Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

ছোট না বড়, কোন ইলিশ বেশি স্বাদ


দৈনিক পরিবার | জীবনযাপন ডেস্ক আগস্ট ১৪, ২০২৫, ১২:২২ পিএম ছোট না বড়, কোন ইলিশ বেশি স্বাদ

ইলিশ যেন এক কবিতা! একে নিয়ে কত চর্চাই না হচ্ছে বাঙলা মুলুকে। ইলিশ এখন রীতিমতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মনোযোগ কাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে দেশে বাড়তে শুরু করেছে ইলিশের দাম।
দাম! দামের কথা শুনলেই দম বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড় হচ্ছে অনেকের। বাজারে আজকাল বলতে শোনা যায়, ইলিশ, সে তো সোনার চেয়ে দামী। এক কেজি ওজন হতে না হতেই রাজধানী শহরে সে বিকোয় হাজার দুই টাকায়!
দাম যতই বাড়ুক, ইলিশ থেকে দূরে রাখা যাবে না বাঙালিকে। ভাজা থেকে ঝোল, ভর্তা থেকে শুটকি, কী হয় না ইলিশের? ভাপা ইলিশ, শর্ষে ইলিশ যেন বাঙালির নিজস্ব ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। বাঙালির রান্নাঘর থেকে ইলিশের যে কত পদ বের হয়েছে, তার হিসেব নেই। ভাপা, সেদ্ধ, কলা পাতায় মুড়ে, পুড়িয়ে, সরিষা দিয়ে, শুঁকিয়ে শুটকি করে ইলিশ রান্না করে ইলিশযাপন করছে বাঙালি। এ ছাড়া বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে ইলিশের দোপেঁয়াজা, ইলিশ পোলাও, ইলিশের পাতুরি কিংবা মচমচে ইলিশ অতিথির পাতে তুলে দিতে কার্পণ্য করেন না তারা।
আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মিশেলে ইলিশের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অনেক গল্প। ইলিশের একটা নিজস্ব ঘ্রাণও রয়েছে, যার রেশ বাঙালিকে নিয়ে যায় অতীতে কিংবা কোনো বিশেষ সময়ে। কিন্তু অতীত, সে তো অতীত। বর্তমান বড় কঠিন। কারণ ইলিশ এখন প্রায় অধরা। বাজারের বড় ইলিশ গরীবের স্বপ্নেরও অতীত। ওগুলো ধনীর পাতে যায়। অনেক ক্ষেত্রে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই চলে যায় বিদেশে। ওদের ওজন দেড় কেজি থেকে একটু বেশি। কষ্ট হলেও মাঝারিগুলো মধ্যবিত্তের সাথী হয়, যেগুলো ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম বা তার চেয়ে কিছু ছোট। আর স্বল্পবিত্তের যারা, তারা জাটকায় আটকে থাকেন। এগুলো হাতের তালুর সমান বা তার চেয়ে কিছুটা বড়। আকারের সামান্য তারতম্য অনুসারে বাজারে বিকোয় ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায়। কিন্তু এ তিন আকারের মধ্যে কোন ইলিশের স্বাদ কেমন? কোনটি বেশি সুস্বাদু?
রন্ধনশিল্পী আনিসা আক্তার নুপুর জানান, মাঝরি আকারের ইলিশের সব পদই মজার হয়। ইলিশ মূলত নোনা পানির মাছ। তাই নদীর ইলিশ আর সাগরের ইলিশের স্বাদে পার্থক্য আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে মজার হলো পদ্মার ইলিশ। দৈর্ঘ্যে ছোট ও প্রস্থে বড় হয়। অর্থাৎ এরা আয়তনে খাটো এবং পেট মোটা। এদের গায়ের রঙ হয় উজ্জ্বল রূপালি। কাটলে ভেতরে সাদা হয়। পদ্মার ইলিশ রান্না করলে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে সারা বাড়িতে। তেল বেশি ও ডিম ছাড়া ইলিশের স্বাদ হয় অতুলনীয়।
একই মত দিলেন আরেক রন্ধনশিল্পী ফারজানা বাতেন। তিনি বলেন, ডিম ছাড়া ইলিশ ভালো। কারণ পেটে ডিম আসার আগে ইলিশের গায়ে বেশি চর্বি থাকে, যা ইলিশকে সুস্বাদু করে। ডিমওয়ালা ইলিশ ডিম ছাড়ার পর পর পেটি অনেক পাতলা হয়, চর্বি কমে যায়। তখন স্বাদ কিছুটা কমে যায়। তবে ডিম ছাড়ার কিছুদিন পর সাগরে ফেরার সময়কার ইলিশ আবার সুস্বাদু হয়ে ওঠে।
ফারজানা বাতেন আরও বলেন, বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে ইলশেগুড়ি বৃষ্টির সময়ে যে ইলিশ পাওয়া যায়, সেই ইলিশের স্বাদও বেশি। এক কেজি থেকে সোয়া এক কেজি ওজনের ইলিশের স্বাদ বেশি। আর ইলিশ ভাজা কিংবা ইলিশ পোলাওয়ের ক্ষেত্রে বড় আকারের ইলিশ বেশি ভালো লাগে।
কেবল স্বাদ নয়, ইলিশে পুষ্টিও প্রচুর। মানুষের শরীরের জন্য জরুরি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় ইলিশে। এই অ্যাসিড হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে উন্নত করে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। ইলিশ থেকে পাওয়া যায় প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। ইলিশে থাকা ভিটামিন সি ও কোলাজেন ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এমনকি ইলিশ মাছ ভিটামিন ডি-এরও ভালো উৎস, যা হাড় ও দাঁতের জন্য ভীষণ প্রয়োজন।

Side banner