Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত

হাসপাতাল এতো দূরে কেন মা!


দৈনিক পরিবার | নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২২, ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম হাসপাতাল এতো দূরে কেন মা!

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আব্দুল্লাহ ছামীমের (১৩) মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে দগ্ধ ছামীম আকুতি করে মাকে বলে, অনেক কষ্ট, আর কতক্ষণ লাগবে হাসপাতালে পৌঁছাতে। হাসপাতালটি এত দূরে কেন! শ্বাস নিতে পারছি না, আমাকে বিদেশ নিয়ে যাও।’
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ভোর ৬টায় অ্যাম্বুলেন্সে দেশের বাড়ি শরীয়তপুরে নেয়া হয় ছামীমের মরদেহ। পরে সকাল ৯টায় জানাজা শেষে বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হয় তাকে। 
এর আগে সোমবার (২১ জুলাই) রাত ১১টার দিকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
আব্দুল্লাহ ছামীম ঢাকার উত্তরা এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ছামীমের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালী ইউনিয়নের মাঝিকান্দি গ্রামে। প্রবাসী বাবা আবুল কালাম মাঝি সাত মাস আগেই মারা যান সৌদি আরবে। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে ছামীম ছিলেন সবার ছোট।
এর আগে সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে একটি যুদ্ধবিমান। আগুনে ঝলসে যায় ছামীমের পুরো শরীর। তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষকরা তাকে উদ্ধার করে মায়ের ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। দ্রুত চলে আসেন তার মা জুলেখা বেগম। শ্বাস নিতে কষ্ট হলেও ছামীম হাসপাতালে নেয়ার আকুতি জানায়। এমনকি বিদেশে চিকিৎসার কথাও বলে মাকে।
পরে এসিবিহীন একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও রাত ১১টার দিকে মৃত্যু হয় ছামীমের।
ছামীমের মা জুলেখা বেগম বলেন, ‘স্কুল থেকে আমার নাম্বারে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গেই আমি চলে যাই ঘটনাস্থলে। সেখান থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে আমার ছেলে বলছিল এসি চালাতে; কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে এসি নেই, এতে আরও বেশি কষ্ট পাচ্ছিল ছেলেটি। ছেলে বারবার চিৎকার করে বলছিল, মা আর কতক্ষণ লাগবে হাসপাতালে পৌঁছাতে। হাসপাতালটি এত দূরে কেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে আমাকে আকুতি করে বলছিল মা চিকিৎসার জন্য আমাকে বিদেশ নিয়ে যাও। পানি খেতে চেয়েছিল ছেলেটি চিকিৎসকের পরামর্শে পানিও পান করতে দিতে পারিনি তাকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মারা যায় আমার সন্তান।’
ছামীমে মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো সকাল ৭টায় নিজেদের গাড়িতেই ছামীমকে পৌঁছে দেয়া হয় স্কুলে। ক্লাস প্রায় শেষের দিকে; ছুটির ঠিক আগ মুহূর্তে ঘটে এই দুর্ঘটনা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মৃত্যু হয় তার।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর ডিসেম্বর মাসে আমার ভগ্নীপতি সৌদি আরবের অসুস্থ হয়ে মারা যান। দুই মাস প্রসেসিং করে নিয়ে আসা হয়েছিল ভগ্নীপতির মরদেহটি। সে শোক কাটিয়ে না উঠতেই ভাগিনার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে, ভগ্নীপতির কবরের পাশেই দেয়া হলো ভাগিনার কবর। জনবহুল এলাকায় বিমান প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’
বাবা হারা দুই ভাই ও এক বোনকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি খালপাড় এলাকায় থাকতেন মা জুলেখা বেগম।

Side banner