Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২

বিয়ে করলে ঋণ দিচ্ছে ব্যাংক


দৈনিক পরিবার | জীবনযাপন ডেস্ক আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম বিয়ে করলে ঋণ দিচ্ছে ব্যাংক

বিয়ে, জীবনের এক স্বপ্নময় অধ্যায়। প্রতিটি মানুষই চায় এই দিনটিকে করতে স্মরণীয়, জাঁকজমকপূর্ণ আর অবিস্মরণীয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে বিয়ের এই আয়োজন যেন হয়ে উঠেছে এক ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। আজকাল বিয়ে মানেই চারদিকে খরচ আর খরচ। বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগেই শুরু হয় লম্বা প্রস্তুতি। মেহেদি, গায়েহলুদ, বউভাত, রিসেপশন, সব মিলিয়ে আয়োজনের শেষ নেই। এর সঙ্গে যোগ হয় ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, ডিজাইনার লেহেঙ্গা, ক্যাটারিং, ব্যান্ড পার্টি, বিয়ের কার্ড থেকে শুরু করে ডেকোরেশন পর্যন্ত এক বিশাল ব্যয়ভার।
নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এসব খরচ সামাল দিতে গিয়ে পড়ে বাজেট সংকটে। তবে আশার খবর হলো, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে এখন রয়েছে ‘বিবাহ ঋণ’ বা ম্যারেজ লোনের বিশেষ সুবিধা। এই ঋণের মাধ্যমে অনেকেই বিয়ের আয়োজনে স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছেন।
কী এই বিবাহ ঋণ?
বিবাহ ঋণ আসলে এক ধরনের ব্যক্তিগত ঋণ, যা মূলত বিয়ের খরচের উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে নেওয়া যায়। এই ঋণ সাধারণত জামানত ছাড়া পাওয়া যায় এবং মাসিক কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। ঋণের পরিমাণ হতে পারে ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। পরিশোধের সময়সীমা সর্বোচ্চ ৫ বছর।
কারা নিতে পারবেন এই ঋণ?
চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, জমির মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে বিবেচনায় আসবে: মাসিক আয়, চাকরির ধরণ ও অভিজ্ঞতা, বয়স। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে মাসিক আয় কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার টাকা হলে ঋণ পাওয়ার সুযোগ বাড়ে।
কারা ঋণ দেয়
দেশে বেশ কিছু ব্যাংক আছে যারা বিশেষ বিবাহ ঋণ দেয়। এর মধ্যে আছে উত্তরা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ইউসিবি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ইত্যাদি। এ ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ সুবিধায় বিবাহ ঋণ নেওয়া যায়।
কার কী অফার
বিয়ের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক নানা ধরনের ঋণের অফার দেয়। সেখান থেকে কিছু ব্যাংকের বিবাহ ঋণের অফার দেখানো হলো। বিয়ের জন্য সর্বোচ্চ ঋণ পাওয়া যায় এনসিসি ব্যাংক থেকে। ব্যক্তিগত ঋণের আওতায় বিবাহ ঋণ দেয় এনসিসি ব্যাংক। এই ঋণের সীমা ১ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। চাকরিজীবী, জমির মালিক, ব্যবসায়ীরা এই ঋণ পাবেন। ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে মাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা আয় হতে হবে। বাকিদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা।
বেসরকারি ব্যাংক উত্তরা ব্যাংক থেকে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বিয়ের জন্য ঋণ পাওয়া যায়। এক থেকে তিন বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে বিয়ের জন্য ২ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। তবে এই ঋণ ব্যক্তিগত ঋণ সুবিধার আওতায় নিতে হবে। ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সী চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীরা এই ঋণ পাবেন।
একইভাবে ইউসিবি বিয়ের জন্য ঋণ দেয়। এই ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। ৫ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হয়। চাকরিজীবী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, জমির মালিকসহ নানা পেশার লোকজন এই ঋণ পেতে পারেন।
বিজিবি সদস্যদের জন্য বিয়ে ঋণ রয়েছে সীমান্ত ব্যাংকে। শুধু বিজিবির কর্মরত সদস্যরাই ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন। ঋণটি মূলত সংশ্লিষ্ট সদস্যের নিজের বিয়ের জন্য প্রযোজ্য হলেও সন্তানের বিয়ের ক্ষেত্রেও এই ঋণ নেওয়া যাবে। সাধারণ সদস্যদের জন্য এই ঋণের সীমা ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা আছে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এই ঋণ পেতে হলে আবেদনকারীকে বিজিবির স্থায়ী সদস্য হতে হবে এবং ন্যূনতম ৬ বছর সক্রিয় চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বয়স হতে হবে ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তবে সন্তানের বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫৬ বছর পর্যন্ত এই ঋণ নেওয়া যাবে।
ঋণ নিতে কী লাগবে
বিয়ের জন্য ঋণ পেতে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, চাকরির প্রমাণপত্র (যেমন আইডি কার্ড, নিয়োগপত্র), সর্বশেষ ৩ থেকে ৬ মাসের পে-স্লিপ, ব্যাংক হিসাবের বিবরণী, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদ এবং কিছু ক্ষেত্রে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) প্রয়োজন হয়।
এ ছাড়া যেহেতু এই ঋণ নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়, তাই প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে বিয়ের কার্ড, চিকিৎসার কাগজ বা ভ্রমণ পরিকল্পনার কপি দিতে হতে পারে। এর সঙ্গে বর বা কনের সাম্প্রতিক তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি চাইতে পারে ব্যাংক। 
অনেকেই বলছেন, সমাজে এক ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা এখন বিয়েকে পরিণত করেছে খরচের মহাযুদ্ধে। কিন্তু বিয়ে মানেই তো শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং দুটি প্রাণের মিলন। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটির অর্থ যেন ব্যয়ের ভারে চাপা না পড়ে, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।

Side banner