স্কুলপড়ুয়া বয়সে দিলশাদ ইয়াসমিন গান গাইতেন ছোটদের অনুষ্ঠান আর স্কুলের ফাংশনে। ঠিক তখনই তার জীবনে আসে মোড় ঘোরানো এক ঘটনা। পাশের বাড়িতে উঠলেন কিংবদন্তি সুরকার আলতাফ মাহমুদ। দিলশাদের মা অনুরোধ করলেন, যেন মেয়েটিকে সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
প্রথমে অবাক হলেও আলতাফ মাহমুদ শেষ পর্যন্ত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রে তার কণ্ঠে রেকর্ড করান ‘মধু জোছনার দীপালি’ গানটি। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া সেই সিনেমাই ছিল কিংবদন্তি শিল্পী হওয়ার পথে দিলশাদের প্রথম পদক্ষেপ। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের সংগীতজগতের অনন্য কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। ভক্তরা তাকে ভালোবেসে সুরের পাখি বলে ডাকেন।
এই কিংবদন্তির জীবনের শুরুর গল্প থেকে বর্তমান পর্যন্ত নানা স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, আনন্দ-দুঃখ আর অজানা কাহিনি নিয়ে নির্মিত হয়েছে ডকুফিল্ম ‘জুঁই ফুল সাবিনা ইয়াসমিন’। এটি প্রযোজনা ও পরিচালনায় আছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।
নির্মাতা জানান, দেশের অনেক গুণী শিল্পীর যথাযথ তথ্যসংরক্ষণ নেই। তাদের মৃত্যুর পর তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, আর নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয়। সেই অভাব পূরণের উদ্দেশ্যেই তিনি এই কাজ শুরু করেন। এর আগে নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে ডকুফিল্ম বানানোর সময়ও তথ্য-ছবি সংগ্রহে অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল। সাবিনা ইয়াসমিনের ক্ষেত্রেও সংগ্রহ ছিল চ্যালেঞ্জিং, তবে সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এমন সব প্রসঙ্গ যা শিল্পীকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।
২ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই তথ্যচিত্রের জন্য সাবিনা ইয়াসমিনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে শিল্পীর নিজ বাসায়, একটি রিসোর্টে এবং চ্যানেল আই স্টুডিওতে অনুষ্ঠানমুখী পরিবেশে। এখানে তিনি শৈশব থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তার জীবনগাথা শুনিয়েছেন নিজের মুখে। পাশাপাশি স্মৃতিচারণা করেছেন তার সহপাঠী ড. মেহরাজ জাহান জোহরা, অভিনেত্রী ববিতা, সুজাতা, কবরী, রোজিনা, সুরকার ইমন সাহা, ছেলে রফি হোসেন শ্রাবণসহ অনেকেই।
শিল্পীর পছন্দ অনুযায়ী তার জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করেছেন এই প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী কনা, আতিয়া আনিসা, লিজা, ঝিলিক, রাকিবা ঐশী, কোনাল এবং ইমরান।
ডকুফিল্মটির নামের বিষয়ে শাইখ সিরাজ বলেন, ‘সাবিনা মানে ফুল, আর ইয়াসমিন মানে জুঁই ফুল। তাই নাম দিয়েছি জুঁই ফুল সাবিনা ইয়াসমিন।’
ডকুফিল্মটির প্রিমিয়ার হবে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে চ্যানেল আইয়ে। সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র হাতে পেলেই এটি দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবেও পাঠানো হবে।
আপনার মতামত লিখুন :