কামিনী রায় কবি ও সমাজকর্মী। ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ অক্টোবর বাকেরগঞ্জের বাসন্ডা গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবা চন্ডীচরণ সেন ছিলেন একজন ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখক ও পেশায় বিচারক। কামিনী রায় ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী, ভাবুক ও কল্পনাপ্রবণ।
তিনি কলকাতার বেথুন ফিমেল স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৮০), বেথুন কলেজ থেকে এফএ (১৮৮৩) এবং সংস্কৃতে অনার্সসহ বিএ (১৮৮৬) পাস করেন। একই বছর তিনি বেথুনে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরে অধ্যাপক হন। ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে স্ট্যাটিউটরি সিভিলিয়ান কেদারনাথ রায়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
কামিনী রায় মাত্র আট বছর বয়স থেকে কবিতা লেখা শুরু করেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপশি তিনি সাংস্কৃতিক ও জনহিতকর, বিশেষত নারীকল্যাণমূলক কাজেও আত্মনিয়োগ করেন। তিনি নারীশ্রমিক তদন্ত কমিশনের অন্যতম সদস্য, বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে সাহিত্য শাখার সভানেত্রী এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর সহসভাপতি ছিলেন।
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ আলো ও ছায়া প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা লিখে দেন। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ হলো: নির্মাল্য, পৌরাণিকী, গুঞ্জন (শিশুকাব্য), ধর্ম্মপুত্র (অনুবাদ), মাল্য ও নির্মাল্য, অশোকসঙ্গীত (সনেট), অম্বা (নাটক), বালিকা শিক্ষার আদর্শ, ঠাকুরমার চিঠি, দীপ ও ধূপ, জীবনপথে (সনেট)।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে কামিনী রায়ের স্বামি বিয়োগ ঘটে। স্বামীর এ অকাল মৃত্যু তাঁর ব্যক্তিজীবনের মতো সাহিত্যিক জীবনকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তবে তাঁর কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব সর্বাধিক।
তিনি যেহেতু সংস্কৃতে পণ্ডিত ছিলেন, সেহেতু সংস্কৃত সাহিত্যের বিষয় অবলম্বনে রচিত তাঁর কবিতাগুলো অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট মানের। তাঁর কবিতায় জীবনের সাধারণ ঘটনাবলি হৃদয়ের সুকুমার অনুভূতির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
আপনার মতামত লিখুন :