ইউনিভার্সিটি’র মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডারউইন গুয়েভারা ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, যখন মানুষ আনন্দ অনুভব করে, তখন সহজে মানসিক চাপ সামলাতে পারে, অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভালোমতো আর জীবনের অর্থ খুঁজে পায়। এমনকি কঠিন সময় আসলেও এই ভালো অনুভূতি আমাদের জেগে উঠতে সাহায্য করে। 
‘জার্নাল অফ মেডিসিন ইন্টারনেট সার্চ’য়ে প্রকাশিত এই গবেষণার জন্য ১৭ হাজার ৬শ’ অংশগ্রহণকারীকে নিযুক্ত করা হয়। ১৬৯টি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এসব অংশগ্রহণকারীদের ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাপ্তাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় ওয়েব-ভিত্তিক প্রশ্ন করার মাধ্যমে।
‘বিগ জয় প্রোজেক্ট’ নামের এই পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিনের ছোটখাট কাজ, যেমন- তাদের আনন্দের অনুভূতি, উৎসাহ-মূলক বা গর্ববোধ করার মুহুর্ত, কৃতজ্ঞতার তালিকা বা কাউকে সাহায্য করার মতো বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
সাতদিন পর গবেষকরা দেখতে পান, অংশগ্রহণকারীরা শক্তভাবেই বিশ্বাস করছেন- তাদের ভালো থাকা ও ইতিবাচক অনুভূতির পেছনে নিজেদের স্বভাব ও সুখ প্রভাব রাখছে। এমনকি তাদের মানসিক চাপ কমেছে এবং রাতে ভালো ঘুম হচ্ছে- বলে জানায়।
গবেষকরা মনে করেন, এই ধরনের ছোটখাট কাজই সার্বিকভাবে সুখে থাকার জন্য কার্যকর প্রভাব ফেলে।
ডা. গুয়েভারা বলেন, মনে হতে পারে কাজটি খুবই সাধারণ, তবে অন্যদের জন্য কোনো দয়ালু কাজ করা- চাপ সরিয়ে নিজেকে আরও উদ্দেশ্যময় করে তোলা যায়।
এই বিষয়ে ‘ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার’য়ের ‘সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড বিহেইভিওরাল সায়েন্সেস’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. অ্যারোন ব্রাইনেন একই প্রতিবেদনে বলেন, আমাদের মস্তিষ্ক সবসময় নেতিবাচক দিকে নজর দেয়। বাজে অবস্থায় প্রায়ই আমরা ভালো থাকা সময়কার মুহূর্তগুলো ভুলে যাই। এমনকি কোনো বাজে সিদ্ধান্ত নিলে, সেটা আমরা সপ্তাহ, মাস এমনকি বছরজুড়ে ধরে বসে থাকি। তবে ভালো জিনিস বেলুনের মতো ভেসে বেড়ায়। 
সাত অভ্যাস যা সুখের মাত্রা বাড়াতে পারে
ডা. গুয়েভারা মন্তব্য করেন, এই অভ্যাসগুলোকে একমাত্র সমাধান হিসেবে ধরা যাবে না। তবে সুখের অনুভূতি বাড়াতে এসব সাহায্য করবে। আসল বিষয় হল- ছোটখাট মুহূর্ত থেকেই নিয়ে আসবে আনন্দ।
কাউকে ধন্যবাদ দিয়ে লেখা বার্তা
ডা. গুয়েভারা ব্যাখ্যা করেন, কাউকে ধন্যবাদ জানিয়ে শুরু করাটা হবে ভালো উপায়। কোনো বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার পর তাকে ধন্যবাদ দেওয়া বা বাবা-মা’কে ধন্যবাদ জানানো- এগুলো খারাপ সময়টাকে কাটিয়ে দেয়। এটা অনুভূতির মাত্রা বাড়াতে পারে। নিজের মানসিক চাপ সরিয়ে আরও বেশি অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা ও নিজেকে কার্যকর ভাবতে সাহায্য করে।
আকাশের দিকে তাকানো
মনে হতে পারে কাজটা সহজ। তবে কবে এই কাজটি করেছেন মনে পড়ে কী? এই প্রশ্ন রেখে ডা. গুয়েভারা বলেন, ঘর থেকে বেরিয়ে কয়েক মিনিট আকাশ দেখুন। নীল রং হয়ত আপনার মন শান্ত করবে, কিংবা মেঘের আকার থেকে মজাও লাগতে পারে। এই ধরনের ছোটখাট কাজ করা আসলে কঠিন কিছু না। আর সবচেয়ে ভালো বিষয় হল, সারাদিন ধরে এটা করতে হবে না। আনন্দ বোধ করতে যে এক সময় আকাশের দিকে তাকনোই যায়।
কাউকে হাসি উপহার দেওয়া
ফোন থেকে মুখ তুলে আশপাশ দেখা তেমন কঠিন কিছু না। আর কারও সঙ্গে দেখা হলে তাকে একটা হাসি উপহার দেওয়া যেতে পারে। ডা. ব্রাইনেন বলেন, আদী থেকেই আমরা সামাজিক জীবন। অন্যজনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে অনুভূতি দেয় যে, আমরা একা নই বরং বড় একটি দলের অংশ।
কৃতজ্ঞতার তালিকা তৈরি
বড় কোনো কিছুর জন্য সারাদিনের মধ্যে কোন কোন বিষয়ে নিজেকে ধন্যবাদ দিতে চান, সেটার পেছনে কয়েক মিনিট খরচ করা যেতে পারে। ডা. গুয়েভারা বলেন, আমাদের অভ্যাস হচ্ছে, কী পেলাম না সেদিকে নজর দেওয়া। তবে নজর দিতে হবে কী কী ভালো হল সেদিকে। এরফলে মনে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব।
কাউকে বলুন আপনি তাদের জন্য কৃতজ্ঞ
কৃতজ্ঞতার তালিকা তৈরিতে নিজের মধ্যে ভালো বোধ জন্মায়। আর অন্যের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে তাদের প্রাপ্য মূল্য পরিশোধ করা যায়। যেমন বলা যায়, আজকের সাহায্যের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ, বা আমি কৃতজ্ঞ যে আজ আমরা একসঙ্গে ছিলাম। তাছাড়া যাদেরকে ভালোবাসেন তাদেরকে এসব প্রকাশে কোনো আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই- মন্তব্য করেন মার্কিন মনোবিজ্ঞানী থিয়া গ্যালাঘার।
নতুন কিছু চেষ্টা করা
নতুন ধরনের কফি পান, অফিসের যাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন কোনো পথ ধরা, ব্যায়ামাগারে নতুন কোনো ব্যায়াম ধরা- এই ধরনের কাজগুলো ভালোবোধের হরমোন সেরোটনিন নিঃসরণে সাহায্য করে- বলৈন ডা. ব্রাইনেন। আর এসবের জন্য বড় কিছু নয় ছোটখাট কাজেই পড়বে বড় প্রভাব।
ছোটখাট পরোপকার করা
মনে হতে পারে, অন্যকে সাহায্য করাতে তার লাভ হচ্ছে। তবে এতে নিজেরও উপকার হয়। আর কাজগুলো যে বড় কিছু হতে হবে এমন কিছু নয়, কারও জন্য দরজা খুলে দেওয়া হতে পারে অন্যের উপকার করা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর অ্যাংক্সাইটি অ্যান্ড উইমেন’স ইমোশনাল ওয়েলনেস’য়ের ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট হিলারি অ্যামোন এই বিষয়ে বলেন, থেরাপি দেওয়ার সময় আমি, তাদের জীবনে ‘উদ্দেশ্য’ ও ‘আনন্দ’ এই দুটির ভারসাম্যতার গুরুত্ব তুলে ধরি। অন্যদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করলে নিজের মধ্যে উদ্দেশহীনতার মনোভাব দূর হয়। যা অবশেষে নিজের মধ্যে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে।
আসল কথা হল
জীবনে আনন্দ ও সুখ আনতে বড় কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে না। ছোটখাট পদক্ষেপেই সেটা সম্ভব হয়। ডা. গুয়েভারা বলেন, এটাই ছিল আমাদের গবেষণার প্রধান চাবিকাঠি। তবে যা আমার ক্ষেত্রে কাজ করবে সেটা হয়ত আপনার ক্ষেত্রে করবে না। তাই ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করতে হতে পারে, যা জীবনকে অর্থবোহ করবে। আর সময়ের সাথে নিজেই বুঝে যাবেন, নিজের আনন্দ ও সুখের চাবিকাঠি কোনগুলো। 

Side banner