‘আমার বাচ্চারা চোখের সামনে পুড়ে মরছিল, আমি কি করে চুপ করে থাকি? যাদের বাঁচিয়েছি, তারাও তো আমারই সন্তান।’ শেষ সময়ে এমন কথাই বলেছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাহসী শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী।
রাজধানীর উত্তরায় সোমবার (২১ জুলাই) বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে স্কুল ভবনে আগুন ধরে গেলে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ হন মাহেরীন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একাধিক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেন তিনি। কিন্তু আবারও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে ভেতরে ঢোকার পর আগুনে পুড়ে যান। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিন রাতেই মারা যান ওই শিক্ষকা।
মাহেরীনের স্বামী মনসুর হেলাল মঙ্গলবার (২২ জুলাই) নীলফামারীর জলঢাকার বগুলাগাড়ী রাজারহাট চৌধুরী পাড়ায় নিজ গ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
চোখ ভেজা কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, শেষ রাতে হাসপাতালে ওর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। আইসিইউতে শুয়ে শুয়ে ও আমার হাত নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরেছিল। বলেছিল আমার সঙ্গে আর দেখা হবে না। আমি ওর হাত ধরতে গিয়েছিলাম, কিন্তু শরীরটা এমনভাবে পুড়ে গিয়েছিল যে ঠিকভাবে ধরতেও পারিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি তোমার নিজের দুই সন্তানের কথা একবারও ভাবলে না? সে বলেছিল, ‘ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে আমি কী করে চলে আসি?’ আমি আমার সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি ওকে বাঁচাতে, কিন্তু পারিনি। আমার দুইটা ছোট ছোট বাচ্চা এতিম হয়ে গেল।
মাহেরীন চৌধুরী জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী রাজারহাট চৌধুরী পাড়ার মৃত মহিতুর রহমান চৌধুরীর মেয়ে। দুই সন্তানের জননী মাহেরীন ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। পরিবার নিয়ে ঢাকার উত্তরার একটি বাসায় বসবাস করতেন।
মনসুর হেলাল বলেন, ও অনেক ভালো মানুষ ছিল। ওর ভেতরে একটা মায়া ছিল সবাইকে ঘিরে। আগুন লাগার পর যখন অন্যরা দৌড়াচ্ছিল, ও তখন বাচ্চাদের বের করে আনছিল। কয়েকজনকে বের করার পর আবার ফিরে গিয়েছিল বাকি বাচ্চাদের জন্য সেই ফেরাটা আর শেষ হয়নি। সেখানেই আটকে পড়ে, সেখানেই পুড়ে যায় আমার মাহেরীন।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে বিধ্বস্ত হলে স্কুলের একটি ভবনে আগুন ধরে যায়। এ সময় ওই ভবনে ক্লাস করছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে আগুন থেকে উদ্ধার করেন মাহেরীন চৌধুরী। তিনি নিজে আর বের হতে পারেননি।
আপনার মতামত লিখুন :